আমার রণাঙ্গনে কথা পর্ব-২

মুক্তিযুদ্ধ

গ্রুপ কমান্ডার এম.এ মান্নান স্যার এর অধীনে বেলকুচি থানা আক্রমন যুদ্ধ ও কালিয়া হরিপুর রেলওয়ে ষ্টেশন এ্যাম্বুস। বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচীর কমান্ডানাধীনে কল্যান পুর ও ধীতপুর যুদ্ধ। আমাদের গ্রুপ আমরা যে চারটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে ছিলাম তা হলো:-
 
১. বেলকুচি থানা আক্রমণ যুদ্ধ:

বেলকুচি সিরাজগঞ্জ জেলার একটি উল্লেখযোগ্য থানা। এই থানা আক্রমণ যুদ্ধে নেতৃত্বে ছিলেন গ্রুপ কমান্ডার জনাব এম.এ মান্নান স্যার। ২৪ অক্টোবর’৭১ কমান্ডার স্যারের ও আরো ৩ জনের রেকিতে একযোগে বেলকুচি থানা ও মুসলিমলীগ নেতা মোঃ আব্দুল মতিনের বাড়ি আক্রমন করে ছিলাম। সন্ধ্যায় বানিয়া গাতি শেল্টারে কমান্ডার স্যার বিস্তারিত ব্রিফ করে ছিলেন। কমান্ডার স্যার আমাদের গ্রুপ কে দুই গ্রুপে ভাগ করে দিয়ে ছিলেন। সিদ্ধান্ত ছিল কমান্ডার স্যারের নেতৃত্বে বড় গ্রুপটি থানা আক্রমন করবে। অন্য গ্রুপটি রবীন্দ্র নাথ বাগ্চীর নেতৃত্বে মতিন সাহেবের বাড়ি আক্রমন করে মতিন সাহেবকে ধরে আনবে।

আমি কমান্ডার স্যারের গ্রুপে থেকে থানা আক্রমন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে ছিলাম। রাত ৯ টায় বানিয়া গাতি শেল্টার থেকে যাত্রা করে ছিলাম। থানার কাছে গিয়ে দু গ্রুপ টার্গের উদ্দেশ্যে ভাগ হয়ে ছিলাম। রাত ১২টায় একযোগে আক্রমনের সিদ্ধান্ত। পরিকল্পনা মোতাবেক থানার পশ্চিম পাশ দিয়ে স্ক্রোলিং করে থানার সামনে যেতেই সেন্ট্রি দেখে ফেলে ছিল। হুইসেল বাঁজিয়ে থানার সবাইকে জানিয়ে দিয়ে আমাদের কে লক্ষ্য সেন্টি গুলি করে ছিল। তাঁরপর আমাদের গ্রুপ কমান্ডার জনাব এম.এ মান্নান কমান্ড করে ফায়ার ওপেন করে ছিলেন। তারপর সবাই একযোগে গুলি শুরু করে ছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা ব্যাপী যুদ্ধ হয়ে ছিল। যুদ্ধটি ছিল ভয়াবহ যুদ্ধ। আমার মাথায় হেলমেট ছিল। দুইটি গুলি এসে আমার হেলমেটে লেগে ছিল। আমার ডান পাশে অবস্থান নিয়ে ছিলেন এই যুদ্ধের কমান্ডার। আমাদের গ্রুপে তখন ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। বিজয় আর না হয় মৃত্যু ছাড়া কোন পথ ছিল না। বৃষ্টির মত গুলি চালিয়ে ছিলেন। আমাদের গুলির কাছে হেরে গিয়ে থানার বিহারী পুলিশ ও রাজাকারেরা থানার পিছনদিক দিয়ে পালিয়ে সোহাগপুর নদীতে থাকা একটি লঞ্চে আমাদের রেঞ্জের বাইরে যমুনার মধ্যে চলে গিয়ে ছিল। থানার সেন্ট্রি গুলি করা বন্ধ করে দুই হাত উপরে তুলে আত্মসমর্পণ করলো। তারপর আমরা সবাই থানার ভিতরে ঢুকে পড়ে ছিলাম।

থানার মাল খানা থেকে সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে ছিলাম। সেন্ট্রি সহ থানার দু’জন রাজাকারকে জ্যান্ত ধরে নিয়ে এসে ছিলাম। ভোর হয়ে গিয়েছিল। মতিন সাহেবের বাড়ি আক্রমন করা দলটিও এলো। মতিন সাহেব পালিয়ে গিয়েছিল। তাকে ধরা সম্ভব হয় নাই। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে অধিকাংশ বাড়ি ও দোকানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তৈরি করে রেখে ছিল। থানার আশেপাশের লোকজন দোকান ও বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দিয়ে ছিলেন। বিজয়ী হয়ে আমরা শেল্টারে চলে এসে ছিলাম। পরদিন সিরাজগঞ্জ থেকে শতাধিক পাকি হানাদার সৈন্য ও রাজাকাররা এসে থানার আশে পাশে আগুন দিয়েছিল এবং মানুষদের নির্যাতন করেছিল।

২. কালিয়া হরিপুরের যুদ্ধ :

কালিয়া হরিপুর স্টেশন সংলগ্ন ব্রীজ পাহাড়ারত রাজাকার ক্যাম্প এ্যাম্বুস। কালিয়া হরিপুর সিরাজগঞ্জ জেলার সদর থানার একটি রেলওয়ে স্টেশন। এই এ্যাম্বুসের নেতৃত্বে ছিলেন গ্রুপ কমান্ডার জনাব এম.এ মান্নান। ৪ নভেম্বর’৭১ গ্রুপের ঝাঐল গ্রামের সিরাজগঞ্জের এম,এন, এ জনাব মোঃ মোতাহার হোসেন তালুকদারের ভায়রা আওয়ামীলীগ নেতা জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ তালুকদারের রেকির ভিত্তিতে কালিয়া হরিপুর রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন ব্রীজ পাহাড়ারত রাজাকার ক্যাম্প অ্যাম্বুস করে ছিলাম।

কমান্ডার স্যার ক্রোলিং করে রেল লাইনে বৈদ্যুতিক মাইন বসিয়ে এসে ছিলেন। গ্রুপ কমান্ডার স্যার উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে ছিলেন। আমরা সবাই ধানক্ষেতের মধ্যে পজিশন অবস্থায় ছিলাম। কামান্ডার স্যারের হাতে মাইনের তার ও ব্যাটারী। টর্চ লাইট ও হ্যারিকেন হাতে পাকি মিলি শিয়া ও রাজাকারেরা টহল দিচ্ছিল। ওদের পায়ে লেগে হঠাৎ আমাদের মাইনের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে ছিল।

মাইনটি পাকি হানাদারদের নজরে পড়ে ছিল। পাকি হানাদাররা হুইসেল দিয়ে রাজাকারদের লাইং পজিশনে রেডি থাকতে কমান্ড করলো। আমাদের দিকে টর্চ লাইট মেরে মেরে উর্দূতে বকাবকি করতে থাকলো। ইতিমধ্যে ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ গামী পাকি হানাদার বাহী ট্রেন এলো। পাকি হানাদারেরা সিগন্যাল দিয়ে। ষ্টেশনে ট্রেনটি থামিয়ে দিল। ট্রেনের পাকি হানাদারেরা অস্ত্র তাক করা অবস্থায় নেমে আমারকে কে খুঁজতে থাকলো। আমাদের মাইনটি ব্রাষ্ট করা সম্ভব হলো না। পাকি হানাদারদের সংখ্যাধিক্যতায় ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে কমান্ডার স্যার উইথড্র হওয়ার কমান্ড করলেন। আমরা ক্রোলিং করে কিছু দূর পিছিয়ে এসে তামাই গ্রামে চলে এসে ছিলাম।

পরের দিন সিরাজগঞ্জ থেকে পাকি হানাদার ও রাজাকারেরা এসে কালিয়া হরিপুরে ও আশেপাশে বিভিন্ন গ্রামের অনেক বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং গ্রামের অনেককে ধরে নির্যাতন করেছিল। তারা কালিয়া হরিপুর রেলওয়ে ব্রীজ সংলগ্ন রাজাকার ক্যাম্প এ্যাম্বুস থেকে ফিরে এসে তামাই গ্রামে কমান্ডার স্যারের বাড়িতে একত্রিত হই। কমান্ডার স্যারের মা আমাদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। আমরা কমান্ডার স্যারের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করলাম। খাওয়া-দাওয়ার পর আমাদের সবাইকে বসিয়ে কমান্ডার স্যার ব্রিফ করলেন। স্থানীয় ভাবে ট্রেনিং দেওয়া বেশ কিছু যুবককে আমাদের গ্রুপে ভর্তি করা হয়েছিল।

এত বড় প্লাটুন এক শেল্টারে শেল্টার নেওয়া সমস্যা। তাই কমান্ডার স্যার ডেপুটি কমান্ডার রবীন্দ্রনাথ বাগ্চী কে কমান্ডার করে আমাদের ১১ জনের আর একটি গ্রুপ করে দিলেন। এই গ্রুপ এর সবাই রাতে হেটে কল্যাণপুর চলে এলাম।

৩. কল্যাণপুর যুদ্ধ:

কল্যাণপুর সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার একটি গ্রাম। এই যুদ্ধে নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি কমান্ডার (কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত) বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগ্চী। কমান্ডার স্যারের নির্দেশে আমরা ১১ জন রবীন্দ্র নাথ বাগ্চীর কমান্ডনাধীন হয়ে হেটে ভোরে বেলকুচি থানার কল্যাণপুর নামক গ্রামে এক বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। ৫ নভেম্বর’৭১ বাড়ির মালিক আমাদের সকালের খাবারের ব্যবস্থা করলেন। আমরা সারারাত নিদ্রাহীন থেকে ও হেটে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। সকালের খাবার খেয়ে প্রকাশ্যে পিটি, প্যারেড করলাম। অস্ত্র পরিষ্কার করলাম।

অস্ত্রে ফুলতুরী মারলাম। একজন করে করে ডিউটি করতে থাকলাম। অন্যান্যরা ঘুম বা রেষ্টে থাকলাম। কল্যানপুর একটি নিভৃত গ্রাম। আমাদের ধারনা ছিল এই গ্রামে পাকি হানাদার ও রাজাকার আসবে না। বেলা ১০টার দিকে সেন্ট্রিরত সহযোদ্ধা রতনকুমার দাস দৌড়ে এসে জানালেন আমাদের কে ধরার জন্য বেলকুচি থানা থেকে কয়েকজন পাকি হানাদার মিলে শিয়া ও রাজাকার আসছে। বওড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে কল্যানপুরের দিকে আসতে ছিল। দুইজন পাকিস্তানি দালাল গামছা দিয়ে মুখ বেধে নিয়ে হানাদার ও রাজাকারদের পথ চিনিয়ে নিয়ে আস ছিল।

দূর থেকে অনুমান হলো এই দলে ৫ জন মিলেশিয়া ও ৮ জন রাজাকার আছে। আমাদের কমান্ডার যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা কল্যানপুরে রাস্তার ধারে বাংকারের মত বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে পজিশন নিলাম। বাঁশ ঝাড়ের সামনে দিয়ে চলা রাস্তা ধরে ওরা আস ছিল। আমাদের রেঞ্জের মধ্যে আসার সাথে সাথে আমাদের কমান্ডার রবীন্দ্রনাথ বাগ্চী কমান্ড ও ফায়ার ওপেন করলেন। এক লাফে হানাদারেরা রাস্তার উত্তর পার্শে¦ পজিশন নিল।

ওরাও আমাদের কে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ছিল। আমরাও একযোগে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকলাম। গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আশে পাশে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ তাদেরকে সহযোগীতা করার জন্য এগিয়ে এসে ছিলেন। এক ঘণ্টার অধিক সময় সম্মুখ যুদ্ধ চলছিল। তারপর পাকি হানাদারেরা পিছিয়ে গিয়ে ছিল। যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা বিজয় উল্লাস করে ছিলাম। সকল স্তরের মানুষের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হলো। এক বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে ছিলাম। তারপর হেটে দৌলতপুর গ্রামের সহযোদ্ধা মোঃ শামসুল হকের বাড়িতে শেল্টার নিয়ে ছিলাম।

কয়েক দিন দৌলতপুর, তেঞাশিয়া, খুকনী, বাজিয়ারপাড়া, দরগার চর ও অন্যান্য গ্রামে শেল্টার নিয়ে থাকলাম। প্রতিদিন রাতে কমান্ডার পাসওয়াড দিতেন। প্রতিদিন সকালে অস্ত্রে ফুল থ্রু মারা হতো ও তেল দেওয়া হতো।

৪. ধীতপুর যুদ্ধ:

ধীতপুর সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার একটি গ্রাম। এই যুদ্ধে নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি কমান্ডার (কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত) বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগ্চী। ১২ডিসেম্বর’৭১ রাতে আমাদের শেল্টার ছিল সৈয়দপুর গ্রামের কালা চক্রবর্ত্তী ও অণ্যান্যের বাড়িতে।

১৩ ডিসেম্বর’৭১ বেলা ১২.০০ টার দিকে সংবাদ পেলাম পাকি হানাদারেরা কৈজুরী হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের যুদ্ধে পাকি হানাদারেরা পরাজিত হয়ে লঞ্চে যমুনা নদী পাড় হয়ে মালিপাড়া ক্যাম্পে এসে ছিলেন। মালিপাড়া ক্যাম্প থেকে রাস্তা চিনানোর জন্য দুই জন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে এসে ছিল। আমরা পাকি হানাদারদের অফজার্ব করার জন্য ওদের পিছু নিলাম। ওরা ক্ষুধার্ত। কৈজুরী গ্রামের একজনের মুলা ক্ষেত থেকে মুলা খাওয়ার চেষ্টা করলো। ওরা হয়তো জানতো না কাঁচা মুলা খাওয়া যায় না। ওয়াপদা বাধ ধরে ওরা অগ্রসর হতে লাগলো।

আমরাও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে করে ওদের পিছু পিছু যাচ্ছিলাম। ওরা ভীষণ ক্রোধী। ধীতপুর নামক স্থানে গিয়ে ওরা আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করে ছিল। আমরা জাম্প করে ওয়াপদা বাঁধের পশ্চিম দিকে পজিশন নিয়ে ছিলাম। পাকিস্তানি হানাদারেরা ওয়াপদা বাধের পূর্ব পার্শ্বে পজিশন নিয়ে ছিল।

এক ঘণ্টা ব্যাপি গুলি পাল্টা গুলি চলতে থাকলো। গুলির শব্দে শাহজাদপুর ও বেড়া থানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধা দল আমাদের সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে এলো। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। হানাদারেরা গুলি করা বন্ধ করলো। আমরাও অন্ধকারে গুলি করা বন্ধ করে দিয়ে ছিলাম। সারারাত আমরা না খেয়ে পজিশন অবস্থায় ছিলাম। আমাদের গ্রুপটি ছিল বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগচী কমান্ডানাধীন। এই ভয়াবহ যুদ্ধে বেড়া থানার বৃশালিকা গ্রামের অধিবাসী বেড়া বিবি হাই স্কুলের এর দশ শ্রেণীর ছাত্রী মো: আব্দুল খালেক ও ছেচানিয়া গ্রামের মো: আমজাদ হোসেন গুলিবৃদ্ধ হয়ে গুরুত্বর আহত হন। পরে দুই জনই  শহিদ হয়েছেন।

ঐ দিন স্থানীয় দুজন পথচারী গোলাগুলির সময়ে গুলি লেগে মারা গিয়ে ছিল। আমাদের অন্যান্য গ্রুপের চার জন আহত হয়ে ছিলেন ধীতপুর যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমরা জামিরতা হাই স্কুলে ক্যাম্প করে অবস্থান নিয়ে ছিলাম। ১৪ ডিসেম্বর’৭১ শাহজাদপুর থানা হানাদর মুক্ত হয়ে ছিল। ১৬ ডিসেম্বর’৭১ সোহরাওর্য়াদী উদ্যানে তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদারেরা মাথা নিচু করে আত্মসমর্পণ করে ছিল। ১৭ ডিসেম্বর’৭১ ভারতীয় বিমান বাহিনী বাংলাদেশের আকাশ পথ ঘুড়ে যুদ্ধত্তোর স্বাধীন বাংলাদেশের অবস্থা দেখে ছিল।

১০ জানুয়ারী’৭২ জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগার হতে মুক্ত হয়ে দেশে আসলেন। ১২ জানুয়ারী জাতির পিতা প্রথমে রাষ্ট্রপতি হিসেবে এবং পরক্ষণেই রাষ্ট্রপাতি পদের ইস্তেফা দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রথা চালু করে প্রধান মন্ত্রী হিসাবে দেশের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করলেন। জাতির পিতা আমাদেরকে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমাদের গ্রুপ ২৪ জানুয়ারী’৭২ রবিবার সিরাজগঞ্জ সদরস্থ ইব্রাহিম বিহারী বাসায় অস্ত্র ও গোলা বারুদ জমা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্ব শেষ করে ছিলেন। সরকার থেকে ন্যাশনাল মিলেশিয়া ক্যাম্প স্থাপন করা হলো।

আমাকে ন্যাশনাল মিলেশিয়া ক্যাম্পের ভর্তির পরামর্শ দিয়ে ছিলেন। আমি ন্যাশনাল মিলেশিয়া ক্যাম্পে ভর্তি হলাম না। বাড়িতে চলে এলাম। ১০ ফেব্রুয়ারী’৭২ সিরাজগঞ্জ মহকুমা কার্যালয় থেকে জেনারেল এম. এ.জি ওসমানীর সনদ নম্বর: ১২৯১৫৮। একটি সাদা কম্বল ও বকেয়া পকেট মানি ও রেশনিং মানি হিসেবে ১১০/- টাকা দেওয়া হলো। বাড়ি এসে রতন কান্দি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার বড় দাদা দেবেন্দ্র নাথ সান্যাল এর কাছ থেকে অষ্ঠম শ্রেণির অটোপাশের টিসি নিয়ে শাহজাদপুর বহুপার্শিক উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে লেখা-পড়া শুরু করেছিলেন।

বীরত্বগাথা ইতিহাসের প্রোফাইল https://mssangsad.com/profile_view/546/dchbjHofwL

মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যাল,পিতা: দ্বিজেন্দ্র নাথ সান্যাল,মাতা: নিলীমা সান্যাল, গ্রাম ও ডাকঘর: রতন কান্দি,ইউনিয়ন: হাবিবুল্লাহনগর,উপজেলা: শাহজাদপুর, জেলা: সিরাজগঞ্জ।

গেজেট নং-বে-সামরিক সিরাজগঞ্জ-১৬৭৯। ভারতীয় প্রশিক্ষণ – এফ.এফ. নং-৪৭৪২। সমন্বিত তালিকা জেলা ভিত্তিক -১৪১১, উপজেলাভিত্তিক-১৫৮ ।