তারামন বেগম বীর প্রতীক | mssangsad.com

মুক্তিযোদ্ধার প্রোফাইল

Visitor: 2062

তারামন বেগম বীর প্রতীক

মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নম্বর : বীর প্রতীক’
  • পিতার নাম: আবদুস সোহবান
  • মাতার নাম: কুলসুম বিবি
  • স্ত্রীর নাম: স্বামীর নাম আবদুল মজিদ
  • জম্ন তারিখ:
  • মৃত্যু তারিখ:
  • মোবাইল:
  • গ্রাম: কাচারিপাড়া
  • ইউনিয়ন: রাজীবপুরের
  • উপজেলা: চর রাজিবপুর
  • জেলা: কুড়িগ্রাম

অন্যান্য তথ্য

মুক্তিবার্তা নম্বর বীর প্রতীক
ভারতীয় তালিকা নম্বর বীর প্রতীক
মুক্তিবার্তা নম্বর বীর প্রতীক
বাংলাদেশ গেজেট নম্বর বীর প্রতীক
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান কি না?

সন্তানদের নাম ও বয়স

নাম বয়স শিক্ষাগত যোগ্যতা

যুদ্ধের ইতিহাস

জন্ম ও কর্মজীবনঃ তারামন বিবির জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার রাজীবপুরের কাচারিপাড়ায়। তাঁর বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি।তাঁর স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। তাঁদের এক ছেলে এক মেয়ে। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাঃ তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। তিনি ‘বীর উত্তম’ প্রতীক প্রাপ্ত। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিলো মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তিতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাঁকে অস্ত্র চালনা শেখান। একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারলেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক যুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অংশ নেন। অনেক বার তাদের ক্যাম্প পাকবাহিনী আক্রমণ করেছে,তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতিবার বেঁচে যান। পরবর্তীতে যুদ্ধে শেষে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাঁকে খুঁজে বের করেন এবং নারী সংগঠন গুলো তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেন। বর্তমানে তারামন বিবি কুড়িগ্রাম এর রাজিবপুর তার স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে আছেন। স্বাধীনতার ২৪ বছর পর্যন্ত তারামন সরকারী কোন সাহায্য পাননি। নারী মুক্তিযোদ্ধা বলে তাঁকে অবহেল করার হয়েছে –এমনটি আক্ষেপ তার রয়েছে। তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের একটা বই আছে...”বীর প্রতীকের খোঁজে”।‘করিমন বেওয়া’ আনিসুল হকের রচিত একটি বাংলা নাটক যার কেন্দ্রীয় চরিত্র বাংলাদেশের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি। সূত্রঃ (https://bn.wikipedia.org/s/le7) প্রিয় জন্মভূমিকে শুত্রুমুক্ত করতে জান-মান বাজি রেখে লড়াই করেছেন অসংখ্য বীর বাঙালি নারী৷ তবে তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ত্যাগী ও দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছেন যাঁরা তাঁদেরই একজন তারামন বিবি বীর প্রতীক৷ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তারামন বিবি একটি বীরত্বপূর্ণ নাম৷ কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি৷ বাবা আব্দুস সোবহান, মা কুলসুম বেওয়া৷ তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে৷ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন নানা ভূমিকায়৷ ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তাঁর সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীর প্রতীক' উপাধিতে ভূষিত করেন৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য আরো একজন বীর নারী ‘বীর প্রতীক' খেতাব পান৷ তিনি হলেন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম৷ মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের অকুতোভয় বীর যোদ্ধা তারামন বিবি গোয়েন্দাগিরির মাধ্যমে শত্রুর অবস্থান জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি সফল অপারেশনে পালন করেছেন গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে পুরুষের সাথে সমান তালে করেছেন যুদ্ধ। পেয়েছেন ‪#‎বীরপ্রতীক‬ খেতাব। তাঁর ১১ নম্বর সেক্টরের কম্যান্ডার ছিলেন কর্নেল ‪#‎তাহের‬, যিনি বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। পাদপ্রদীপের আলোয় : স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালের পর থেকেই সকলের অগোচরেই থেকে যান এই বীর প্রতীক। দীর্ঘ ২২ বছর কেউ তাঁর খোঁজ করেনি। তারামন বিবি প্রচারের আলোয় বেড়িয়ে আসেন ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে। তাকে খুঁজে বের করেন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক বিমল কান্তি দে। ১৯৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠার দ্বি-শত বছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থে “ময়মনসিংহ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ ৭১” শিরোনামে তাঁর একটি প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়। এই প্রবন্ধের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ বিপাকে পরেন অধ্যাপক বিমল দে। বিশেষ করে উপাধি প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা তিনি স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতে পারেননি। পরে ঢাকা থেকে গেজেট সংগ্রহ করে বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন দু’জন মহিলা বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তাঁদের একজন ডাঃ সেতারা বেগম বীর প্রতীক (আর্মী মেডিকেল কোরের সদস্য, কিশোরগঞ্জ জেলা নিবাসী) এবং অন্যজন তারামন বিবি বীর প্রতীক, স্বামী মেসের আলী। কিন্তু তারামন বিবির কোন ঠিকানা নেই। পরে তিনি কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ১১ নং সেক্টরের যোদ্ধা এবং সেক্টরের বিভিন্ন স্থানে ৮ বছর ধরে চিঠি লিখে লিখে যোগাযোগ করে তারামনের ঠিকানা বের করেন। অবশেষে ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে তাঁকে বীর প্রতীক ‪#‎তারামন‬ বিবির সন্ধান দেন রাজীবপুর উপজেলার রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকী। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান : বিশাল ব্রহ্মপুত্রের পূর্বতীরে এবং ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর-রৌমারী অঞ্চল মুক্তিযুদ্ধের অধিকাংশ সময়ই মুক্তাঞ্চল ছিল। মুক্তাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল। সুতরাং পাক বাহিনী মাঝে মধ্যে এসব এলাকায় হানা দিত। ফলে বহুবার খণ্ড যুদ্ধ হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর। এ কারণে সাজাই কোদালকাটি রাজীবপুরের মদনের চর, শংকর মাধবপুর, তারাবর চরাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার তৈরী করে একটি ডিফেন্স লাইন গড়ে তোলে। গ্রামবাসী বাড়ী-ঘর ছেড়ে সীমান্তে আশ্রয় নেয়। রাজীবপুর ঘাটের কাছে মুক্তিযোদ্ধা আজিজ মাস্টারের বাড়ির পাশে নদীর পাড় বরাবর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ডিফেন্স লাইন ছিল। তারই এক ব্যাংকারে আশ্রয় নেয় প্লাটুন কমান্ডার মুহিব হাবিলদার। ঐ সময় আজিজ মাস্টারের বাড়িতেই প্রথম আশ্রয় নিয়েছিল তারামন বিবিসহ তার মা। তখন হাবিলদার মুহিব তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার প্রস্তাব দেন৷ প্রথমে তারামনের মা কুলসুম বেওয়া এতে রাজি হন নি৷ পরে মুহিব হাবিলদার তারামনকে ধর্মমেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেন৷ এরপরই তারামনকে দশঘরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে রান্নার কাজে পাঠাতে রাজি হন তাঁর মা৷ তখন তারামনের বয়স ছিলো ১৪ বছর৷ কিন্তু পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে তার ধর্ম পিতা মুহিব হাবিলদার তাঁকে অস্ত্র চালনা শেখাতে আগ্রহী হন। তখন অন্যান্য কাজের ফাঁকে চিনতে শিখল বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র সম্পর্কে। এরপর গুলি চালানো। তারামনের স্পষ্ট মনে আছে, প্রথম যখন সে রাইফেল থেকে গুলি ছোঁড়া শিখল; সেদিন ব্যথায় তার বুকটা ঝনঝন করে উঠেছিল। বুকের উপর রাইফেলের ধাক্কায় প্রথমে অসাড় হয়ে গিয়েছিল উপরের দিকটা। অস্ত্র চালানো শেখার পর থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নিতেন। সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ : ডয়চে ভেলের সাথে আলাপচারিতায় নিজের সৈনিক হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন তারামন বিবি৷ এছাড়াও দীর্ঘ নয় মাসের অসংখ্য ঘটনার মাঝ থেকে স্মৃতি হাতড়িয়ে জানালেন একদিনের সরাসরি যুদ্ধের ঘটনা৷ ঘটনা ছিল ঠিক মধ্য দুপুরের৷ সবাই খেতে বসেছে৷ তারামনকে পাকিস্তানি সেনাদের কেউ আসছে কি না তা দেখার জন্য বলা হলো৷ তারামন সুপারি গাছে উঠে দূরবীন দিয়ে চারিদিকে লক্ষ্য রাখছিলেন৷ হঠাৎ দেখলেন, পাক বাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে৷ সবার খাওয়া বন্ধ৷ দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে অ্যাকশনের অপেক্ষা করতে লাগলেন সবাই৷ তারামন তাঁর সহযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নেন৷ দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে৷ সেদিন তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন৷ এরপর তারামন অনেক যুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অংশ নেন৷ অনেক বার তাদের ক্যাম্প পাকবাহিনী আক্রমণ করেছে,তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতিবার বেঁচে যান৷ এসময় চারদিকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। পাক সেনারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আক্রমণ চালাচ্ছিল। এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা তখন ৫ম ক্যাম্প কালাসোনা কেতনটারী উঁচু পাইড়া এলাকায় অবস্থান করছিল। এসময় বিমান থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হলো। আধাঘণ্টা পর মুক্তিযোদ্ধারা এসে দেখল সাধারণ কয়েকটি পরিবার নৌকায় ছিল। তাদের কেউ বেঁচে নেই। এই দৃশ্য দেখে তারামন কাতর হয়ে উঠল। সে চাইছিল সরাসরি কিছু করতে। এরপর সাধারণ কিশোরীটি শুরু করল তার গোয়েন্দা জীবনের। শুধু সম্মুখ যুদ্ধই নয়৷ নানা কৌশলে শত্রু পক্ষের তৎপরতা এবং অবস্থান জানতে গুপ্তচর সেজে সোজা চলে গেছেন পাক বাহিনীর শিবিরে৷ কখনও সারা শরীরে কাদা মাটি, চক, কালি এমনকি মানুষের বিষ্ঠা পর্যন্ত লাগিয়ে পাগল সেজেছেন তারামন৷ চুল এলো করে বোবা সেজে পাক সেনাদের সামনে দীর্ঘ হাসি কিংবা কান্নার অভিনয় করেছেন৷ কখনও প্রতিবন্ধী কিংবা পঙ্গুর মতো করে চলা ফেরা করে শত্রুসেনাদের খোঁজ নিয়ে এসেছেন নদী সাঁতরে গিয়ে৷ আবার কলা গাছের ভেলা নিয়ে কখনও পাড়ি দিয়েছেন ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী৷ ক্রমে দলে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠল তারামন। তিনি জানান, জান-মানের কথা না ভেবেই এসব দুঃসাহসী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন একমাত্র দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য৷ এভাবেই নিজের অতীত জীবনের কথাগুলো বলতে গিয়ে কিছুক্ষণ থেমে এই বীরপ্রতীক জানালেন, আমরা সর্বশেষ কালাসোনা কেতনটারীতে থাকতে দেশ স্বাধীন হয়। আমার ধর্মপিতা মুহিব হাবিলদারসহ আমরা গাইবান্ধা জেলার কামারজানি ও পলাশবাড়ী হয়ে জয়দেবপুর আর্মি ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে অস্ত্র জমা দেই। সেখানে ধর্মপিতা আর্মিতে যোগ দেওয়ায় এক বছর সেখানে থেকে আবার শঙ্কমাধবপুরে চলে আসি। স্বাধীন বাংলাদেশে তারামন বিবির প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘অনেক কষ্টের বিনিময়ে, ইজ্জতের বিনিময়ে, প্রাণের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন করেছি৷ রক্ত ঝরা ডিসেম্বর মাস আসলে আনন্দ, কষ্ট আর সাথী হারা শহীদদের কথা মনে পড়ে। কত রাত মুক্তিযোদ্ধাদের না খেয়ে কাটাতে হয়েছে। কত রাত আহত রক্তমাখা শরীর নিয়ে মুখ বুজে থাকতে হয়েছিল। তবু সবার চোখে মুখে ছিল দীপ্ত শপথ দেশকে স্বাধীন করতেই হবে। কিন্তু যেভাবে দেশটিকে দেখতে চেয়েছিলাম সেভাবে এখনো দেশটিকে পাইনি৷ মুক্তিযোদ্ধারা সীমাহীন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে দেশ স্বাধীন করেছে সেই দেশে তারা আজও অবহেলিত৷ এখনও মুক্তিযোদ্ধারা অনাহারে থাকেন৷ বিনা চিকিৎসায় মারা যান৷ অন্য দিকে আজ সেই স্বাধীন দেশে শকুনেরা জাতীয় নিশান উড়ায়। জাতীয় পতাকার অবমাননা করে, শহীদ মিনার ভাংচুর করে। এজন্য একাত্তরে বাঙ্গালী যুদ্ধ করেনি। আমি এই বাংলাদেশ দেখতে চাইনি৷'' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারামন বিবি বীর প্রতীক বলেন, “শুধু রায় ঘোষণা নয়, নিজের জীবদ্দশায় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর রায় কার্যকর দেখে যেতে চাই”। বর্তমান সরকার তার মেয়াদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করবে এ প্রত্যাশা সকল মুক্তিকামী মানুষের মতো বীরপ্রতীক তারামন বিবিও। আর এজন্য তিনি আরও কিছুদিন বাঁচতে চান। এছাড়াও তারামন বিবি এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য একটি যাদুঘর স্থাপন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাকে দেশবাসী যে সম্মান দিয়েছে এজন্য তিনি খুশী। দেশের জন্য কাজ না করলে এই ভালবাসা তিনি পেতেন না। আজ সবার সামনে তিনি বসতে পারছেন, কথা বলতে পারছেন। সবাই সম্মান করছে। এজন্য তিনি গর্বিত। সম্মান ও স্বীকৃতি : দীর্ঘ ২২ বছর সবার অগোচরে থাকার পরে ১৯৯৫ সালে যখন অধ্যাপক বিমল কান্তি দে'র মাধ্যমে তিনি পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাকে স্বর্ণ পদকসহ ২৫ হাজার, টাকা বাড়ী নির্মাণের ৫০হাজার টাকা এবং ছেলে ও মেয়ের লেখা পড়ার খরচের জন্য ১৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেন। এদিকে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এই বীর প্রতীককে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে তাকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেন। পরে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও তারামন বিবিকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা দেয়া হয়। পুনরায় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এল ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা দেয়া শুরু হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সময় প্রতিশ্রুত তারামন বিবির মেয়ে জামাইকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিজ এলাকায় ৪৫ শতাংশ জমি সহ কুড়িগ্রাম শহরে ৫ শতাংশ জমি দেয়া হয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারামন বিবিকে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার হলোখানা আরাজি পলাশবাড়ী গ্রামে ২৮ শতক জমির ওপর প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকায় নির্মিত একটি আধা পাকা বাড়ী হস্তান্তর করে। সেখানে গড়ে উঠেছে একটি লাইব্রেরী। কুড়িগ্রাম শহরে বাড়ি থাকলেও তিনি প্রায়ই রাজীবপুরের বাড়িতে থাকেন, মুক্তিযুদ্ধের ভাতায় চলছে সংসার। তথ্যঃ (http://bangladeshpress.com/news/view/239)

আরও ছবি

ভিডিও