যুদ্ধের ইতিহাস
মহান স্বাধীনতার পূর্বে আমরা ছিলাম পরাধীন পাকিস্তানের অধিবাসী 0 পাকিস্তান 2 টি অংশে বিভক্ত ছিল 0 একটি পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান 0 বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানের নাম হল বাংলাদেশ 0 পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদেরকে শাসন করি তো 0 পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করি তো 0 উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত করি তো 0 আমাদের সর্বাধিক আর হরণ করেছিল 0 জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বহু আন্দোলন করেছেন 0 জেল জুলুম অত্যাচার সম্মুখীন হয়েছেন 0 1966 সালে বাঙালি জাতির অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি পেশ করেন 0 বঙ্গবন্ধু ঘায়েল করার লক্ষ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করেন 0 বাঙালি জাতির চেতনা আস্তে আস্তে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় 0 1969 সনের গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পতন হয় 0 বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান 0 প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আরেক সামরিক জান্তা ইয়াহিয়ার হাতে ক্ষমতা অর্পণ করেন 0 গণ আন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া 1970 এ প্রথম গণভোট দেন 0 ওই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে বাঙ্গালীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে না এবং নানা হ কূটনীতিককে দল চাতুরী অত্যাচার ও উৎপীড়ন খুন-খারাবি করতে থাকলে 7 ই মার্চ 1971 ইংরেজি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এর সম্পূর্ণ দিক নির্দেশনা সহ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন 0 জাতি বঙ্গবন্ধুর কথায় জেগে উঠল সরকারি অফিস-আদালত কোট কাচারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার সব বন্ধ করেদিল 0 বাঙালি জাতিকে নিধন করার লক্ষ্যে অস্ত্রবোঝাই সোয়াত নামক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করলে 0 চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হান্নান সাহেবের নেতৃত্বে থেকে অস্ত্র খালাসের জন্য লাখো লাখো লোক সমবেত হল 0 মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এস এ জি ওসমানী সাহেব মেজর জিয়াকে একদল সেনাবাহিনী দিয়ে সেই অস্ত্র খালাসের জন্য নেতৃত্ব প্রদান করেন 0 অস্ত্র খালাস হল 0 এইদিকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর প্রধান কর্মকর্তারাও ফরমান আলী বাঙালি সেনা বাহিনীকে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য ফরমান জারি করলে 0 সর্বাধিনায়ক ওসমানী সাহেব নাকচ করে দেন 0 25 শে মার্চ 1971 ইংরেজি রাত ফরমান আলী ও নিয়াজী টিক্কা খানের রা সামরিক আইন জারি করে দিবাগত রাত 12 টায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে ঘুমন্ত বাঙালি জাতির উপর ঝাপিয়ে পড়ে খুনখারাপি নির্বিচার ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ বাংলার বাতাস কে স্তব্ধ করে দেয় 0 বাঙালি পুলিশ ই পি আর আনসার সেনাবাহিনী নৌ বাহিনী বিমান বাহিনী পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে 0 কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাকে কার্যকর করার জন্য ভারতে গিয়ে খেয়ে না খেয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে জীবন বাজি রেখে 9 মাস ক্লান্তহীন ভাবে যুদ্ধ করে 0 পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতা সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন মহান বিজয় ছিনিয়ে আনে 0 এই বিজয়ের বঙ্গবন্ধুর এই বিজয় বাঙালি জাতির 0 25 শে মার্চ দিবাগত রাত থেকে শুরু হয়ে গেল সারা বাংলাদেশের যুদ্ধ 0 শুধু কানে শোনা যায় ফায়ার ফায়ার পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনী যেখানে পায় যুবক-যুবতী বুড়াবুড়ি ছাত্র-ছাত্রী তাদের ইচ্ছামতো ধর্ষন হানাহানি মারপিট শুরু করে দিল 0 স্কুলের ছাত্র ছাত্রী যুবক-যুবতী কেউই রেহাই পায় না 0 বাংলাদেশের মানুষের ঘুম নিদ্রা খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধের মতো হয়ে যায় 0 চতুর্দিকে অগ্নিসংযোগ ধরে নিয়ে যায় মায়ের ভক্ত কে যুবতী কন্যা যুবক ভাই নিয়ে যায় নিরীহ মানুষকে বলার কিছুই নেই 0 1971 ইংরেজি এপ্রিল মে মাসের প্রথম দিকে শান্তি কমিটি গঠন করে 0 রাজাকার আলবদর বাহিনী দিয়া 0 শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান রাজাকার পাঞ্জাবি সেনাদের কে নিয়ে গ্রামে এসে যুবক ও সুন্দরী যুবতীর কে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে চলে যায় 0 এই পরিস্থিতি দেখে ঘরে বসে থাকা আর সম্ভব হলো না 0 তারপরে আমার বড় ভাই 5 জন জহির আব্দুল হক মোঃ কামাল উদ্দিন মোজাফফর ওয়াজেদ আলী এক্স আর্মি আমাদের বাংলা ঘর থেকে রাত্র বারোটার পরে ভারতের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন 0 আমি বললাম ভাই আমিও যাব 0 জহির ভাই বলল আমরা ভারত থেকে ঘুরে দেখে আসি তারপরে তোমাকে নেব 0 জহির ভাই ও কামাল উদ্দিন এর অপেক্ষা না করে আমি আমার সাথে এরশাদ হোসেন ও আশরাফ ভাই কে নিয়ে গোপনে বাড়ি থেকে বাইর হইয়া হাঁটতে হাঁটতে প্রায় এক দিন লেগে গেল ভারতের বক্স নগরে পৌঁঁছতে 0 ভারতে যাওয়ার সময় অনেকগুলি বাধার সম্মুখীন হয় 0 বর্ডার দিয়ে ঢুকতে রাজাকার বাহিনী রা আমাদের দেখে গুলি ছোড়ে 0 তারপরে মরনের ভয় ভীতি না করে মুক্তিযুদ্ধে যাব এই ছিল মনের আকাঙ্ক্ষা 0 মুক্তিযুদ্ধে যাবোই যাবো 0 পাকিস্তানি সেনাদের কে এই দেশ থেকে হাটাবো দেশ স্বাধীন করবো এই ছিল মনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা 0 বকশি নগর পৌঁছার পর পেটে খুব খিদা খাওয়ার কিছুই নাই 0 বকশি নগর থেকে একটা কাঁঠাল এক টাকা ছয় আনা দিয়ে কিনে আমরা তিনজন বসে ইচ্ছামতো পেটপুরে খাইলাম 0 খাওয়ার পরে অনেকক্ষণ বিশ্রাম করিয়া আগরতলার দিকে যাব এমনটা অবস্থায় আমার এক ভাই কান্নাকাটি শুরু করে দিল আর বলে ভাই আমরা কোথায় যাব কোথায় থাকব কে আমাদের জায়গা দিবে আমরা তো অসহায় নিরুপায়ে আর বলে আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো আমি থাকবো না 0 এখন কোন ভাবে তাকে বোঝানো যাচ্ছে না 0 উপায়ন্তর না দেখে তাকে নিয়ে আবার বাড়ির দিকে রওনা হলাম 0 রাত অনেক হয়ে গেল পায়ের পাতা কেটে গেল হাঁটার সম্ভব না 0 তখন বাইকে নিয়ে বড় একটা গাছের নিচে বসে রাত্র কাটাই 0 আবার দেখি রাজাকার বাহিনী আমাদেরকে দেখলে ধরে নিয়ে মেরে ফেলবে মরন ছাড়া উপায় নাই 0 তার পরদিন বাড়ি চলে আসি 0 বাড়িতে আসার পরে মনে শান্তি লাগে না 0 কখন জানি আমাকে পাঞ্জাবি ও রাজাকার বাহিনী রা ধরে নিয়ে যায় এই ভেবে দিন কেটে যায় 0 কিন্তু রাত্রি হলে ঘরে থাকি না 0 থাকি গাছের নিচে বাজারের ভিতরে ঢুকুন এলাকায় যেখানে পাঞ্জাবি সেনা রাজাকার যাইতে না পারে। দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ আমার বাবা আমাকে বলল বাবা কিছু টাকা আছে গৌরীপুর বাজার থেকে ধান কিনে নিয়ে আসো 0 ঘরে যদি ধান চাউল থাকে ডাল ভাত খাওয়া যাবে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ 0 তারপর আমি বাবার কথা শুনে 275 টাকা লইয়া গৌরিপুর বাজারে রওনা করি 0 যাওয়ার পথে অনেক বাধা রায়পুর পুলের উপরে রাজাকার আর পাকিস্তানি সেনারা টহল দিচ্ছে 0 যাওয়া খুবই দুষ্কর রায়পুর ফুলের উপরে রাজাকার কমান্ডার বসে আছে তাকে অনুরোধ করে নৌকা নিয়ে গরিব পুর বাজারে যাই 0 প্রায় দুপুর এর কাছাকাছি পেটে খুবই ক্ষুধা লেগেছে নৌকার মধ্যে আমাকে নিয়ে আরো ছয়জন 0 তাদেরকে অনুমতি নিয়ে আমি ভাত খাওয়ার জন্য গৌরিপুর বাজারে উঠি 0 ছোট একটা হোটেলে ভাত খাই খাওয়ার পর পয়সা হলো চার আনা আমি হোটেলের মালিকের চেহারা না দিয়ে বাহির হইলাম 0 হঠাৎ একটা শব্দ হলো পাঞ্জাবি আসে পাঞ্জাবি আছে চতুর্দিকে হইচই মানুষ জান জীবন নিয়ে পালানোর জন্য ছুটোছুটি করিতেছে 0 এমনটা অবস্থায় আমি হোটেলের পাশে আড়ালে দাঁড়াইয়া আছি 0 হঠাৎ পেছন থেকে আমাকে ধরে ফেলল আমি ফিরে দেখি সিভিল পোশাক লম্বা একজন লোক 0 এ দাড়াও তুমি আমি যাইতে চাইনা জোরপূর্বক টানাহেঁচড়া করে আমাকে একটা পিক আপ গাড়ির কাছে নিয়ে গেল যাওয়ার সাথে সাথে আমার চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল হাত দুটি বেঁধে ফেলল 0 এবং আমাকে লাথি মেরে ঘুসি দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিল 0 আমার চোখ বন্ধ করার আগে দেখলাম গাড়িতে 10 থেকে 12 জন যুবক ছেলে তারা কান্নাকাটি করে 0 তখন আমি ভয়ে কাতর হইয়া গেলাম আর মনে মনে ভাবি আমার বাবা-মা ভাই বলে কোথায় কাউকে তো দেখি না কান্না রাখতে পারি না 0 যখন গাড়িতে উঠাইয়া উপরে তেরপাল দিয়ে ঢেকে দিল তখন কলেমা পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি লাম মরন ছাড়া আর কোন উপায় নাই 0 আর বলিলাম আল্লাহ তোমাকে ছাড়া আর কেউই নাই 0 যত কান্নাকাটি করি রাজাকার লাঠি দিয়ে আঘাত করে এ মঞ্জুরি পিঠা আমারে গরুর মত পেটায় ও ভাই আমাকে আর মাইরো না 0 কিছুক্ষণ পর পর শুধু পেটায় আর পেটায় 0 ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে বলতে লাগলাম আর আল্লাহ গো তুমি আজরাইল পাঠাও আমার রুহ কবজ করে নিয়ে যাও তাদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করো 0 চোখ বন্ধ অবস্থায় গাড়িতে বসে আছি আল্লাহর হুকুমে আমার চোখের পাতা কাপড়টা একটা চোখ খুলে গেল 0 দেখতে পেলাম আমাকে পূর্ব দিকে নিয়ে যাচ্ছে 0 কিছুক্ষণ পরে গাড়ি রায়পুর পলে র কাছে থামছে পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী গাড়ি থেকে নামিয়া আমাদের উপরের তেরপাল সরাইয়া আমাদের কে লাথি মেরে আর নিচে ফেলে দেয় 0 নিচে পড়ার সাথে সাথে কারো মাথা কারো হাত-পা ভেঙে যায় 0 তারপর আমাদেরকে ইটিভি রাস্তার উত্তর পাশে পানিতে দাড়া করাইয়া রাখ লো 0 প্রায় 20 থেকে 25 মিনিট আনুমানিক 0 তারপর আবারও গাড়িতে উঠাইয়া ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে আসে 0 আমাদেরকে আবারো গাড়ি থেকে নামাইয়া রুটি দিল আর ডাল দিল 0 খানা তো কারো পেটে যায় না চোখ বাঁধা কারো চেহারা কেউ দেখেনা 0 আবারো গাড়িতে উঠাইয়া সিলেটের দিকে রওনা দিল 0 গাড়ি অনেকক্ষণ চলল এমনতো অবস্থায় হঠাৎ একটা ফায়ার আসলো পূর্ব দিক থেকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে দুইজন পাঞ্জাবি সেনা আর গাড়ির বডিতে রাজাকার বসা ছিল দ্রুতবেগে গাড়ি থেকে নামিয়ে পূর্বদিকে পজিশনে গেল আর তুমুল ফায়ার দুই দিক থেকে শুরু হইল 0 এই সময় গাড়িতে যত লোক ছিল লাফ দিয়ে পড়ে যায় তখন আমিও লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে পশ্চিম দিকে পড়ে গেলাম 0 পাঞ্জাবি সেনা রাজাকার তারা সবাই তুমুল ফায়ার করিতে ছে 0 উভয় দিক থেকে পাল্টাপাল্টি ফায়ার 0 তখন আমরা যারা বন্দি ছিলাম কি কোন দিকে চলে গেল বলতে পারিনা 0 আমার এক চোখ খোলা ছিল আমি দেখতে পাই আমার হাত দুইটি পেছনে বাঁধা অনেক কষ্ট করে আমি একটা ধানক্ষেতে ঢুকে পড়লাম রাজাকাররা আমাকে দেখতে পায় না 0 পানি কোন কোন জায়গায় বুক সমান কোথাও কোমরসমান কোথাও কচুরিপানা নানা বাধা-বিপত্তি এড়ায় হাঁটতে হলো 0 পানি দিয়ে হাটতে হাটতে দেখি একটা টেলিফোন লাইনের খাম্বা 0 তখন আমি টেলিফোন লাইনের খাম্বা দেখে তখন মনে করিলাম এই লাইনের পশ্চিম দিকে আরো টেলিফোনের খাম্বা আছে 0 টেলিফোন লাইনের এক পাশে তার দিয়ে টানা 0 এইটা না তারে আমার পিছনের হাত বাধা রশি গসা গসি করিতে আরম্ভ করিলাম অনেকক্ষণ ঘষার পর রশি ছিড়ে যায় 0 রশি ছেঁড়ার পর হাত মুক্ত হলো 0 তখন আমার শরীরে কোন কাপড় চোপড় নাই আমি উলঙ্গ অবস্থায় এবং আমার জামাটা রাজাকার বাহিনী খুলে নিয়ে যায় ও কেটেছিল 275 টাকা তাও নিয়ে গেল। ধান খেতি হাটা যে কত কষ্টকর ভাষায় বোঝানো যাবে না 0 হাটতে হাটতে পায়ের চামড়া চলে যায় আর হাটতে পারি না 0 তারপর একটা ক্ষেতের লাইন পাইলাম শুকনা শুকনা জায়গা দেখে মনটা বড় হল মনে হয় সামনে আর পানি নেই কিন্তু হাঁটতে পারি না 0 বসে আছি অনেকক্ষণ যাবৎ 0 হঠাৎ কানে আওয়াজ আসলো মাগো আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও 0 আমি আর বাঁচবো না মাগো তুমি কোথায় আছো তোমার ছেলে আজ গহীন বিলের মাঝে পড়ে আছি 0 এই কথা শুনে আমারও কান্না শুরু হইল আমি বললাম ভাই তুমি কোথায় দাঁড়াও আমি তোমাকে দেখি না অন্ধকার আর অন্ধকার 0 ছেলে দুইজন দাঁড়াই আমাকে ডাক দিলে ভাই তুমি কোথায় আছো আমাদের কাছে এসো 0 ওরা দুইজন আমার পাশে ছিল 0 আমি যাইয়া তাদের সাথে একত্র হইলাম 0 একত্র হওয়ার সাথে সাথে আমার গলায় ধরে আমি তাদের গলায় ধরিলাম এবং কান্নাকাটি শুরু হইয়া গেল তিনজনের হঠাৎ এক ভাই বলল ভাই আর কান্নাকাটি করোনা রাজাকাররা শুনে ফেলবে 0 আবার আমাদেরকে ধরে নিয়ে যাবে 0 এবার ধরা পড়লে গুলি করে মেরে ফেলবে সাবধান কান্নার আওয়াজ করো না সারা রাত্র বসে রইলাম তিন ভাই উলঙ্গ অবস্থায় 0 তখন আমার মনে হলো তিনজন ভাই এক মায়ের আপন সন্তান 0 সারারাত বসে রইলাম গায়ে কোন কাপড় চোপড় নাই খুবই শীত লাগে ঐদিন রাত্র টা অনেক বড় মনে হইল 0 আমি বললাম ভাই তোমাদের বাড়ি কোথায় একজন বলল আমারে বাতা কান্দি আমি বাতাকান্দি বাজারে আসার পর আমাকে ধরে চোখ বেঁধে গাড়িতে উঠায় 0 আরেক ভাই বলল আমাকে হোমনা থেকে জায়গার নাম মনে নাই ধরে চোখ বেঁধে গাড়িতে উঠায় 0 আমি বললাম আমাকে গৌরীপুর বাজার থেকে ধরে চোখ বেঁধে গাড়িতে উঠায় 0 তিনজন মা-হারা বাবা-হারা সন্তান-হারা শেষ হল আযানের আওয়াজ শুনতে পেলাম অন্ধকার কেটে গেল হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের দিকে গেলাম 0 লোকজন আমাদের কি কাপড় দিল পুরনো ছেঁড়া কাপড় 0 কাপড় পরে জিজ্ঞাসা বাদ করল 0 আমরা পূর্বের কাহিনী বললাম একজন বলল তাদেরকে হাত পা বেধে থানায় পাঠাও তারা রাজাকার 0 আমরা বললাম ভাই আমরা রাজাকার না 0 অনেকে আমাদেরকে মারে আবার অনেকে আদর করে এর পরে জানাজানি হয়ে গেল অনেক লোক আমাদেরকে দেখতে এলো 0 একজন ভদ্রলোক বলল তাদেরকে মাসিকারা আওলাদ বিএসসি বাড়িতে পাঠাও 0 বিএসসি আওলাত সাহেব ভারতের লোক নিয়ে যায় 0 ওই গ্রাম থেকে মাশিকাড়া অনেক দূর 0 কিন্তু অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করে কিন্তু খাওয়ার কথা বলে না 0 একজন বুড়ো মহিলা এসে বলল বাবারা তোমরা আমার সাথে এস বুড়ি মার সাথে গেলাম ঘরে নিল বুড়ি মা বলল আমার ছেলে কোথায় আছে কিভাবে আছে জানিনা 0 তোমাদেরকে দেখে আমার ছেলের কথা মনে পরল 0 বুড়ি মা কান্দে আর কান্দে একটা থানার সামান্য কিছু ভাত দিল তেতুলের টক দিয়ে 0 তিন জনে একত্রে বসে চার লোকমা করে ভাত খাইলাম 0 মনে হল ভাত গুলিএত সাধ লাগল বলার ভাষা নাই 0 একজন ভদ্রলোক এসে আমাদের ডাকিয়া নিয়া আমাদের নাম ঠিকানা জানতে চাইল 0 আমরা তিনজন নাম ঠিকানা বললাম 0 বাবা তোমরা এখন কোথায় যাইবা আমরা বললাম আমরা মাসিকারা আওলাদ বিএসসি বাড়ি যাব ওই গ্রাম অনেক দূর 0 যাক ভদ্রলোক খাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং ঘুমাইতে বিছানা দিল 0 আমরা খাওয়া দাওয়া করে ঘুমালাম 0 মাগরিব নামাজের আজানের পরে বাড়ি থেকে বিদায় দিল এবং রাস্তার কথা বলে দিল 0 আমরা সারারাত হেঁটে মাশিকাড়া কাছাকাছি এসে রাত্র শেষ হইল 0 মাশিকাড়া সামনে আরো আড়াই মাইল আছে 0 এমত অবস্থায় এই গ্রামে রাজাকারও আছে এক ভদ্রলোক বলল তোমরা তাড়াতাড়ি লুকিয়ে যাও 0 মাশিকাড়া যাইতে হলে রাত্রে যাইতে হবে 0 জঙ্গলে সারাদিন না খেয়ে কাটালাম সন্ধ্যা হল আবার রওনা দিলাম 0 রাত্রের ভিতর মাসি কারা ভূইয়া বাড়ি আওলাদ বি এস সি বাড়িতে উঠে দেখি 20 জনের মতো লোক 0 আওলাদ সাহেব কিভাবে খবর পেল জানিনা নতুন লোক তিনজন আসছে কোথায় আমাদেরকে ডাকলো আর বলল ভাত খাওয়া হইয়াছে 0 আমরা বললাম কত দিন এক ভদ্রলোক ভাত খাওয়াইয়া মাসিকের আর উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে এখন আপনার কাছে আমরা হাজির হলাম 0 আওলাদ বি এস সি সব রান্না করে প্রায় 25 থেকে 30 জন লোক সবাইকে ভাত খাওয়াইয়া বলল আজ রাত্রে আমরা ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হব সবাই প্রস্তুত হইয়া থাকো এই রাত্রে আমরা যেতে হবে 0 রাত বারোটার দিকে রওনা হইলাম নৌকায় যুগে 0 দুই নৌকা লোক ভর্তি রাত্র চারটার দিকে এক গ্রামে উঠে আমাদের কে তিন ভাগে ভাগ করিয়া দিল আর বলল ঘর থেকে কোন লোক বাইর হবে না 0 আমরা সবাই বিএসসি সাহেবের আদেশ মত পুনঃখনন ভাবে মানলাম 0 খাওয়া-দাওয়া নাই 0 তারপর রাত্রে আটটার দিকে রওনা হইলাম রাত 3 টার দিকে বর্ডারস ভারতের সীমান্তে পৌঁছ লাম 0 সবাইকে নিয়ে আওলাদ বি এস সি সাহেব সি ডি বি রোড পারি দেবে এমত অবস্থায় রাজাকারের দল ফায়ার দেওয়া শুরু করিল 0 আমরা আবার সবাই ফেরত এসে নৌকা করে চলে আসি 0 দুই দিন বসে রইলাম খানা চিড়া মুড়ি খাওয়ায় 0 দুইদিন পরে আবার রওনা দিয়ে সীমান্তে এসে দেখি রাজাকার নাই 0 আওলাদ সাহেব আমাদের কে তিন ভাগে ভাগ করে দিল 0 আমরা দুই নং দলের সাথে এক নং দল পার হওয়ার পর 2 নং দল সিডিবি রাস্তার ওপরে ওঠা মাত্র পাঞ্জাবের গাড়ি এসে পড়ল সাথে সাথে ফায়ার শুরু করল আরেকজনকে ধরে ফেলে আর দুইজন আহত লোক হইয়াছে কে কোথায় গেল বলতে পারি না আমি নিজেই বলতে পারি না যে আমি কোন দিক দিয়ে কোন দিকে যাইতেছি 0 পানি আছে শুকনো আছে এমনতো অবস্থায় বিএসএফ আমাদেরকে ধরে নিয়ে গাড়িতে উঠাইয়া আগরতলা জেল খানায় ভর্তি করে দিল 0 আগরতলার জেলখানার সম্বল থালা বাটি কম্বল 0 জেলখানায় মশার কামড় যেমন তেমন ছারপোকার অত্যাচার সহ্য হয় না 0 জেলখানা থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করিবে এইদিকে বাড়ির সংবাদ পাই না আমার বাবা মা পাগল হইয়া গেছে 0 যা আমার মনের বিশ্বাস আমার বাড়িতে বাবা মা বড় ভাই আত্মীয়-স্বজনও আমাকে খোঁজ করে না পাইলে তাহারা সবাই মনে করবে পাঞ্জাবীরা অথবা রাজাকাররা অবশ্যই গুলি করে মারে ফেলছে 0 জেলখানায় লোকের অভাব নাই খানা পাকানো হল কেউ পায় কেউ পায় না 0 ভাত অল্প দেশ সামান্য ডাল 0 যাক দুই-তিন দিন চলে গেল হঠাৎ মোস্তাক সাহেব আর ও অন্যান্য লোক নিয়ে জেল খানায় উপস্থিত 0 জেলের দারগা কে বলল বাংলাদেশের সব লোক বাহির করিয়ে দাও 0 অনেক জেলার লোক ছিল এরমধ্যে দাউদকান্দি থানার লোক সংখ্যায় কম ছিলাম 0 মোস্তাক সাহেব সবাই কে চিঠি দিয়ে আগরতলা কংগ্রেস ভবনে পাঠাইয়া দিল আর আমরা দাউদকান্দি থানার 6 জন লোক আমাদেরকে 500 টাকা দিল বলল এই চিঠি নিয়ে কংগ্রেস ভবন যাও। আমরা কংগ্রেস ভবন চলে আসি 0 পাঁচশত টাকা ভাগ করে নিলাম 0 তারপর আমি এই টাকা দিয়ে একটা লুঙ্গি ও একটা পুরান জামা কিনলাম 0 কংগ্রেস ভবন থেকে লোকজনকে বিভিন্ন ইয়ুথ ক্যাম্প এ পাঠায় 0 তখন আমি হাকানি নিয়া ইউথ ক্যাম্পে আসি 0 এই হাকানি আইয়ুব ক্যাম্পে পাঁচটা ক্যাম্প ছিল 0 আমি বদ সাধু ক্যাম্পে ভর্তি হইলাম এবং ডি কোম্পানিতে পড়লাম 0 রাত্র ঘুমাইলাম সকাল বেলা বাসি মারলো ফালিং হও আসিয়া ফাইলিং হইলাম 0 ফাইলিং এ দাঁড়াইয়া জাতীয় সঙ্গীত গাইলাম আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি জাতীয় সংগীত গাওয়ার পর পিটি হইল 40 মিটার পিটি করার পর আটটা থেকে ট্রেনিং শুরু হইল 0 লেফট রাইট লেফট হল বামে রাইট হল ডানে 0 দুই পায়ের তালেতালে মিলে যত নওজোয়ান এইভাবে 15 দিনের মতো চলল 0 হঠাৎ একদিন বিকেলবেলা ভারতীয় অফিসার সেনাবাহিনীর 3 জন সেনা সদস্যকে উপস্থিত সেনা সদস্যরা মর্টার এম জি আর আর ও ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে লোক নেবে 0 লিখিত পরীক্ষা হলো বাছাইপর্ব শুরু হলো পরীক্ষা পাস করিলাম 0 আমাদেরকে ট্রেনিং করিতে পাঠাবে 0 এই কথা বলে ভারতের সেনাবাহিনী চলে গেল 0 এইদিকে ট্রেনিং এর জন্য আমরা 45 জন লোক সবাই একত্র হইলাম এবং কম্পানি অধিনায়ক আমাদেরকে স্পেশালভাবে খাওয়া-দাওয়া দিল 0 দুইদিন পরে আমরা সবাই ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাব বাকি সবাই আমাদের জন্য দোয়া করে বলল ভাই তোমরা সবাই ট্রেনিং করে সব প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করে পাঞ্জাবি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে হবে 0 এটা হলো আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস দৃঢ় প্রতিজ্ঞা 0 তারপর আমরা সবাই মিলে একটা দেশাত্মবোধক গান গাইলাম জয় বাংলা বাংলার জয় বাংলার জয় বার বার ঘুঘু এসে খেয়ে যেতে দেবো নাকো ধান আর ধান আর ধান বাংলার দুশমন তোষামত চাতক এরা সাবধান সাবধান সাবধানঃ মা-বোনের পরণে কাপড়ের লেশ নেই লজ্জায় দ্বারে দ্বারে ফিরছে মায়েদের বুকে তে শিশুদের দুধ নেই অনাহারে তাই শুধু কাঁদছে কাঁদছে জয় বাংলা বাংলার জয় বাংলার জয় হাপানিয়া ক্যাম্পের সবার মন খুব খারাপ কারণ হলো সবাই তো ঘর বাড়ি ছেড়ে পাহাড়ে আছি 0 শুধু কান্না আর কান্না এর পরবর্তী নায়েক সাহেব সবাইকে গান বাজনা করি তো যাতে সবার মন আনন্দ থাকে 0 হাপানিয়া ইয়ুথ ক্যাম্প থেকে 45 জন লোক ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে ও ম্পি নামক স্থানে চলে আসি 0 অম পি এসে দেখি অনেক এফ এফ ট্রেনিং করিতেছে 0 আমরা 45 জন নিজ নিজ ট্রেডে চলে গেলাম 0 আমি এফ ডি একটিভ ডেমো লেসন কোর্স করিতেছি 0 ট্রেনিং সবে মাত্র 12 দিন গত হইল 0 এমনতো অবস্থায় রাত্রে আদেশ হলো সব লোকজন মেলাঘর যাইতে হবে 0 সকালবেলা সবাই প্রস্তুত মেলাঘর যাব আমরা সবাই গাড়িতে উঠে মেলাঘর পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল 0 মেলাঘর এসে আদেশ হলো বাংলাদেশের জেনারেল সর্বাদ্বিনায়ক এম জি এম এ জি ওসমানী সাহেব বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করেছেন এবং অনেকগুলি ইউনিট রাইজ করেছেন 0 4 ই বেংগল রেজিমেন্ট নিয়ে কে ফোর্স কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ সাহেব 4 ই বেংগল এর সি ও সাহেব ক্যাপ্টেন গাফফার ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া সহ পুড়া ব্যাটালিয়ান নিয়ে আখাউড়া আক্রমণ করিয়াছিলেন 0 ওই আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ও বিমান হামলা আমাদের উপর গোলাবর্ষণ করিয়াছিলেন 0 তারপরে ও আমরা পিছে হটি নাই 0 পাকিস্তানের আর্টিলারি গুলা সেল বিমান গোলা সেল এমন ভাবে ফায়ার করিয়াছি আমরা ঐদিন মাথা উঁচু করার মত স্থান পাই নাই এর পরেও আমরা ইনশাল্লাহ অবস্থান ছাড়ি নাই 0 আখাউড়া আক্রমণ সমাপ্তির পর আখাউড়া থেকে আমরা অনেক খাবার চাউল ডাল তৈল ভারতে নিয়ে আসি 0 ওই আক্রমণে মেজর খালেদ মোশারফ সাহেবের মাথায় কপালের পাশে সামান্য একটা সেলের টুকরা স্পিন্টার লাগে 0 বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন ইউনিট চলে গেল আমরা সবাই কে ফোর্স এর অধীনে ফোর্স 2 নং সেক্টরে রয়ে গেলাম 0 2 নং সেক্টর কমান্ডার মেজর তত কালীন খালেদ মোশাররফ 2 নং সেক্টরের অধীনে চারি বেঙ্গল রেজিমেন্ট এইদিকে আগরতলা বিশালগড় এ কে ফোর্সের অবস্থানে ছিল 0আরও বীরত্বগাথা ইতিহাস এক সপ্তম পেইজ বাকী আছে যা আপলোড পরে পাবেন আমি এপস এর মালিকের হাতে দিয়ে দিব যা বাকী ইতিহাস আপলোড দিবেন।