জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর কে নিয়ে আমার কিছু স্মৃতি

৭০ এর নির্বাচনের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনারত আলহাজ্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মিজানুর রহমান বাচ্চু

আজ হতে শত বছর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন আজকের বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর জন্মের সময় তার মা-বাবার উপস্থিতিতে মুখে মধু দিয়ে তার নানা বলেছিলেন তোমরা দেখে নিও আমার নাতি জীবনে অনেক বড় হবে। কিন্তু নাতি যে কত বড় হবে, কোথায় গিয়ে নাতির সীমানা শেষ হবে এটা বঙ্গবন্ধুর নানা আর ধারণা করতে পারেন নাই এবং দেখেও যেতে পারেন নাই। তবে ভাগ্য ভাল বলতে হবে বঙ্গবন্ধুর পিতা এবং মাতার। বঙ্গবন্ধুর জীবনের উত্থান তার পিতা এবং মাতা দেখে গিয়েছেন। জীবনভর ওনারা ওনাদের খোকাকে (বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলায় ডাক নাম ছিল খোকা) নিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু জেলে গিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে উনারা টেনশনে থাকতেন। তাদের শেষ জীবনে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবে, এটাই উনাদের জীবনের সফলতা। আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে। আমি বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখেছি ১৯৫৩ সালে, মাসটা আমার ঠিক মনে নেই তবে জুলাই-আগস্ট হবে। বঙ্গবন্ধু বগুড়ার আলতাফুন্নেসা মাঠে জনসভা করতে গিয়েছিলেন। আমার আব্বা সরকারি চাকরিরত অবস্থায় বগুড়ায় ছিলেন আমাদের বাসার কাছেই বগুড়ার সেই বিখ্যাত আলতাফুন্নেছা মাঠ। সেই মাঠে আমি বঙ্গবন্ধুর জনসভা দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সাথে স্টেজে ছিলেন বাংলার আর এক বাঘ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সাহেব। সেদিন কিছু না বুঝলেও মনোযোগ দিয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বক্তৃতার সময়। বক্তৃতা তো নয় যেন মুখ দিয়ে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার ভাবার্থ তখন কিছু বুঝি নাই, কিন্তু এটা বুঝেছিলাম যে ওনার বক্তৃতা আমাকে শিহরিত করছে। এরপর আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি ১৯৫৬ সালে। আমি তখন ক্লাস থ্রী বা ফোরে পড়ি। উনি নারায়ণগঞ্জের বর্তমানে জামতলা ওখানে একটা ঈদগাহ ময়দান আছে, এই ঈদগাহ ময়দানে বঙ্গবন্ধু মিটিং করতে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন আতাউর রহমান খান সাহেব, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, আরও অন্যান্য নেতারা যাদেরকে আমি তখন চিনতাম না। এখানেও বঙ্গবন্ধু জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ইস্কান্দার মির্জা তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম, খুব ভালো লাগলো আমার ভিতর থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি একটা টান এসে পড়ল। এরপর বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন তখন। বর্তমানে দুই নম্বর রেলগেট-এর সামনে বর্ষণ সুপার মার্কেট ও জনতা ব্যাংক আছে ওখানে তখন মাত্র বালু দিয়ে ভরাট করেছে, ১৯৬২ সালে উনি এখানে মিটিং করলেন, সোহরাওয়ার্দী সাহেব ওনার সাথে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরে ওই মিটিংয়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেব কিছু বক্তৃতা দিলেন আমার মনে আছে, আইয়ুব খান তখন দেশের প্রেসিডেন্ট, মার্শাল ল চলে আইয়ুব খানের, সোহরাওয়ার্দী সাহেব তখন বক্তৃতায় বলেছিলেন “নেমক হারাম নেমক হালাল বলে একটা কথা আছে, তুই বেটা আমার বডিগার্ড ছিলি আর তুই আমাকে বেটা জেলে নিলি”, এটা উনি বলেছিলেন ক্ষুব্ধ হয়ে কারণ ১৯৫৭ সালে উনি যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী  ছিলেন তখন তার চীফ সিকিউরিটি অফিসার ছিলেন আইয়ুব খান। এরপর বঙ্গবন্ধুকে দেখি ১৯৬৭ সালের বর্তমান চাষাড়া যেখানে জিয়া হল, তখন এটা ছিল বালুর মাঠ, এই মাঠের মধ্যে বঙ্গবন্ধু মিটিং করতে আসলেন, মিটিং এ  তিনি বললেন “পাকিস্তানের এক নেতা আছে যারা আগেও খান পরেও খান, খান আব্দুল কাইয়ুম খান, অনেক বড় বড় কথা বলেন কিন্তু কোন কথা তিনি রাখেন না”। এরপর বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ এ আবারো নারায়ণগঞ্জে মিটিং করলেন নির্বাচনী মিটিং। বঙ্গবন্ধু সবসময় কৌতুক করে বক্তব্য রাখতেন, সকল মানুষ নীরব হয়ে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনতো, মাইলের পর  মাইল দূর হতে পায়ে হেঁটে এসে, চারটার মিটিং এমনকি দুইটার সময় মাঠ ভরে যেত মানুষের ভীড়ে। সেই মিটিং-এ যেখানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন পিছনেই ছিল রেললাইন বঙ্গবন্ধু বক্তৃতার সময় রেল যাওয়া-আসা করছিল, বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন “আমি যখন বক্তৃতা দেই তখন ট্রেন আসে আর যায়, আসে আর যায়”।

এরপর বঙ্গবন্ধুর সাথে আমি সফরসঙ্গী হয়েছি। আমার মনে পড়ে ১৯৬৯ এ নির্বাচনী প্রচারে বঙ্গবন্ধু সিলেট রওয়ানা হলেন। আমি ও আমার ভাই নারায়ণগঞ্জের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক যাকে ১৯৮১ সালের ৩ নভেম্বর ভোর রাতে আওয়ামী লীগ অফিসে বিএনপির সন্ত্রাসীরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল, উনি ছিলেন আমাদের নেতা, আমরা এখনও যারা জেলা কমিটির মধ্যে নেতৃত্বে আছি, যাদের ৭০ উর্ধ্ব বয়স হয়েছে আমরা সবাই মনিরুল ইসলাম ভাইয়ের শিষ্য। মনিরুল ভাই আমাদেরকে রাজনীতিতে এনেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মনির ভাইকে অত্যন্ত আদর করতেন এবং উনার কথা বঙ্গবন্ধু মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। বঙ্গবন্ধু মনির ভাইকে বললেন “মনির ঠিক সাতটার সময় ডেমরা ঘাটে উপস্থিত থাকবি" তখন সিলেট যেতে হলে ডেমরায় ফেরি ছিল ওই ফেরি পার হতাম ওখান দিয়ে গিয়ে তারপরে মেঘনা ফেরি ছিল, দাউদকান্দি ফেরি ছিল, তারপর ময়নামতি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে সিলেটে যেতে হতো। আমরা রওয়ানা হলাম, ঠিক সাতটার সময় ডেমরা ঘাটে উপস্থিত ছিলাম। যিনি আমাদেরকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি ৭০ এ নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের এমপি হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী এআর ভূঁইয়া সাহেব এর ছেলে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া আমাদের প্রিয় বাদশা ভাই। উনি ওনার নিজস্ব গাড়িতে আমাদেরকে নিয়ে রওয়ানা হলেন বাদশা ভাই নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। ঠিক সাড়ে সাতটা নাগাদ বঙ্গবন্ধু ঘাটে আসলেন আমরা ফেরিতে উঠলাম, ফেরিতে  বঙ্গবন্ধুর গাড়ি  ওঠার পরে নেতৃবৃন্দের কিছু গাড়ি উঠলো, সাথে সঙ্গী হলেন খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। যখন ফেরি ছাড়বে এমন সময় বঙ্গবন্ধু বললেন, “একটু দেরি কর, আমাকে বঙ্গবন্ধু ডাকলেন এদিকে আয়, দুই প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আয়” বঙ্গবন্ধু ক্যাপেষ্টান সিগারেট খেতেন আমি আনতে যাব তখন বঙ্গবন্ধু আবার ডাকলেন, “এই শোন, একটা দিয়াশলাই সাথে আনিস”। বঙ্গবন্ধু যে আমাকে বললেন আমার জন্য সিগারেট আনবি দিয়াশলাই আনবি, আমি নিজেকে ধন্য মনে করি বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বিশ্বনেতা আমাকে হুকুম করেছিলেন। ফেরি পার হয়ে রওয়ানা দিলাম, আজকের প্রজন্মের যারা তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, প্রত্যেকটা মোড়ে মোড়ে বিশাল জনতা বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এরপর কাঁচপুর মোড়ে বিশাল জনসভা হলো, পরে মদনপুর তারপর মোগরাপাড়া চৌরাস্তা তারপর ইলিয়েটগঞ্জ, চান্দিনা এরপর ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট তারপরে কোম্পানিগঞ্জ বাজার দেবিদ্বার, কুটি চৌমুহনী সুলতানপুর এর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে পৌঁছলাম। প্রত্যেকটা জায়গায় হাজার হাজার লোকের সমাবেশ বঙ্গবন্ধু কোন বিরক্ত প্রকাশ ছাড়াই সব জায়গায় জনসভা করেছেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে এসে দীর্ঘ সময় ধরে তার জন্য অপেক্ষা করছে একবার তাকে দেখার জন্য তার  মুখের দুটি কথা শোনার জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার আগ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ জায়গায় বঙ্গবন্ধু পথসভা করেছেন। সেই পথসভায় আজকালকার যেকোনো জনসভা থেকে অনেক বেশি জনসমাগম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কোনরকম ইতস্ততা বা বিরক্ত প্রকাশ না করেই গাড়ি থেকে নেমে অস্থায়ী স্টেজে উঠে তার বক্তব্য রেখেছেন প্রত্যেকটা বক্তব্যেই বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য যে সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন তা জনগণের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধুর যে কতটা টান ছিল মানবতার খাতিরে বঙ্গবন্ধু যে কি করতে পারতেন তার ছোট একটা উদাহরণ দেই। ১৯৬৯ সালে একটা টর্নেডো হয়েছিল। যে টর্নেডোতে ডেমরা বাওয়ানী জুট মিলের দেয়াল ভেঙ্গে গিয়েছিলো চাল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল এবং কুমিল্লার দেবিদ্বার ও মুরাদনগর থানায় অনেক লোকজনের ক্ষতি হয়েছিল, অনেক লোকজন মারা গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এদের জন্য এক লঞ্চ বোঝাই করে রিলিফ নিয়ে রওয়ানা হলেন পাগলা ঘাট থেকে। আমরা খবর পেলাম উনি যাবেন আমাদের সোনারগাঁয়ের এখান দিয়ে, কালাপাহাড়িয়া আড়াইহাজারের ভিতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু ঢুকবেন। বঙ্গবন্ধু যাচ্ছেন যাওয়ার সময় লঞ্চের মধ্যে আমাদের নারায়ণগঞ্জের আরেক নেতা মো নায়েম সাহেব বললেন মুজিব ভাই একটু দেখেন এই গ্রামটা একদম ধ্বংস হয়ে গেছে। একটা ঘরবাড়িও নাই হাজার হাজার লোক দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু যাবেন এই খবর পেয়ে, বঙ্গবন্ধু নিঃস্ব অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের দেখলেন, লঞ্চ ভিড়াতে বললেন।

বঙ্গবন্ধু লঞ্চ থেকে নেমে কিছু ঘরবাড়ি দেখলেন, এরপর গাজী গোলাম মোস্তফা সাহেব কে বললেন “গাজী টিন কতগুলি আছে”, গাজী ভাই বললেন ২৫০ বান্ডিল টিন আছে ভাই। “টিউবওয়েল কতগুলো আছে”, গাজী ভাই উত্তর দিলেন ১৫০ টা। বঙ্গবন্ধু গাজী ভাইকে বললেন “টিন ও  টিউবওয়েল সমস্ত ঘরে ঘরে বিলিয়ে দাও, তারা যাতে ঘর উঠাতে পারে এবং টিউবওয়েল বসাতে পারে সেই ব্যবস্থা করো”। প্রত্যেকটা বাড়িতে বাড়িতে টিউবয়েল বসে গেল ঘরের চালে টিন উঠে গেল মোনায়েম সাহেবকে দায়িত্ব  দিয়ে গেলেন, এবং গাজী ভাইকে বললেন“ তুমি বাই রোডে ঢাকা যাও রিলিফ নিয়ে আসো ওখানকার জন্য” আমি লঞ্চে মুরাদনগর যাচ্ছি”। কালাপাহাড়িয়ার মানুষ কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ৫২/৫৩ বছর ধরে এখনও প্রত্যেকটা নির্বাচনে ওই এলাকার প্রত্যেকটা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বাইরে ভোট দেন না।

বঙ্গবন্ধুর যে একটা মানুষের প্রতি টান, মানুষের প্রতি মমতা ছিল তা যারা দেখেন নাই তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। আমি অনেক বক্তব্যে বলি বঙ্গবন্ধু একজন রাজনীতিবিদ, বঙ্গবন্ধু একজন রাজনৈতিক কবি, বঙ্গবন্ধু একটা মহাকাব্য লিখে গিয়েছিলেন যার নাম বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত এমন একটা গ্রাম ছিল না এমন একটা জায়গা ছিল না যার সাথে বঙ্গবন্ধুর আত্মার আত্মীয়তা ছিল না।

এই ছিলেন বঙ্গবন্ধু যিনি আমাদের একটা দেশ দিয়ে গেছেন, একটা পতাকা দিয়ে গেছেন, আমরা একটা পাসপোর্ট পেয়েছি।

বঙ্গবন্ধুর স্রোতধারায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা এখন একটা অনুন্নত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ইনশাল্লাহ অল্পকিছুদিনের মধ্যে ইউরোপের অনেক দেশের সাথে প্রতিযোগিতা দিতে পারবে আমাদের এই বাংলাদেশ। আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেক হায়াত কামনা করি।

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মিজানুর রহমান বাচ্চু ( যুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার, ৯নং সেক্টর) এর বীরত্বগাথা ইতিহাসের প্রোফাইল দেখুন এই লিংকে

https://mssangsad.com/profile_view/437/31315