৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

ইএনএ-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ ৯ জানুয়ারিকে ‘শেখ মুজিব দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


রাওয়ালপিন্ডির একটি সূত্র জানায়, নয় মাস দীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিব রেডিও বা সংবাদপত্র থেকে বিরত ছিলেন। তাকে গৃহবন্দী করার পর তিনি একাত্তরের এপ্রিলের পরের যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারেন।


বিশিষ্ট লেখক ও প্রযোজক জহির রায়হান এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, আলবদর সদস্যরা শত শত বাঙালি বুদ্ধিজীবীর হত্যাকারী। তিনি মার্কিন গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান এবং কঙ্গো গণহত্যার সাথে বাংলাদেশের গণহত্যার মিল খুঁজে পান। তিনি গণহত্যার জন্য নিয়াজিসহ কয়েকজন পাকিস্তানি জেনারেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “আলবদর ঘাতকদের সাধারণ জনতার মধ্যে মিশে যাওয়ার আগে তাদের অবশ্যই দিনের আলোতে আনতে হবে। এই দেশ তাদের হাতে তার সেরা বুদ্ধিজীবীকে হারিয়েছে। এই পশুদের শাস্তি হওয়া দরকার।


আকাশবাণীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিগগিরই ১২টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। সারিতে রয়েছে আরও ২০টি দেশ। বাংলাদেশের প্রতিনিধি আবু সাঈদ চৌধুরী সফলভাবে যুগোস্লাভিয়া, রাশিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া এবং আরও কয়েকজনের কাছ থেকে সাড়া ও সহায়তা পেয়েছেন।


আরও সহযোগী গ্রেপ্তার, এপিবি থেকে একটি খবরে বলা হয়েছে: মাওলানা নুরুজ্জামান, পিপির সাবেক চেয়ারম্যান, আবদুল ওয়াদুদ, সিদ্দিক বাজারের অ্যাডভোকেট, ফিরোজ সিরাজী, ঢাকার গুপ্তচর, নায়েক সুবাদার আজাব খান, একজন গুপ্তচর, মিরপুরের ইন্তিজা হোসেন, সামি আহমেদ সিদ্দিকী। সূত্রাপুর থেকে হামিদ আলী দেওয়ান, মগবাজার থেকে আলবদর সদস্য মোঃ আনিসুর রহমান, মিরপুর থেকে মোঃ এজাজ হোসেন, মিরপুর থেকে মোস্তাক আহমদ ও মোহাম্মদপুর থেকে এজাজ আহমদ।


সূত্রাপুর থানার একটি সূত্র জানায়, নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে বের করার জন্য একটি অনুসন্ধান দল কাজ করছে।

 

বিজয়ের দিনলিপি- ২৮ ডিসেম্বর ১৯৭১

ঢাকা শহরে ‘শেখ মুজিব দিবস’-এর অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মসজিদ, মন্দির, চার্চ ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা, শোভাযাত্রা ও বিকেলে পল্টন ময়দানে জনসভা। সভায় বক্তৃতা করবেন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং অন্য আওয়ামী লীগ নেতারা।

প্রখ্যাত লেখক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক জহির রায়হান অভিযোগ করেছেন যে বদর বাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যার পেছনে একটি বৃহৎ শক্তি জড়িত আছে। তিনি স্থানীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, এই হত্যাকাণ্ড শুধু বদর কূপমণ্ডূকদের দ্বারা সম্ভব হয় নি, মার্কিন গোয়েন্দা সার্ভিস কর্তৃক ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান এবং কঙ্গোতে পরিচালিত হত্যাকান্ডের সঙ্গে এর প্রায় মিল রয়েছে।

জহির রায়হান তথ্য প্রকাশ করে বলেন, লে. নিয়াজিসহ কিছু পাকিস্তানি জেনারেল এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। কিছু উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারিও এ ষড়যন্ত্রের দোসরের কাজ করে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এখনও এ ব্যাপারে কোনও কার্যকরী সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি। খুনি ও অপরাধী ব্যক্তিরা ইতোমধ্যে জনগণের বিভিন্ন অংশে অনুপ্রবেশ করেছে এবং তাঁর কাছে অপরাধীদের পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র ও হত্যারহস্য সারা বিশ্বের কাছে উদ্ঘাটন করতে সরকারের কাছে আবেদন জানান। তিনি বলেন, বদর দস্যুদের মুখোশ উন্মোচন না করলে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি তা হুমকি হয়ে থাকবে। এদের কঠোর হাতেই দমন করতে হবে। বদর পশুদের জঘন্য হত্যাকান্ডে দেশ তার সেরা সন্তান-সন্ততিদের হারিয়েছে।