২১ ডিসেম্বর ১৯৭১ এই দিনে
রাওয়ালপিন্ডিতে বিদেশি সংবাদদাতাদের জন্য আয়োজিত নৈশভোজে পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেন, শেখ মুজিব এখনো কারাগারে রয়েছেন। তবে শীঘ্র তাঁকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হবে।
পোল্যান্ডে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আবুল বশিরুল আলম বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য ঘোষনা করেন। কয়েক ডজন পোলিশ সাংবাদিকের উপস্থিতিতে তিনি তাঁর বাসভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের কারণে দেড় থেকে দুই কোটি উদ্বাস্তু দেখা দিয়েছে বলে এতদ্বিষয়ক কর্মরত বৃটিশ সংস্থাগুলো জানায়। ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী উদ্বাস্তুর সংখ্যা মিলে সর্বমোট উদ্বাস্তু হয়েছে তিন কোটি মানুষ।
মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এম. এ. জি. ওসমানি ঢাকা এসে পৌঁছেছেন।
কলকাতাস্থ বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের প্রতিনিধি ডি. পি. ধরের সঙ্গে উদ্বাস্তু প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। অনুমান করা হয় এ-বাবদ ব্যয় হবে ১০ কোটি পাউন্ড।
২১ ডিসেম্বর ১৯৭১ : প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানি ঢাকা পৌছান
২১ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এম. এ. জি. ওসমানি ঢাকা এসে পৌঁছান।
পোল্যান্ডে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আবুল বশিরুল আলম বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য ঘোষনা করেন। কয়েক ডজন পোলিশ সাংবাদিকের উপস্থিতিতে তিনি তাঁর বাসভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
রাওয়ালপিন্ডিতে বিদেশি সংবাদদাতাদের জন্য আয়োজিত নৈশভোজে পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেন, শেখ মুজিব এখনো কারাগারে রয়েছেন। তবে শীঘ্র তাঁকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হবে।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের কারণে দেড় থেকে দুই কোটি উদ্বাস্তু দেখা দিয়েছে বলে এতদ্বিষয়ক কর্মরত বৃটিশ সংস্থাগুলো জানায়। ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী উদ্বাস্তুর সংখ্যা মিলে সর্বমোট উদ্বাস্তু হয়েছে তিন কোটি মানুষ।
নাটোরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ করেছিলো ২১ ডিসেম্বর
নাটোর, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১ (বাসস) : বিজয়ের পাঁচদিন পর অবরুদ্ধ নাটোরে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাই স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্যে, বিজয়ের আনন্দ অনুভব চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে নাটোরবাসীকে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে হয় ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২১ ডিসেম্বর ১৯৭১ উত্তরা গণভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনী। বিজয়ের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
২৬ মার্চের কালোরাতে ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইটে অসংখ্য বাঙ্গালি হত্যার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যোগাযোগ সুবিধার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নাটোরে তাদের ২য় হেড কোয়াটার প্রতিষ্ঠা করে। সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের যুদ্ধ নাটোর থেকে পরিচালনা করা হতো। শহরের ফুলবাগানে সিও অফিসে স্থাপিত হয় প্রধান কার্যালয়। এছাড়া তৎকালীন গভর্নর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবন, রাণী ভবানী রাজবাড়ী, আনসার ক্যাম্প, পিটিআই এবং নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু বলেন, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়ায় নাটোর শহর ১৩ এপ্রিলের পর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ইতোপূর্বে নাটোর টাউন পার্কে খন্দকার আবু আলীর নেতৃত্বে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং নাটোর রিক্রিয়েশন ক্লাব থেকে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কার্যক্রম মন্থর হয়ে পড়ে। নাটোর শহরে সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা নাটোর ছাড়তে শুরু করেন বলে জানান, মুক্তিযুদ্ধের এই অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক এডভোকেট মাজেদুর রহমান চাঁদ। তিনি বলেন, নাটোরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা শেখ আলাউদ্দিন বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে নাটোরে ফিরে আসতে শুরু করেন। ১৩ এপ্রিল থেকে ১৫ ডিসেম্বর নাটোর শহর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ১৬ ডিসেম্বর থেকে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ১৬ থেকে ২০ ডিসেম্বর উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে সেনাবাহিনী নাটোরে আসতে থাকে। নাটোরে আসে মিত্রবাহিনী।
এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন গভর্ণর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনে ১৪১ জন অফিসার, ১১৮জন জি.ও.সি, ৫ হাজার ৪৫০জন সিপাহী এবং এক হাজার ৮৫৬ জন প্যারামিলিশিয়া বাহিনী নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নওয়াব আহমেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ দলিলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রঘুবীর সিং পান্নু। এ সময় অন্যান্যে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল লসমন সিং এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল নজর শাহ্। ১০ হাজার ৭৭৩টি অস্ত্রসহ জমা হয় ট্যাংক, মর্টার এবং অসংখ্য সাঁজোয়া যান। সকালের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কোন সিভিলিয়নের প্রবেশাধিকার ছিলনা বলে জানান, এলাকার ওই সময়ের যুবক বর্তমানে ব্যবসায়ী সাদেক খামারু। একই মত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাটোর জেলা শাখার প্রাক্তন কমান্ডার আব্দুর রউফ। আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সারাদিন ধরে শহরে চলে বিজয় মিছিল আর মুক্ত আকাশে গান ফায়ার। জয়বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হয় সারা শহর। বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পরে চারিদিকে।