৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

ভারতের দিল্লিতে পশ্চিম জার্মানির এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, 'পাকিস্তানের অঞ্চল নিজেদের দাবি করার কোনো আকাঙ্ক্ষা ভারতের নেই। আমরা বাংলাদেশের জন্যই লড়াই করেছি। এমনকি আমরা যত শিগগির সম্ভব বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য সরিয়ে নেব।'

ভারতীয় সৈন্যরা কবে বাংলাদেশ ছাড়তে পারে জানতে চাইলে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, 'ভারতীয় বাহিনী কবে নাগাদ বাংলাদেশ ছাড়বে তা বলা শক্ত। তবে এটি বাংলাদেশ সরকারের উপরেই নির্ভর করছে। সেখানকার জনগণের নিরাপত্তা এর সঙ্গে জড়িত।'

এ দিন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্বকারী দলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান আইন প্রশাসক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। রেডিও পাকিস্তানে জাতির উদ্দেশ্যে ইংরেজিতে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, '১৪ দিনের যুদ্ধে কেবল যুদ্ধ বিরতি হয়েছে মাত্র। পূর্ব পাকিস্তান আমাদের অধিকার এবং আমাদেরই দেশ। পূর্ব পাকিস্তানকে যতক্ষণ না আমরা আমাদের দখলে আনতে না পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো। পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই পাকিস্তানকে আমরা সত্য করে তুলব, এই বিশ্বাস আমার আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদেরকে সাময়িক ধৈর্য ধরতে হবে। নতুন সংবিধান শিগগির রচিত হবে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা হবে। তবে আমাদের কিছুদিন সময় দিতে হবে।'

জুলফিকার আলী ভুট্টো, ইয়াহিয়া খান ও সামরিক প্রশাসকদের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের লোভ আর খামখেয়ালিপনার কারণে আজ পাকিস্তানের এই অবস্থা। আমরা চাই না দেশে কোনো সামরিক আইন চালু থাকুক। আমরা জনগণের হুকুম ছাড়া এক ইঞ্চি মাটিও সামনে এগোতে পারি না। পাকিস্তানের জনগণের নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি রূপেই আমি আমার ভাষণ দিচ্ছি, এটি আমার পদাধিকার বলে নয়। গত নির্বাচনে আপনারাই আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমার বিরোধীরা আজ বলছেন, আমি ক্ষমতা লোলুপ হয়ে পড়েছি। কিন্তু আমি তা নই। আমি দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছি। এই সংগ্রামের ফল আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না।'

ভুট্টো বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান নিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তান সমাধান শুধু একটি শর্তের মধ্যেই রয়েছে। সেই শর্ত হলো পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে থাকতে হবে। এই কাঠামো যদি ছাড়া ছাড়া হয় তাতেও কিছু যায় আসে না। এক ও সম্মিলিত পাকিস্তান এই আদর্শের মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানকে থাকতে হবে অবশ্যই। যেসব বিরোধ আমাদের মধ্যে পূর্বে হয়েছে যেসব বিরোধ আমাদের মধ্যে এখনো আছে, তার মীমাংসা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা ও জনগণের মধ্যে হবে। এর মধ্যে কোনো বৈদেশিক হস্তক্ষেপ চলবে না। নিশ্চিতভাবে ভারতীয় সৈন্যদের এবং অপরাপর বিদেশি শক্তির দ্বারা পাকিস্তানি অঞ্চল দখলের দ্বারা এটির সমাধান হবে না। মুসলিম বাংলা সর্বদাই পাকিস্তানের অংশ হিসেবে থাকবে।'

বেতার ভাষণে ভুট্টো মন্ত্রীসভা পুনরায় গঠন ও আওয়ামী লীগ নিয়ে বলেন, 'একটি অস্থায়ী মন্ত্রীসভা গঠন করা হবে। আমার হাতে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থাকবে। সংবিধান রচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই মন্ত্রীসভা থাকবে। আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলো।' একই সঙ্গে ভুট্টো এটাও বলেন, 'ভারতীয় বাহিনী এখনো পাকিস্তানের যেসব অঞ্চল দখল করে রেখেছে তা তাদের ছেড়ে দিতে হবে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাদের অবিলম্বে চলে যেতে হবে। আমরা জানি পাকিস্তানের মিত্র হিসেবে শতাধিক দেশ রয়েছে। আমরা সব হারিয়েছি এ কথা মনে করবেন না। সামরিক জয় সব নয়। পূর্ব পাকিস্তান এখনো নিজেদের দখলে রেখেছে বলেই ভারতের আনন্দিত হওয়ার কিছুই নেই। আমরা প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। আমাদের লক্ষ্য পাকিস্তানের সংহতি এবং ঐক্য ধরে রাখা।'

বক্তব্যে ভুট্টো ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যেন সাময়িক জয়লাভ করে লোলুপ নেত্রে তাকিয়ে না থাকেন। পাকিস্তানের কিছু কিছু পরাজয় ঘটতে পারে। আমরা এখান থেকেই পাকিস্তানকে পুনর্গঠন করতে উৎসাহী হবো।' ভুট্টো তার বক্তব্যের শেষ দিকে বলেন, 'আমরা এর বদলাও নিব। আমরা যেমন যুদ্ধ শুরুই করিনি তেমনি আমরা অকৃতকার্য ও হইনি। তাই আমাদের লজ্জিত হওয়ারও কিছু নেই। সত্যের জয় হবেই। সত্যটা হলো পাকিস্তানিরা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। এ কথা আমি না, বলেছেন এক বিদেশি জেনারেল। অতএব দয়া করে ভেঙে পড়বেন না।'

ঢাকায় এ দিন

২০ ডিসেম্বর জানা যায় পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর ডা. এ এম মালিক অস্ট্রিয়াতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। অস্ট্রিয়া সরকার তাকে জানিয়েছেন যে, রাজনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হবে না এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলে তার ও তার পরিবারের ভিসা মঞ্জুর করা হবে।

ডা. মালিককে নিরাপত্তার স্বার্থে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি অফিসারদের সঙ্গে রাখতে বলা হলে তিনি বলেন 'আমি বাঙালি'।

এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ মানুষের পুনর্বাসনের কাজ তরান্বিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রামে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ওই দিন সন্ধ্যায় জহুরুল হক হলে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এস অরোরা শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করার জন্য সর্বপ্রকার সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, 'তার মুক্তির জন্য ভারত বিশ্ব মহলে সর্বপ্রকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।'

এ সময়ে বেগম মুজিব অরোরাকে চা পানের অনুরোধ করলে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি করে আমি আপনার বাড়িতে এসে পেট পুরে খাবো।'

ভারতে এ দিন

২০ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রভাবশালী ব্রিটিশ এমপি জন স্টোনহাউস বলেন, 'আত্মসমর্পণের আগে ২০০ জনের বেশি বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি জান্তা। এর জন্য দায়ী ১০ জন পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা। তারা সবাই মেজর জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার, কর্নেল ও ক্যাপ্টেন। আমি গতকাল তাদের নাম জানতে পেরেছি। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য ন্যূরেমবার্গ যুদ্ধাপরাধ তদন্ত কমিটির মতো আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিৎ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন গণহত্যা ও পৈশাচিকতা আর সংগঠিত হয়নি।'

তবে তিনি তার বক্তব্যে সাংবাদিকদের এই ১০ সামরিক অফিসারের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'সময় হলেই নাম প্রকাশ করা হবে।'

এ দিন পিটিআইয়ের সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জন স্টোনহাউস বলেন, 'ব্রিটিশ সরকার এ সপ্তাহেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কারণ জুলাই মাসে যখন আমি হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রস্তাব তুলেছিলাম তখনই ৬৩০ জন সদস্যের মধ্যে ২১০ জন সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে সই করেছিলেন। তবে তখন কোনো রক্ষণশীল দলের সদস্য সই করেননি। কিন্তু এবার সমান সংখ্যক সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্য তাতে সই করেছেন। এ থেকেই বোঝা যায় এই প্রস্তাব হাউস অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।'

২০ ডিসেম্বর যুদ্ধবন্দি হিসেবে ঢাকা থেকে কলকাতায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজী ও পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ঢাকা থেকে কলকাতায় নিতে সহায়তা করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ধারনা করা হয়, তাদের ফোর্ট উইলিয়ামে রাখা হয়েছে।

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের এক মুখপাত্র বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বমোট যুদ্ধবন্দির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৭০ জনে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামে আটক রয়েছে ৮ হাজার সৈন্য। তাছাড়া প্রায় ২০ হাজারের মতো পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আধা সামরিক সৈন্য রয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ১ মাসের মধ্যে তাদের ভারতে নিতে পারবো।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান ডিপি ধরকে বাংলাদেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এক মুখপাত্র বলছেন, 'ডিপি ধর অস্থায়ীভাবে যে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তা রাষ্ট্রদূতের সম-মর্যাদাসম্পন্ন নয়। তার নতুন পদের নাম দেওয়া হয়েছে স্পেশাল এনভয়।'

দিল্লিতে ইন্ডিয়ান ফোরাম অব সাউথ আয়োজিত এক সভায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রাম পাকিস্তানের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোকে অভিনন্দন জানান। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, 'জনাব ভুট্টো বাংলাদেশে বাস্তবতা ও অস্তিত্ব স্বীকার করবেন। বাংলাদেশকে মুছে ফেলা যাবে না। শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে সৃষ্টিকর্তা যেন ভুট্টোকে সুবুদ্ধি দান করেন। ভুট্টোর প্রথম কাজ হবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া।'

পাকিস্তানে এ দিন

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর জুলফিকার আলী ভুট্টো উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় বৈঠকের সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, চিফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা সচিব মেজর জেনারেল গোলাম উমর খানসহ বেশ কয়েকজন জেনারেলকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসানকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক মহলে এ দিন

লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসে নিযুক্ত অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এহসানুল কবির, ব্রাসেলসের দ্বিতীয় সচিব খায়রুল আনাম এবং প্যারিসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মুসলেহ উদ্দিন আহমদ পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।

দেশব্যাপী এ দিন

কুষ্টিয়া ও যশোর সফরে সাংবাদিকদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বলেন, 'দেশ মুক্ত করিয়াই দায়িত্ব শেষ হইয়া যায় নাই, দেশের জনগণের হাতে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছাইয়া দিতে হইবে। শীঘ্রই দেশে শিল্প বাণিজ্য কার্যক্রম চালু হইবে এবং তাহাতে দেশে স্থিতিশীলতা আসিবে।'

মৌলভীবাজারে বিজয় উৎসব করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হলে অতর্কিত এক মাইন বিস্ফোরণে শহীদ হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

 

২০ ডিসেম্বর ১৯৭১: ঢাকা থেকে কলকাতা নেয়া হয় নিয়াজিকে

আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজিকে আজ বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি : সংগৃহীত

আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজিকে আজ বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিচয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার চূড়ান্ত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। সেই অনন্য অর্জন অন্যদিকে এই ডিসেম্বর স্বজন হারানোর মাস। ৩০ লাখ প্রাণ ও অসংখ্য নারীর সম্ভ্রম হারানোর বেদনা মিশে আছে এই বিজয়ের ক্ষণে।

জাতির জীবনে আবারো এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। কোটি মানুষের হৃদয়ে এই ডিসেম্বর আসে প্রেরণা, প্রতিজ্ঞার বার্তা নিয়ে। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে পরাজিত করে সুন্দর, সত্যের পথে লড়াইয়ের সঞ্জীবনী শক্তি লুকিয়ে রয়েছে এই ডিসেম্বরে। আজ ২০ ডিসেম্বর।

চলুন দৃষ্টি ফেরাই ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বরের দিনটিতে।

আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজিকে আজ বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। তার সঙ্গে রয়েছে আরেক বন্দি, প্রাক্তন গভর্নরের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি।

ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের মুখপাত্র জানান, গতরাত পর্যন্ত আটক পাকিস্তানি সৈন্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৭০ জন। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে চট্টগ্রাম গ্যারিসনে আটক ৮ হাজার সৈনিক। তাছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানি আমলা-কর্মচারি, পুলিশ ইত্যাদির সংখ্যা হয়েছে ২০ হাজার। এদের এক মাসের মধ্যে ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে।

বাংলাদেশের পক্ষে আজ যেসব কূটনীতিক আনুগত্য স্বীকার করেন তাদের মধ্যে রয়েছেন লন্ডনস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের ইকনোমিক মিনিস্টার এহসানুল কবির, প্যারিসস্থ কমার্শিয়াল কাউন্সিলার মুসলেহউদ্দিন আহমদ এবং ব্রাসেলস্স্থ দ্বিতীয় সচিব খায়রুল আনাম।

ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। রাতে এক বেতার ভাষণে তিনি দম্ভ সহকারে বলেন, আমরা পূর্ব পাকিস্তান ফিরে পেতে লড়াই করবো।

প্রাক্তন প্রেসিডন্ট ইয়াহিয়া খান, তার চিফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান এবং নিরাপত্তা সচিব মেজর জেনারেল গোলাম উমর খানসহ কয়েকজন পদস্থ পাকিস্তানি কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয়।