৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

এদিন ঢাকার পল্টন ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

বাবাসহ দুই মেয়েকে অপহরণকারী বিহারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে সমাবেশে আনা হয়। গণ রায়ের ভিত্তিতে অপহরণকারী বিহারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এ সময়। 

১৮ ডিসেম্বর রাওয়ালপিণ্ডিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরলে ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়।

ঢাকায় এদিন

১৮ ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ৪টি ট্যাংক বসানো হয়। মূলত হোটেলে আশ্রয় নেওয়া পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর ডা. এ এম মালিকের নিরাপত্তার জন্য এই সমরাস্ত্র মোতায়েন করা হয়। ডা. এম এ মালিক আগের দিন বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। পরে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।

১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি সেনারা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কর্নেলকে হত্যা করতে গেলে মুক্তিবাহিনী তাদের উপর আক্রমণ চালায়। এ সময় ভারতীয় মিত্র বাহিনী গিয়ে তাদের শান্ত করে। এরপর ২ পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়।

ভারতে এদিন

১৮ ডিসেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সহায়ক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপূর্ব অনুপ্রেরণা, সাড়ে ৭ কোটি বাংলাদেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ মুক্তি সংগ্রাম এবং সেই সংগ্রামের প্রতি ভারতীয় জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের ফলেই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে।' 

এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বাধীন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, 'বাংলাদেশে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ এবং সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গঠনের মূল লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বের সম্পর্ক চিরকাল থাকবে।'

সংবর্ধনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা আমিরুল ইসলাম, কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র মণি সিংহ এবং আব্দুস সামাদ।  

১৮ ডিসেম্বর দিল্লিতে এক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি দাবি করা হয়। সমাবেশে লোকসভার সদস্য ও কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতা হীরেন মুখার্জি বলেন,'বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে হবে। এটি এখন সমগ্র মানব সমাজের দাবি।  সমাবেশে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান বি জি খোবরাগাড়ে বলেন, 'বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি না দিলে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক পাকিস্তানি সেনা ও পাকিস্তানি নাগরিকরা যেন পাকিস্তানে ফেরত যেতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা হোক।' 

পাকিস্তানে এদিন 

১৮ ডিসেম্বর রাওয়ালপিণ্ডিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। এ সময় নুরুল আমীন সংকটের জন্য গত ৩ বছরের নীতিকে দায়ী করেন।

১৮ ডিসেম্বর রাওয়ালপিণ্ডি, করাচি, লাহোর ও পেশোয়ারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পদত্যাগ চেয়ে তীব্র বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা এ সময় ফেস্টুন- প্ল্যাকার্ডসহ বিক্ষোভে পাকিস্তান ভাঙার জন্য ইয়াহিয়া খানকে দায়ী করেন।  পেশোয়ারে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ এদিন প্রাদেশিক সরকার ভবনে বিক্ষোভ করে এবং 'ইয়াহিয়া বেরিয়ে যাও' শ্লোগান দেয়।  

১৮ ডিসেম্বর রাওয়ালপিণ্ডিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের জনৈক মুখপাত্র বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শেষ হয়েছে। সাক্ষীদের জেরাও করা হয়েছে। তবে কখন রায় ঘোষণা করা হবে সে সম্পর্কে আমি জানি না। রায়ের তারিখ খুব দ্রুতও হতে পারে, আবার এ মাসের শেষেও হতে পারে।'

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

১৮ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে পাকিস্তানের ভাবী প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেন, 'বাংলাদেশ বলে কোনো স্থান নেই। আছে পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে আমরা আরও আলোচনা করতে প্রস্তুত। বাংলাদেশকে এখন পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ, আমাদের ওপর এটা চাপিয়ে দেয়া। কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।' 

এ সময় সাংবাদিকরা শেখ মুজিবের মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করলে ভুট্টো কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের উপস্থিতির সুযোগ নিয়েছে ভারত ও বিদ্রোহীরা।'

সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে প্রশ্ন করলে ভুট্টো বলেন, 'আমাকে আগে পাকিস্তানে গিয়ে জনগণের মনোভাব বুঝতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'পাকিস্তান তার শক্তি নিয়ে কথা বলবে। আমাদের অবস্থা দুর্বল নয়। আজ আমরা নৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে জয়ী হওয়ার কারণে বিশ্ববাসী আমাদের পক্ষে। সহ অবস্থানের ভিত্তিতে বাঁচার জন্য চেষ্টা করব। কে জয়ী, আর কে হেরেছে তার ভিত্তিতে নয়।'

১৮ ডিসেম্বর প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলে, 'ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের প্রেক্ষিতে পশ্চিম পাকিস্তানে ক্ষমতার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী ছিল। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে ব্যাপারে পাকিস্তানি বাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো দেশে ফিরছেন।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন ভারতের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তখন পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ইয়াহিয়া খানের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, তা নিয়ে তখন থেকেই গুঞ্জন উঠতে শুরু করে।'

১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে বিখ্যাত ফরাসী বুদ্ধিজীবী ও তাত্ত্বিক আন্দ্রে মালরো বলেন, 'মার্কিন সরকার অযৌক্তিকভাবে ভারতের প্রতি ঘৃণা ছড়াচ্ছে। অথচ মার্কিন সরকারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে ক্রমাগত উসকানি দিয়েছে। মার্কিন সরকার ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেমন পরাজিত হয়েছে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও পরাজিত হয়েছে। তাদের মিত্র পাকিস্তান এখন সুতার উপর ঝুলছে। বাংলাদেশের যৌক্তিকতা এখন বিশ্বজুড়ে। আমি আশা করব, প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশকে দ্রুততম সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে।' 

১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চেয়ে কলাম প্রকাশিত হয়। কলামে বলা হয়, 'বাংলাদেশ যেহেতু মুক্ত হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশের জাতীয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হোক। তিনি ছাড়া এই প্রক্রিয়া সুচারুভাবে সম্পাদিত হবে না। বাংলাদেশের মানুষের একটাই প্রত্যাশা, তাদের নেতা তাদের মধ্যে ফিরে আসুক।'

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী হানাদারমুক্ত হয়। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ হানাদারমুক্ত হলে হানাদার বাহিনী সেখান থেকে পালিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়। এরপর ১৭ ডিসেম্বর সকালে রাজশাহীতে প্রবেশ করে মুক্তিবাহিনী। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে নাটোরে গিয়ে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে তারা। রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে সমাবেত হাজারো মানুষের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন লাল গোলা সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ী হানাদারমুক্ত হয়। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর শহরের বিনোদপুর বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রহরীকে হত্যা করে বিহারীরা। ১৬ ডিসেম্বর বিহারীরা ঘোষণা দেয়,  'পুরো দেশ মুক্তিবাহিনীর আওতায় চলে গেলেও, রাজবাড়ী পাকিস্তানি ভূখণ্ড হয়েই থাকবে।' 

এরপর স্থানীয় মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন জেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজবাড়ীতে নিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার শহিদুন্নবী আলম, ইলিয়াস মিয়া, সিরাজ আহম্মেদ, আবুল হাসেম বাকাউল, কামরুল হাসান লালী, রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বেশ কয়েক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা শহরের চারপাশ ঘিরে ফেলে। জিল্লুল হাকিম, আব্দুল মতিন, নাসিরুল হক সাবু, আব্দুল মালেক, সাচ্চু, আব্দুর রবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের আরও কয়েকটি প্লাটুন রাজবাড়ী বিহারী ক্যাম্পের চারপাশে অবস্থান নেয়। তখন বিহারীরা  রেলওয়ে লোকোশেড থেকে ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি পর্যন্ত রেলের ট্রলি দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে। এরপর বিকেলের দিকে গোলাম মোস্তফা ও আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল মাগুরার শ্রীপুর থেকে মর্টার এনে মর্টার হামলা চালালে ফরিদপুরের দিকে পালাতে শুরু করে বিহারীরা।

১৮ ডিসেম্বর পাবনা হানাদারমুক্ত হয়। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী পাবনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। মুক্তিবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার আত্মসমর্পণের আহ্বান করা হলেও হানাদার বাহিনী প্রাণভয়ে আত্মসমর্পণে রাজি হয়নি। এ সময় তারা পাবনায় ঢোকার সব পথ গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখে। ১৮ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ক্যাপ্টেন নান্দা পাবনায় এলে হানাদাররা তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরে মুক্তিবাহিনী শহরে ঢুকে ডিসি অফিসের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।

 

১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১: ঢাকায় পড়ল প্রশাসনিক দলের পদচিহ্ন

 

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিচয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার চূড়ান্ত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। সেই অনন্য অর্জন অন্যদিকে এই ডিসেম্বর স্বজন হারানোর মাস। ৩০ লাখ প্রাণ ও অসংখ্য নারীর সম্ভ্রম হারানোর বেদনা মিশে আছে এই বিজয়ের ক্ষণে।

জাতির জীবনে আবারো এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। কোটি মানুষের হৃদয়ে এই ডিসেম্বর আসে প্রেরণা, প্রতিজ্ঞার বার্তা নিয়ে। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে পরাজিত করে সুন্দর, সত্যের পথে লড়াইয়ের সঞ্জীবনী শক্তি লুকিয়ে রয়েছে এই ডিসেম্বরে। আজ ১৮ ডিসেম্বর।

চলুন দৃষ্টি ফেরাই ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বরের দিনটিতে।

১৮ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আটজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে পাঠানো হয় ঢাকায়। তাদের লক্ষ্য ছিল বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। সেটাই ছিল বিজয়ের পর মুক্ত ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের প্রথম পদচিহ্ন।

সেদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিত্ব করছিলেন আবুল ফাতেহ। ওই দলে ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে রুহুল কুদ্দুস, বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম মহা পরিদর্শক আবদুল খালেক, সংস্থাপন সচিব এম নুরুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব আনোয়ারুল হক খান, অর্থ সচিব কে এ জামান, বন্দর ও অভ্যন্তরণী নৌ চলাচল পরিচালক কিউ এ বি এম রহমান, এবং বেসামরিক বিমান পরিবহনের পরিচালক উইং কমান্ডার মির্জা।

এ দিনও সারা ঢাকা শহরে কিছুক্ষণ পরপরই গুলির শব্দ শোনা অব্যাহত রয়েছে। বিজয়-আনন্দে মুক্তিযোদ্ধারা আকাশে গুলি ছুঁড়ছে।

প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে প্রেরিত এক খোলা চিঠিতে প্রখ্যাত ফরাসি লেখক ও বুদ্ধিজীবী আন্দ্রে ম্যালর ভারতের প্রতি মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গীর তীব্র সমালোচনা করেন এবং বাংলাদেশের যৌক্তিকতা সমর্থন করেন। উল্লেখ্য, তিন মাস আগে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে সরব হয়েছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে তাঁর লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি কোনো ফাঁকা বুলি ছিল না, তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া দেড়শ অফিসার তার সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত ছিল।

ইন্টার-কন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে চারটি রুশ নির্মিত ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে। এই হোটেলে আশ্রয় নেওয়া প্রাক্তন গর্ভনর ডা. এ. এম. মালিককে মুক্তিযোদ্ধারা ছিনিয়ে নিতে পারে মনে করে এই প্রহরা বসানো হয়েছে।

সানডে টাইমসের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, পাকিস্তানকে অবশ্যই মুজিবকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা বদ্ধ-দুয়ার খুলে দেয়। কিন্তু মূল কাজ শুরু হয় এর পরে।