৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিন। রক্তক্ষয়ী দীর্ঘ যুদ্ধের পর এদিন মুক্ত হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নির্দেশে এদিন ভোর ৫টা থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যুদ্ধবিরতি শুরু করে।

এদিন সকাল ৯টায় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের ডিভিশনাল কমান্ডার মেজর জেনারেল গন্ধর্ভ সিং নাগরার বার্তা নিয়ে তার এডিসি ক্যাপ্টেন হিতেশ মেহতা ও ২ প্যারা ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার ক্যাপ্টেন নির্ভয় শর্মা সাদা পতাকা উড়িয়ে মিরপুর ব্রিজের উত্তরপার থেকে নিয়াজীর হেড কোয়ার্টারের দিকে রওনা দেন।

বার্তায় ইংরেজিতে লেখা ছিল, 'প্রিয় আবদুল্লাহ, আমরা এখন এখানে আছি। আমরা আপনাকে ঘিরে রেখেছি। আপনার খেলা শেষ। আত্মসমর্পণ অথবা ধ্বংস— যে কোনো একটি বেছে নিন। আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনি আত্মসমর্পণ করলে আমরা আপনার সঙ্গে জেনেভা চুক্তি অনুসারে ব্যবহার করব। আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবেও আশ্বস্ত করছি, আপনার জীবনের ভয় নেই। ইতি মেজর জেনারেল জি সি নাগরা।'

পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীর চিঠি নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৩৬ ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ গাবতলী ব্রিজের পাশে জেনারেল জি সি নাগরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  

১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১টার দিকে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব। এরপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের হেডকোয়ার্টারে চলে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট  জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজী, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মেজর  জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ। যৌথবাহিনীর পক্ষে ছিলেন মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব, মেজর জেনারেল গন্ধর্ভ সিং নাগরা ও কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী।

সিদ্ধান্ত হয়, আত্মসমর্পণের দলিলে সই করবেন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার ও যৌথবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজী।

বৈঠকে ঠিক হয়, আত্মসমর্পণ করলেও তখনই অস্ত্র সমর্পণ করবে না পাকিস্তানি বাহিনী। তখন মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব বলেন, ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় যুদ্ধবন্দী থাকবে ঠিক, কিন্তু ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে তারা থাকবে সশস্ত্র।

১৬ ডিসেম্বর কলকাতায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে ডেকে ঢাকায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে থাকার নির্দেশ দেন।

১৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান বিমান ও নৌবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ এবং মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।

এদিন  বিকেল ৪টায় লেফটেন্যান্ট  জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজী রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছালে তাকে ২ পক্ষের সেনারা গার্ড অফ অনার দেয়। এরপর বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে নিয়াজী আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন। আত্মসমর্পণ দলিলে পাকিস্তানি নৌ-পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার রিয়ার-অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শরিফ,  পাকিস্তান বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার এয়ার ভাইস-মার্শাল প্যাট্রিক ডেসমন্ড কালাঘানও সই করেন। আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন এ কে খন্দকার। তিনি এ সময় সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের পক্ষে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় ৪র্থ কোরের কমান্ডার লে. জেনারেল সগত সিং, পূর্বাঞ্চলীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার এয়ার মার্শাল হরি চাঁদ দেওয়ান ও ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটল। 

মুজিবনগরে এদিন

১৬ ডিসেম্বর মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন,  'লাখো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এসেছে আমাদের এই বিজয়। আজকের ঘটনা থেকে পাকিস্তান ও তার মিত্ররা কিছু শিক্ষা নেবে বলে আশা করি। সবাই জানতেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পতন আসন্ন। কিন্তু এই ব্যাপারে কিছু সময় নেওয়া হয়েছে। কারণ, বেসামরিক মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, তাই নীরবে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে এসেছে আমাদের অনুরোধেই। বাংলাদেশের শত্রুদের আমি স্পষ্ট বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ বহু রক্ত ও চোখের জলে চিনতে পেরেছে কে শত্রু ও কে মিত্র।'

এ সময় তাজউদ্দীন আহমদ ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক জগদিৎ সিং অরোরা ও তার অধীনস্থ অফিসার ও সেনাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে তিনি ভারত সরকার, ভারতীয় জনগণ, সোভিয়েত সরকার, পোল্যান্ড ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, 'এসব দেশের সাহায্য না পেলে বাংলাদেশ আজ যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তা সম্ভব হতো না।'  

১৬ ডিসেম্বর মুজিবনগর থেকে পাঠানো এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, 'বাংলাদেশের রাজধানী শিগগির মুজিবনগর থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। পাকিস্তানিদের যেসব দেশদ্রোহী মদদ দিয়েছিল, তাদের বিচারের জন্য বিচার সংস্থা গঠিত হচ্ছে।'

ঢাকা এদিন আনন্দের শহর

আত্মসমর্পণের দলিলে সই হওয়ার পরপরই ঢাকায় উল্লাসে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। এখানে-সেখানে মিছিল আর মিছিল। কেউ নাচছে, কেউ বা জড়িয়ে ধরছে একে অন্যকে। রাস্তার ২ পাশে মানুষের সারি। জয়োল্লাসে ফেটে পড়ছে ঢাকা। মুক্তির জয়োৎসবে আবেগে আপ্লুত হয়ে কাঁদছে অনেকে। খোলা ট্রাক, ভ্যান, জিপে করে দোর্দণ্ড প্রতাপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় যৌথবাহিনীর সদস্যরা। তাদের হাতে চুমু খাচ্ছে মানুষ। কেউ কেউ ভারতীয় বাহিনীর ট্রাকে উঠে পড়েছে। খণ্ড খণ্ড বিজয় মিছিলে মানুষের স্লোগান ছিল 'জয় বাংলা'। বিকেল থেকে সারা রাতব্যাপী ঢাকায় বিজয় উল্লাস চলল। এদিন বাড়িতে বাড়িতে রাতভর আলো জ্বলতে দেখা যায়।

ভারতে এদিন

১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে লোকসভার অধিবেশনে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের বিজয়ের কথা উল্লেখ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

ইন্দিরা গান্ধী বলেন, 'পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করেছে।  ঢাকা এখন মুক্ত দেশের রাজধানী। বাংলাদেশ এখন মুক্ত। এই বিজয়ের মুহূর্তে আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। আমরা অভিনন্দন জানাই মুক্তিবাহিনীর সাহসী তরুণ ও নায়কদের। আমরা আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা তাদের দক্ষতা ও উৎকর্ষতা দেখিয়েছেন।'

এর আগে অধিবেশনের শুরুতে জানা যাচ্ছিল, বিকেল ৪টার পর যে কোনো মুহূর্তে লোকসভার অধিবেশনে এই ঘোষণা দেওয়া হবে। বিকেল ৪টার দিকে আত্মসমর্পণের খবর  না আসায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা হয়। ঠিক হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় অধিবেশন আবার শুরু হয়।

ইন্দিরা গান্ধী পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই হাততালিতে মুখরিত হয়ে পড়ে লোকসভার অধিবেশন। তিনি ঘোষণা দেওয়া মাত্রই টেবিল চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেন লোকসভার সদস্যরা। 

১৬ ডিসেম্বর কলকাতায় আত্মসমর্পণের খবর পৌঁছলে জনগণ রাস্তায় নেমে উল্লাস করে। এর মধ্য দিয়ে কলকাতার ব্ল্যাক আউটের অবসান হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ রেডিওতে আত্মসমর্পণের ঘোষণা হলে কলকাতার পথেঘাটে একে একে আলো জ্বলতে শুরু করে। বিভিন্ন জায়গায় উল্লসিত মানুষ মিছিল শুরু করে। কোথাও আবির মেখে চলছিল হোলি খেলা। 

১৬ ডিসেম্বর পিটিআই সূত্রে জানা যায়, দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে আটক বাঙালি গোয়েন্দা কর্মকর্তা হোসেন আলী তার স্ত্রী ও শিশুপুত্রসহ দূতাবাসের পাঁচিল টপকে পালিয়ে গেছেন।

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের চোখে খরচের খাতায়। বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি যেন পশ্চিম পাকিস্তানে না ঘটে, সেজন্য নিক্সন প্রশাসন সচেষ্ট হয়ে উঠছে।

এদিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, 'এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় রাশিয়া ও ভারতকে সংযত হতে হবে।' 

এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রেস সচিব রোনাল্ড এল জাইপলার সাংবাদিকদের বলেন, 'ভারত যেন এবার নিজেদের সংযত করে। পশ্চিম পাকিস্তান দখল হবে বলে আমরা আশা করি না।'  তবে তিনি বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌ বহর পাঠানোর পরিকল্পনা ও ফেরত নেওয়া প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি।  

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সংবাদমাধ্যম তাস বাংলাদেশের স্বীকৃতির খবর প্রচার করতে শুরু করে। এদিন তাসে প্রচারিত সংবাদে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট নেতাদের অভিমত প্রচার করা হয়।

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

১৬ ডিসেম্বর খুলনায় মিত্র বাহিনীর একটি ইউনিট ইস্টার্ন জুট মিল গেট এলাকা দিয়ে ভৈরব নদ পার হয়ে শিরোমণির ঠিক পূর্বপাশে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের লক্ষ্য করে গোলা ছুড়তে থাকে। এ সময় মেজর মঞ্জুর তার বাহিনী নিয়ে হানাদার বাহিনীকে শিরোমণিতে ঘিরে ফেলেন।

পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও হানাদার ব্রিগেডিয়ার  হায়াত খান তা না মেনে নিজের বাহিনীসহ যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডো দলের প্রবল প্রতিরোধের মুখেও ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বে ট্যাংক রেজিমেন্ট এবং ৪  হাজার সেনা সামনে এগিয়ে যায়। মেজর মঞ্জুর রাতের অন্ধকারে খালি পায়ে মাথায় গামছা বেঁধে শ্রমিকের বেশে ২ হাতে ২টা স্টেনগান নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতিটি ট্যাংকের ভিতরে খুঁজে খুঁজে গানম্যানদের হত্যা করেন। এদিন সারারাত যুদ্ধ চলমান থাকে।

 

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: কেমন ছিল ঢাকা

 
 

সেদিন সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। পৃথিবীর বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম তখন সময়ের ব্যাপার। সূর্য প্রায় ডুবি-ডুবি। পূর্ব বাংলার যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর ঢাকা তখন থমথমে। শহরের আশেপাশে কোথাও থেমে-থেমে যুদ্ধও চলছিল, এমনকি শহরের প্রাণকেন্দ্রেও চলছিল বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ। এমন পরিবেশের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫টা ২৫ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ‘ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। এরপরই মুক্তিযোদ্ধারা শহরের পথে-পথে আকাশে রাইফেলের ফাঁকা গুলিতে প্রকম্পিত করে স্লোগান তোলেন—‘জয় বাংলা’। সন্ধ্যার পর থেকেই থমথমে ঢাকা তখন বিজয় উৎসবের নগরী। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিবাদে বেরিয়ে আসে পথে। রাতভর আলো জ্বলে নির্ঘুম ঢাকা নগরীর ঘরে-ঘরে।

বিজয়ের পর রাজধানিী ঢাকা, ছবি: ইন্ডিয়ান হিস্টোরি পিকস/ টুইটার বিজয়ের পর রাজধানিী ঢাকা, ছবি: ইন্ডিয়ান হিস্টোরি পিকস/ টুইটারকেমন ছিল ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার চিত্র? প্রত্যক্ষদর্শী তিন জন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপে, আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা গ্রন্থে পাওয়া যায় এর নানা বিবরণ। তাদের ভাষ্যে এসেছে, সেদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সড়কে তরুণ-যুবা আর উৎসুক মানুষের ভিড় লেগে ছিল। সকাল সাড়ে ১০টার পর সাভার-মিরপুর সড়ক দিয়ে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বিপুল করতালি, আর জয়বাংলা জয়োচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। পথে-পথে মুক্তিকামী মানুষ মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর বিজয় উদযাপনের প্রধান সঙ্গী। একদিকে পারস্পরিক জয়োচ্ছ্বাস, অপরদিকে হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করানোর প্রস্তুতি।

যৌথ বাহিনীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আত্মসমর্পণের দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ইস্টার্ন আর্মির চিফ অব স্টাফ লে. জে. জে এফ আর জেকব। ভারত থেকে যশোরে হেলিকপ্টার পরিবর্তন করে ঢাকা এয়ারফিল্ডে আসেন। সেখান থেকে তিনি, ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকী, কর্নেল এম এস খারা নিয়াজির হেডকোয়ার্টার্সের উদ্দেশে রওনা দেন। তারা দুপুর একটা নাগাদ পাকিস্তানি আর্মির হেডকোয়ার্টারে পৌঁছান। এরপর আত্মসমর্পণের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম গোছাতে শুরু করেন জেকব।

আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন যৌথ বাহিনীর প্রধান অরোরা ও পরাজিত বাহিনীর প্রধান নিয়াজি, ছবি: অমি রহমান পিয়ালের সৌজন্যে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন যৌথ বাহিনীর প্রধান অরোরা ও পরাজিত বাহিনীর প্রধান নিয়াজি, ছবি: অমি রহমান পিয়ালের সৌজন্যে‘আমি নিয়াজির অফিসে ফিরে এলে কর্নেল খারা আত্মসমপর্ণের শর্তাবলি পাঠ করে শোনান। নিয়াজির চোখ থেকে দরদর করে পানি পড়তে থাকে, সেই সঙ্গে ঘরে নেমে আসে পিনপতন নিস্তব্ধতা।’ জে এফ আর জেকব তার ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা’ গ্রন্থে  লিখেছেন এভাবেই।

হানাদার বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান নিয়াজির হেডকোয়ার্টার্সে পিনপতন নীরবতা থাকলেও বাইরের পরিবেশ ছিল তার উল্টো। ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ঢুকছেন শহরে, পথে-পথে মানুষের ভিড় আর আনন্দ উল্লাস। একইসঙ্গে প্রতীক্ষা আত্মসমর্পণেরও।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ফেরেন। ৫০ বছর আগে ঢাকা শহরের বিজয়ের  সেই দৃশ্য এখনও তার স্মৃতিতে সজীব। তিনি বলছিলেন, ‘আমি যুদ্ধশেষে ১৬ ডিসেম্বরই ঢাকায় ফিরে আসি। শহরে ঢুকেই সবার মধ্যে আনন্দ, মিছিল আর উৎসব দেখি। পুরো ঢাকায় মিছিল হচ্ছে, মিটিং হচ্ছে। স্লোগান হচ্ছে। যার-যার সামর্থ্য অনুযায়ী আনন্দ উদযাপন করছে।’

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথ, ছবি: অমি রহমান পিয়ালের সৌজন্যে১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথ, ছবি: অমি রহমান পিয়ালের সৌজন্যেডিসেম্বরের শুরু থেকে ঢাকার ইস্কাটনে আত্মগোপনে ছিলেন রাজনীতিক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। ১৬ ডিসেম্বর সকালেই আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউনকে টুকু বলেন, ‘পাকিস্তানিরা গুটিয়ে যাচ্ছে, রাস্তা খালি হয়ে যাচ্ছে, আর আমাদের বাঙালি সাধারণ মানুষও রাস্তায় উঁকিঝুঁকি করছে। চারদিকে থমথমে ভাব, আমার যতদূর মনে পড়ে কারফিউ দিয়েছিল ওরা। তারপর যখন ঘোষণা হলো— রেসকোর্সে আত্মসমর্পণ হবে, তখন মানুষ একবারে স্রোতের মতো বের হয়ে আসছে।’

রণাঙ্গণের খবরাখবর নিয়ে ‘পূর্ববাংলা’ নামে একটি পত্রিকা বের করতেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা  ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মাহফুজ উল্লাহ (প্রয়াত সাংবাদিক)। তখনকার পরিবেশের কথা উল্লেখ করে ইকবাল হাসান বলেন, ‘আত্মগোপন থেকে বের হয়ে দেখি— মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকতেছে যারা ফিল্ডে ছিল। যারা ঢুকছে— কৃষক, সাধারণ মানুষের সন্তানদেরই দেখলাম। যুদ্ধে কৃষক শ্রমিক এরাই ছিল বেশি।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান তার ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ১০.৪০ মিনিটে মিত্র বাহিনী ঢাকা প্রবেশ করে।

মোহাম্মদ হান্নান রচিত ‘ঢাকার রাজনৈতিক ইতিহাস’ গ্রন্থের তথ্য, ‘১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় মেজর জেনারেল নাগরার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী সাভার-মিরপুর সড়ক দিয়ে বিপুল করতালি ও মুহুর্মুহু জয় বাংলা ধ্বনির মধ্য দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। জেনারেল নাগরার সঙ্গে ছিল মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপ-দল। এর আগে সকাল ৮.৩০ মিনিটে জেনারেল নাগরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় নায়ক জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির কাছে একটি চিঠি পাঠান। এতে দ্রুত পাকিস্তানি বাহিনীকে ঢাকায় আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।’

বিজয়ের পর ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে বাঙালিদের উল্লাস: ছবি: ইন্ডিয়ান হিস্টোরি পিকস/ টুইটার বিজয়ের পর ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে বাঙালিদের উল্লাস: ছবি: ইন্ডিয়ান হিস্টোরি পিকস/ টুইটার‘আমরা দুপুর ১২-১টার মতোন, রেসকোর্সের দিকে গেছি। পরিবেশ তখন খারাপই ছিল। কিন্তু সবার মধ্যে একটা খুশি-খুশি ভাব ছিল।’ স্মৃতি হাতড়িয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমেদ, তখন বয়সে তিনি কিশোর।

গেরিলা যোদ্ধা ইকবাল হাসান মাহমুদের মন্তব্য, ‘তখনকার অনুভূতিটা ভাষায় বলা যায় না। উই আর সো এক্সাইটেড।  ষাটের দশক থেকে আন্দোলন করতে করতে করতে মুক্তিযুদ্ধ।’

সেদিন ক্যান্টনমেন্টের দিকে ফেরার সময় পাকিস্তানি একাধিক আর্মি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে উপস্থিত জনতার ওপরে গুলি ছোঁড়ে। ইকবাল হাসানের ভাষ্য, ‘পাকিস্তানি বাহিনীর একজন গুলি করা শুরু করে দিলো। ওর কাছে লুকানো ছিল বোধহয়। তারপর ইন্ডিয়ান সৈনিকরা তিন-চার জনকে গুলি করে মেরে ফেললো, আর আমাদের সিভিলিয়ান দু’জন মারা গেলো।’

‘আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ও বিশ্ব মিডিয়ার উপস্থিতির কারণে শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের দিকে মুক্তিবাহিনীর অনেকের আগ্রহ ছিল। ছবি উঠলে বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশ হবে, এই আগ্রহে অনেকেই হোটেলে যাতায়াত করে।’ উল্লেখ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ।

পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ, কামাল হোসেন রচিত ‘বাংলাদেশ: স্বাধীনতা ও ন্যায়ের সন্ধানে’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া ছবিটি তুলেছেন স্মিতা প্রকাশপাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ, কামাল হোসেন রচিত ‘বাংলাদেশ: স্বাধীনতা ও ন্যায়ের সন্ধানে’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া ছবিটি তুলেছেন স্মিতা প্রকাশ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা’ গ্রন্থে জে এফ আর জেকব আত্মসমর্পণ প্রসঙ্গে লিখছেন, ‘গার্ড অব অনার পরিদর্শনের পর অরোরা ও নিয়াজি টেবিলের দিকে এগিয়ে যান। অরোরার নিয়ে আসা আত্মসমর্পণের দলিল টেবিলের ওপরে রাখা হয়। নিয়াজি সেটার ওপরে কৌতূহলী চোখ বুলিয়ে নিয়ে সই করেন। অরোরাও সই করেন। ... ঘড়ির দিকে চোখ (ভারতীয় সময়) ফেলে দেখি, সময় বিকাল চারটা ৫৫ মিনিট। এরপর নিয়াজি তার কাঁধ থেকে অ্যাপলেট  (সেনা ধিনায়কদের সম্মানসূচক ব্যাজ) খুলে ফেলেন এবং ল্যানিয়াড  (ছোট দড়ি বিশেষ) সহ পয়েন্ট ৩৮ রিভলভার অরোরার হাতে ন্যস্ত করেন। তার চোখে অশ্রু দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত জনতা তখন নিয়াজিবিরোধী ও পাকিস্তানবিরোধী স্লোগান ও গালিগালাজ দিতে থাকে।’

‘সারেন্ডার-করণের পর তো চিল্লাচিল্লি হইছে, হৈ-হৈ হইছে, কতকি।’ তখনকার পরিবেশ সম্পর্কে বলেন পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকার বাসিন্দা রফিক আহমেদ। তিনি এও বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে তো আমরা জাইনা-ই গেছি, দেশ স্বাধীন হইতাছে। কিন্তু ঝামেলা তখনও আশপাশ ধরে চলতাছিল। ইংলিশ রোডে মারামারি হইতাছে। নয়াবাজারে তখন আগুন জ্বলতাছে। সন্ধ্যার পর পাড়া থেইকা ছোট-ছোট মিছিল হইছে। উপ্রের দিকে গোলাগুলি হইছে।’

১৯৭১ সালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ছবি: শাহ্জামান মজুমদারের প্রকাশিতব্য  ‘এক কিশোরের মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থের সৌজন্যে১৯৭১ সালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ছবি: শাহ্জামান মজুমদারের প্রকাশিতব্য ‘এক কিশোরের মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থের সৌজন্যেআওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৎকালীন ছাত্রনেতা মুকুল বোসের ভাষ্য,  ‘ঢাকার সারা শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের গানগুলো বাজছে।  শহরজুড়ে আনন্দ আর আনন্দ। কেউ-কেউ মিষ্টিও দিচ্ছে ঘরে-ঘরে।’

‘একদিকে যেমন বিজয়ের উল্লাস, অপরদিকে সুযোগসন্ধানীদের অরাজকতাও ছিল’, বলছিলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আগের ক’দিন কারফিউ থাকলেও বিজয়ের পর ল অ্যান্ড অর্ডার তো নেই। সুযোগসন্ধানীরা যে যার মতো লুটপাট করেছে, বাড়িঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।’

 

 

 

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ, ১৯ ডিসেম্বর অস্ত্রসমর্পণ

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ : আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি। পাশে বসা মিত্রবাহিনীর লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। ছবি: সংগৃহীত

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ : আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি। পাশে বসা মিত্রবাহিনীর লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের আগে-পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মূল দুশ্চিন্তা ছিল নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে। তারা শঙ্কিত ছিল, নয় মাসের গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের কারণে ক্রুদ্ধ মুক্তিবাহিনী আর জনতা তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারে।

১৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের হেডকোয়ার্টারে মিত্রবাহিনীর মেজর জেনারেল জ্যাকব আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়াজির মধ্যে আত্মসমর্পণ চুক্তি নিয়ে যখন দর কষাকষি চলছে, তখন পাকিস্তানি বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল আলোচনার একটা বড় বিষয়। ঢাকায় তখন পাকিস্তানি সৈন্য আর নানা রকম আধাসামরিক বাহিনীর লোকজন মিলিয়ে ৯৪ হাজার সদস্য আটকা পড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব তাঁর স্যারেন্ডার অ্যাট ঢাকা: বার্থ অব আ নেশন বইয়ে লিখেছেন, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়া