৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

দৈনিক যুগান্তরে 'ঢাকায় যখন বোমা পড়ছিল তখন সকলের কি উল্লাস' শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর। প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ঢাকা থেকে কলকাতা প্রত্যাগত এক ফরাসী নারীর ভাষ্যে বাংলাদেশের অবস্থা উঠে আসে। ঢাকা থেকে বিশেষ উড়োজাহাজে ওইদিন যেসব বিদেশি নাগরিক কলকাতায় আসেন, এই ফরাসী নারী তাদেরই একজন।

দৈনিক যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক সুবোধ বসুকে তিনি বলেন, 'আমি ২ বছর যাবৎ ঢাকায় আছি। আমি ৭ দিনের মধ্যেই ঢাকা ফিরে যাবো। দুঃখিত ঢাকায় নয়, স্বাধীন বাংলাদেশে যাবো। আমি ঢাকাকে ভালোবাসি। আমি বাঙালিদের ভালোবাসি। কদিন ধরে ঢাকার এক বাঙালি পরিবারে সঙ্গে এয়ারপোর্টের কাছেই এক বাড়িতে আমি ছিলাম। তারাই আমাকে আদর যত্নে রেখেছিলেন।'

তিনি আরও বলেন, 'পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা সব পালিয়েছে। পাক বাহিনী বেসামরিক মানুষের ওপর অত্যাচার করছে না। তবে অবাঙালিরা খুবই জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার যুদ্ধে পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। হয় আত্মহত্যা, না হয় আত্মসমর্পণই করতে হবে।'

দিল্লির রামলীলা ময়দানে দেওয়া এক বিশাল জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এ দিন বলেন, 'ভারত নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পাকিস্তানের দুর্দশার জন্য দায়ী। কমিউনিজম ঠেকানোর নামে সামরিক সাহায্য দিয়ে এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধে ইন্ধন জুগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পাকিস্তানের গোরস্থান রচনার পথ প্রশস্ত করেছে। কারণ এই সামরিক সাহায্যই পাকিস্তানের জঙ্গি শাসকদের উদ্ধত এবং আপন জনগণের প্রতি উদাসীন করে তুলেছে। এই সামরিক সাহায্যের দরুন তারা মনে করে নিয়েছে বুলেটের জোরেই তারা জনগণের গণতান্ত্রিক ভাবনাকে চিরদিন দমিয়ে রাখতে পারবে!'

বক্তব্যে একই সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী পাক-ভারত যুদ্ধের জেরে পশ্চিমা রাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের যেসব সামরিক চুক্তি আছে সেগুলো কার্যকর বন্ধ করতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের সঙ্গে ভারতের কোনো বৈরী মনোভাব নেই উল্লেখ করে বলেন, 'ভারত কখনোই পাকিস্তানের জনগণকে বৈরী বলে মনে করে না। বস্তুতপক্ষে পাকিস্তানের জনগণের প্রতি ভারত অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। তার কারণ, পাকিস্তানের জনগণ বারবার একটি মুষ্টিমেয় চক্রের দ্বারা শোষিত হয়ে আসছে।'

ঢাকায় এ দিন

১২ ডিসেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আলবদরের কমান্ডার কামারুজ্জামান ও আলশামসের কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আলবদরের  প্রধান নির্বাহী আশরাফুজ্জামান খান, অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীনসহ ২ বাহিনীর শীর্ষ অধিনায়কদের ডেকে পাঠান। এরপর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে তাদেরকে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা দেওয়া হয়।

১২ ডিসেম্বর পুরাণ ঢাকার কলতাবাজারে আলবদরের প্রধান নির্বাহী আশরাফুজ্জামান খান এবং অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের নির্দেশে আলবদরের বেশ কয়েকজন তরুণ পিপিআইর জেনারেল ম্যানেজার ও বিবিসির প্রতিবেদক নিজামউদ্দিন আহমেদকে তার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজী বলেন, 'একটি প্রাণ অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত আমরা পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমির জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। পাকিস্তানের মাটি পাকিস্তানেরই থাকবে।'

ভারতে এ দিন

১২ ডিসেম্বর কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস কমিটির আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে  বাংলাদেশ দিবস পালিত হয়। কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় ফেস্টুন ও বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে জয় বাংলা স্লোগান ধ্বনিত হয়। উত্তর কলকাতায় শ্যাম স্কয়ারে কংগ্রেসের আয়োজনে একটি শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। এই শোভাযাত্রা বিধান সরণী, অরবিন্দ সরণী, বি কে এভিনিউ, নিমতলা ঘাট স্ট্রীট আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র সড়ক হয়ে কংগ্রেসের অফিসের সামনে এসে শেষ হয়।

অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতাতেও রাজ্য কংগ্রেসের আহ্বানে একটি শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের কার্যালয় থেকে বের হওয়া এই শোভাযাত্রা কালীঘাট সড়ক, সদানন্দ সড়ক, প্রভাপাদিত্য সড়ক, এসপি মুখার্জি-হাজরা রোড, শরৎ বসু রোড, মনোহরপুকুর রোড হয়ে পুনরায় ঘুরে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

একই দিন কলকাতার গীতা মন্দির স্কুল প্রাঙ্গণে ৪৮-৪৯ ব্লক কংগ্রেসের আয়োজনে একটি জনসভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের আইনজীবী ও এমএলএ সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে মার্কিন সপ্তম নৌবহর এগিয়ে আসার তথ্য অস্বীকার করে বলেন, 'আমরা এ রকম কোনো সংবাদ এখনো পর্যন্ত শুনিনি।'

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরোধিতা ও ভারতকে জড়িয়ে রেডিও পিকিংয়ের দেওয়া বক্তব্যের বিরোধিতা করে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্ত বলেন, 'চীনের ২টি বক্তব্যই ইতিহাসের দিক থেকে ভুল। ভারত কখনোই বাংলাদেশকে নিজেদের আয়ত্তে আনতে চায়নি, বরং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যই কাজ করছে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম তাদের সাধারণ মানুষের ইচ্ছেরই প্রতিফলন।'

পাকিস্তানে এ দিন

১২ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে সাংবাদিকদের দেওয়া নানা প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন বলেন, 'ভারতকে অবশ্যই পাকিস্তান ছাড়তে হবে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাতৃভূমি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষই পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখবে। কোনো শক্তি নেই যে পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারে। আমরা পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্যই সংগ্রামে জড়িয়েছি।'

আন্তর্জাতিক মহলে এ দিন

১২ ডিসেম্বর চীনের রাষ্ট্রীয় বেতার রেডিও পিকিং থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়, 'সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের মাধ্যমে পাকিস্তান আক্রমণ করে মূলত চীনকেই দমন করতে চায়। বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার ভারতের মাধ্যমে তথাকথিত বাংলাদেশ সমর্থনের অন্যতম কারণ। পূর্ব পাকিস্তানকে নিজেদের অধীনে রাখাই ভারতের একমাত্র লক্ষ্য। মূলত পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান বিরোধিতার আন্দোলন ভারত সরকারের উসকানিতেই সৃষ্টি।'

প্রভাবশালী মার্কিন সিনেটর ম্যাকগভর্ন বলেন, 'ভারত বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঠিক কাজই করেছে। পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যা বন্ধ করার জন্যই তারা সেখানে প্রবেশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ভারতকে দায়ী করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভুল।'

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

১২ ডিসেম্বর ভোরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে চতুর্থ বেঙ্গলের মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হলে নাজিরহাট নদীর পাড়ে ২৪তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ৩টি কোম্পানি ও বেশ কিছু সংখ্যক ইপিসিএএফসহ হানাদার সৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার পথে বাধা দেয়।

দিনাজপুরে ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার রশীদের দল ভারতীয় বাহিনীসহ খানসামা আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ভারতীয় বাহিনীর ১৫ জন ও ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভারতীয় মিত্র বাহিনী এ সময় পাকিস্তানি হানাদার মেজর খুরশীদসহ ১৯ জন সৈন্যকে আটক করে। এরপর মুক্তিবাহিনী নীলফামারীর দিকে এগিয়ে যায়।

দিনাজপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পিছু হটার এক পর্যায়ে বিরল থানার বহলা গ্রামে কাঞ্চন ক্যাম্পের হানাদার সেনারা গ্রামবাসীকে মাইকযোগে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দেয়। সেখানে মাগরিবের আজানের সময় অনেকে নামাজের কাতারে দাঁড়িয়ে গেলে হানাদারেরা নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর ব্রাশফায়ার করে। এ গণহত্যায় শহীদ হন নিরীহ ৩৭ জন মানুষ।

এ দিন নরসিংদী পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। সকাল ৮টায় ভারতীয় ৪ গার্ড রেজিমেন্টসহ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নরসিংদী ছেড়ে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী।

ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী বগুড়া দখলের জন্য আসবে এমন তথ্য জেনে পাকিস্তানি বাহিনী বগুড়া শহরের এতিমখানায় অবস্থান নেয়। এ সময় গাইবান্ধায় থাকা মিত্রবাহিনীর ওপর পাকিস্তানি হানাদারেরা গোলাবর্ষণ শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী এ সময় পাল্টা গোলাবর্ষণ চালালে হানাদার সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন সৈন্যকে গ্রামবাসীরা গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে।

কুমিল্লায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর ১১ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত চলা যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার সৈন্যদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে এ দিন ভোরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ হানাদার সৈন্য ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এতে করে চান্দিনা হানাদার মুক্ত হয়।

গাইবান্ধায় ৫ নম্বর সেক্টর কমান্ডার লেফট্যানেন্ট কর্নেল মীর শওকত আলী গোবিন্দগঞ্জ দখল করার পর হানাদার সেনারা গোবিন্দগঞ্জ ছেড়ে নদী পেরিয়ে লামাকাজীতে শক্ত প্রতিরক্ষা বুহ্য গড়ে তুলেছিল। এই বুহ্য ভেদ করতে কর্নেল শওকত মিত্রবাহিনীর জেনারেল গিলের কাছে বিমান হামলার সাহায্য চান। এরপর ভারতীয় ৪টি মিগ বিমান লামাকাজীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর বোমাবর্ষণ করে।

সিলেটের গোয়ানঘাটে ক্যাপ্টেন আব্দুর রবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সুরমা নদী পার হয় এবং পিছন দিক থেকে হরিপুরে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে।

সিরাজগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশ দল একত্রে সিরাজগঞ্জ শহরের উত্তরে শৈলাবাড়ি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে। এ সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

 

১২ ডিসেম্বর ১৯৭১: রাতে টাঙ্গাইলের উপর আক্রমণ চালায় মিত্রবাহিনী

 

রাতে টাঙ্গাইলের উপর আক্রমণ চালায় মিত্রবাহিনী। ছবি সংগৃহীত

রাতে টাঙ্গাইলের উপর আক্রমণ চালায় মিত্রবাহিনী। ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিচয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার চূড়ান্ত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। সেই অনন্য অর্জন অন্যদিকে এই ডিসেম্বর স্বজন হারানোর মাস। ৩০ লাখ প্রাণ ও অসংখ্য নারীর সম্ভ্রম হারানোর বেদনা মিশে আছে এই বিজয়ের ক্ষণে।

জাতির জীবনে আবারো এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। কোটি মানুষের হৃদয়ে এই ডিসেম্বর আসে প্রেরণা, প্রতিজ্ঞার বার্তা নিয়ে। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে পরাজিত করে সুন্দর, সত্যের পথে লড়াইয়ের সঞ্জীবনী শক্তি লুকিয়ে রয়েছে এই ডিসেম্বরে। আজ ১২ ডিসেম্বর। 

১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর দিনটি ছিল রবিবার। এই দিন ঢাকা সেনানিবাসে নিরাপদ আশ্রয়ে বসে জেনারেল নিয়াজী বলেন, একটি প্রাণ জীবিত থাকা পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গার জন্য আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবো।

রাতে প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আলবদর ও আলশামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের ডেকে পাঠান সদর দফতরে। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় গোপন শলা-পরামর্শ। এই বৈঠকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। ফারমান আলী তাদের হাতে তুলে দেন বুদ্ধিজীবীসহ বিশেষ বিশেষ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা।

জামালপুর থেকে পালিয়ে আসা কিছু শত্রুসৈন্য ও ময়মনসিংহ থেকে বিতারিত শত্রুরা টাঙ্গাইলে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছত্রীসেনা নামিয়ে দেয়। রাতে টাঙ্গাইলের উপর আক্রমণ চালায় মিত্রবাহিনী। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাদেরিয়া বাহিনী। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।

নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ভারতকে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে বলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাতৃভূমি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি ঘোষণা করেন, কোনো শক্তি নেই পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারে।

রেডিও পিকিং ঘোষণা করে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের মাধ্যমে পাকিস্তান আক্রমণ করে মূলত চীনকেই দমন করতে চায়। বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার ভারতের মাধ্যমে তথাকথিত ‘বাংলাদেশ’ সমর্থনের অন্যতম কারণ।
এপিআই-এর জেনারেল ম্যানেজার সাংবাদিক নিজামউদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। ওরা যখন বাসায় হানা দেয় তখন তিনি বিবিসির জন্য সংবাদ লিখে খেতে বসেছিলেন। ঐ অবস্থায় ধরে নিয়ে আলবদররা তাকে হত্যা করে।