৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১৬ নভেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর দিল্লিতে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী দলের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, 'দু এক মাস কিংবা তারও আগে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা যায়। তবে আমরা সর্বত্র চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের শরণার্থীরা শিগগির তাদের স্বদেশে ফিরে যাবে।'

এদিন বোম্বেতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতে সফররত ব্রিটিশ বৈদেশিক উন্নয়নমন্ত্রী রিচার্ড উড বলেন, 'ব্রিটিশ সরকার আন্তরিকভাবে চায় শিগগিরই যেন এই উত্তেজনার নিরসন হয়। ব্রিটিশ সরকার সবসময়ই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে বিশ্বাসী। এখনো আলোচনার পথ খোলা আছে। যুদ্ধে জড়ানো কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। এতে করে সমস্যা আরও বাড়বে। প্রয়োজনে এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সমাধানের জন্য জাতিসংঘেও আলোচনা হতে পারে। আলোচনার দ্বার সর্বত্র উন্মুখ আছে। কেবল স্ব স্ব দেশের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।'

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

১৬ নভেম্বর ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব সুলতান মহম্মদ খান। এসময় দুজনের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।

উইলিয়াম রজার্সের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে সুলতান মহম্মদ খান বলেন, 'ভারত যদি মনে করে পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে জয়ী হতে পারবে তবে সম্পূর্ণ কল্পনাবিলাসে মত্ত। পাকিস্তান এর চরম জবাব দিতে বাধ্য হবে।'

পৈশাচিক নির্যাতনের পর ডা. আজহারুল ও হুমায়ুন কবীরকে হত্যা

মুক্তিযুদ্ধের এই দিন সকালে নটরডেম কলেজের সামনে একটি কালভার্টের নিচে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী শল্য চিকিৎসক ডা. আজহারুল হক ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হুমায়ুন কবীরের মরদেহ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় নির্যাতনের পর তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি ডা. আজহারুল হক বিকেলে ধানমণ্ডির হাতিরপুরের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসার কাছে সাইদা ফার্মেসিতে চেম্বারে রোগী দেখতেন। আগের দিন ১৫ নভেম্বর সকালে বাসা থেকে ডা. আজহারুল হক ও হুমায়ুন কবীরকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী।

প্রতিরোধ যুদ্ধ

১৬ নভেম্বর সুনামগঞ্জে টেকেরহাট সাব-সেক্টরে দুর্ধর্ষ দাস বাহিনীর কমান্ডার জগতজ্যোতি দাসকে ধরতে ফাঁদ পাতে রাজাকারদের একটি দল। এদিন দাস পার্টির কমান্ডার জগৎজ্যোতি দাস ৪২ জনের একটি দল নিয়ে অবস্থান করছিলেন আজমিরীগঞ্জের বদলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণে কৈয়ার বিলে। এদিন সকালে হানাদার বাহিনীর আকস্মিক হামলায় প্রতিরক্ষাব্যুহ রচনা করে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিল জগতজ্যোতির নেতৃত্বে দাশ পার্টির একটি দল। কিন্তু অস্ত্র ও গোলাবারুদের স্বল্পতায় পড়ে দাসপার্টির মুক্তিযোদ্ধারা। এক পর্যায়ে হানাদারদের প্রবল হামলার মুখে দাশ পার্টির মুক্তিযোদ্ধা উপেন্দ্রম শহীদ হন। এসময় জগৎজ্যোতি নিজে এগিয়ে এসে গুলি করতে করতে বাকিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে হানাদারদের একটি গুলি তাঁর চোখ ভেদ করে ঢুকলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরদিন হানাদারেরা আজমিরীগঞ্জ বাজারে নিয়ে গরুর হাটে তাকে জনসম্মুখে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। পরে তার লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় পাশের কুশিয়ারা নদীতে।

১৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পূর্বদেবপুর বিওপির উপর আক্রমণ চালায়। প্রায় ১ ঘণ্টা ব্যাপী চলা এই যুদ্ধে হানাদার সেনা নিহত হয়। এরপরে ৭ রাজাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে। এসময় বিপুল প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ গেরিলাদের দখলে আসে।

১৬ নভেম্বর জামালপুরের বক্সিগঞ্জের ধানুয়া কামালপুরে মুক্তিবাহিনীর একটি দলের হামলায় হানাদার বাহিনীর ১২ সৈন্য নিহত হয়।

১৬ নভেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। এসময় ৬ হানাদার সেনা নিহত হয় এবং ৪ জন সৈন্য আহত হয়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।