৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১১ নভেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

পাকিস্তান সেনাবাহিনী কুমিল্লা সীমান্তের কাছে বেতিয়ারা এলাকায় ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য এবং ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যদের নিয়ে সমবেত মিত্র বাহিনীর একটি দলকে আক্রমণ করে। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে। যুদ্ধে নিজামউদ্দিন আজাদ ও সিরাজুম মুনীরসহ নয়জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন।


কুমিল্লার কামালপুর পাকিস্তানি ঘাঁটিতে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে মুক্তিবাহিনী। পাঁচ পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং 12 জন আহত হয়। একটি পৃথক অভিযানে, মুক্তিবাহিনী চাওরা এলাকায় একটি অতর্কিত হামলায় দুই পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করে।


বিকেলে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মার্কেটের কাছে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত ও ৫৫ জন আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে একজন গেরিলাকে আটক করে।


মুক্তিবাহিনী 8 নং সেক্টরে নাস্তি-গুগরি হাইওয়েতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। মাইন হামলায় 10 সেনা সদস্য এবং একজন রাজাকার নিহত হয়।


বিকেল ৩:৫০ টার দিকে বেলুনিয়া ও পরশুরাম এলাকায় তিনটি জেট তাদের ঘাঁটি আক্রমণ করার চেষ্টা করলে মুক্তিবাহিনী একটি লাইট মেশিনগান দিয়ে একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করে।


বোহনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন, ভারত পূর্ব বাংলায় জনগণের পছন্দ অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক সমাধান দেখতে চায়।


সিএমএলএ জেনারেল ইয়াহিয়া খান মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আদেশ দেন।
ঢাকার সামরিক প্রশাসন প্রদেশের সব বেসামরিক এলাকায় পরিখা খননের নির্দেশ দিয়েছে।


পাকিস্তানি প্রতিনিধিদের একটি দল বাড়তি সহায়তা পেতে চীনে যায়। বিবিসির বিশেষ সংবাদদাতা ডেভিড ক্লার্ক রিপোর্ট করেছেন, তারা পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান এবং আধুনিক যুদ্ধ অস্ত্রাগার দিয়ে সাহায্য করার জন্য চীনকে অনুরোধ করেছে। বৈঠক অব্যাহত থাকায় চীনা অস্ত্র পাকিস্তানের পথে রয়েছে, যোগ করেন তিনি।

 

১১ নভেম্বর ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীরা কামালপুর পাকসেনাদের ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়

 

মুক্তিবাহিনীরা কামালপুর পাকসেনাদের ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। ফাইল ছবি

মুক্তিবাহিনীরা কামালপুর পাকসেনাদের ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এই দিন ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ বাহিনীর একদল গেরিলা যোদ্ধা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের পথে কুমিল্লার অদূরে বেতিয়ারা নামক স্থানে পাকসেনাদের দ্বারা আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হন।

গেরিলা যোদ্ধারা চরম বিপদের মুখে বীরত্বের সঙ্গে পাকসেনাদের প্রতিহত করে। এই যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজামইদ্দিন আজাদ ও সিরাজুম মুনিরসহ নয় জন যোদ্ধা শহীদ হন।

কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনী কামালপুর পাকসেনা ঘাঁটির ওপর মর্টারের সাহায্যে তীব্র আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর পাঁচ জন সৈন্য নিহত ও ১২ জন আহত হয়। অপর এক ঘটনায় মুক্তিবাহিনীর আরেক দল যোদ্ধা চাওড়া নামক স্থানে পাকসেনাদের এ্যামবুশ করে। এতে দুই জন পাকসেনা নিহত ও তিন জন আহত হয়।

দুপুরে বায়তুল মোকাররম বিপণী কেন্দ্রের সামনে গেরিলাদের পুঁতে রাখা গাড়িবোমা বিস্ফোরণে ছয় জন নিহত ও ৫৫ জন আহত হয়। অপরদিকে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল থেকে একজন গেরিলাকে গ্রেফতার করে।

৮ নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনী নাস্তি-গুগরি সড়কে পাকসেনাদের এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে মাইন বিস্ফোরণে পাকবাহিনীর ১০ জন সৈন্য ও একজন রাজাকার নিহত হয়।

পাকবাহিনীর তিনটি জঙ্গী বিমান বেলা ৩.৫০মিনিটে মুক্তিবাহিনীর বেলুনিয়া এবং পরশুরাম অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। বিমানগুলো এক সময় এল.এম.জি-র আওতায় এলে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। এতে একটি বিমান ভূপতিত হয়।

বন-এ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পশ্চিম জার্মান চ্যান্সেলার উইলি ব্রান্টের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ইন্দিরা গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, ভারত পূর্ববঙ্গের অধিবাসীদের নিজের পছন্দ মতো একটি রাজনৈতিক সমাধান আশা করে।

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ অথবা সাহায্য করার অভিযেগে আটক ব্যাক্তিদের বিচারের জন্য বিশেষ আদালত গঠনের নির্দেশ দেন।

ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ এক ঘোষণায় প্রদেশের সব বেসামরিক এলাকায় ট্রেঞ্চ খননের নির্দেশ জারি করে। বিবিসি-র চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড ক্লার্ক পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের চীন সফরের ওপর বিশেস পর্যালোচনা করেন। 

ক্লার্ক জানান, পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের চীন সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের কাছ থেকে আরো বেশি সাহায্য লাভ করা। পাকিস্তান জঙ্গী বিমান এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের জন্যে চীনকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে। তিনি জানান, সিনকিয়াং এবং করাচীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী পথে চীনের অস্ত্রশস্ত্র পাকিস্তানে পৌঁছতে শুরু করেছে।

 

 

১১ নভেম্বর ‘বেতিয়ারা শহীদ দিবস’

 

04 ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সুমহান গৌরবগাঁথায় যুক্ত হয়েছিল একটি উজ্জ্বল রতœকণিকা। দেশপ্রেম ও সাহসের রক্তিম আল্পনায় আত্মদানের এক অমর অধ্যায় সেদিন রচিত হয়েছিল কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেতিয়ারায়। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে কমিউনিস্ট পার্টি-ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর এক তুমুল যুদ্ধ হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা অনেকটাই ‘হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট’-এর মতো মুখোমুখি সেই সম্মুখ সমরে অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে জীবন উৎসর্গ করেন বিশেষ গেরিলা বাহিনীর ৯ জন গেরিলা যোদ্ধা। বেতিয়ারার এই যুদ্ধে শহীদ হন- নিজাম উদ্দিন আজাদ, সিরাজুম মুনীর, মো. শহীদুল্লাহ, বশির মাস্টার, আব্দুল কাইয়ুম, জহিরুল হক দুদু, আওলাদ হোসেন, কাদের মিয়া, সফিউল্লাহ। অমৃতের এই বীর সন্তানেরা সেদিন বেতিয়ারার শ্যামল মাটিতে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে এক অমর বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস রচনা করেছিলেন।