৩১ অক্টোবর ১৯৭১ এই দিনে
এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লন্ডনে বলেন, 'শরণার্থী সমস্যাকে এখন আর ছোট করে দেখার উপায় নেই। বাংলাদেশের সমস্যা কেবল শুধুমাত্র এখন শরণার্থী সমস্যার মধ্যেই আবদ্ধ নয় বরং এই সমস্যা বহুদূর চলে গেছে। বাংলাদেশে যে ধরনের নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো হয়েছে তা ইতিহাসে বিরল। শরণার্থী সংকটের কারণে আজ ভারত অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যেই ভারতে আশ্রিত শরণার্থীর সংখ্যা ৯৫ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত শরণার্থী আসছে যা মনে হচ্ছে শিগগির তা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ভারত এখন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপর অবস্থান করছে। জানি না এই সংকট কবে নিরসন হবে বা আদৌ হবে কিনা। আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শে ভারত ইতোমধ্যে বহুবার নিজেদের নিবৃত করেছে, অজস্রবার ধৈর্য ধরেছে অথচ আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে নিবৃত করতে পারেনি, যার চিত্র আমরা সীমান্ত অঞ্চলগুলোতেই দেখতে পাচ্ছি। গত কদিনেই আগরতলায় বিনা উসকানিতে গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। বিশ্ব মহল এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আমরা বারবার বলেছি এই সমস্যার সমাধান একমাত্র বাংলাদেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা। পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘ কেউই বিষয়টিতে কর্ণপাত করেনি। এখন ভারতকে বাধ্য করা হচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ জড়ানোর। বিশ্বমহল যদি কোনো ধরনের সমাধান না দিতে পারে তবে ভারত বাধ্য হবে নিজের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে।'
ঢাকায় এদিন
৩১ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়, 'পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচনে নতুন করে আরও ১১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা ৪৬ জনে পৌঁছেছে।'
ভারতে এদিন
৩১ অক্টোবর দিল্লিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, 'বর্তমানে পাকিস্তান সীমান্ত থেকে একাধিকবার হামলার ঘটনায় ভারত এখন পরিপূর্ণ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এখন ভারতীয় সীমান্তের এপাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থান ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অবস্থানের মধ্যে মাত্র ১-২ মাইল ফারাক রয়েছে। পাকিস্তান কোনো ধরনের অপতৎপরতা পুনঃবার চালানোর ধৃষ্টতা দেখালে আমরা তার উপযুক্ত দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে দ্বিধা করবো না।'
৩১ অক্টোবর মধ্য প্রদেশের নিমাচে কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনীর ২৩তম বার্ষিক উৎসবের সমাপনি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রাম বলেন, 'মাঝেমাঝেই প্রশ্ন করা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে কি যুদ্ধ হবে? আমি পরিষ্কারভাবে বলছি ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ধরনের যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তবে পাকিস্তানের এটা স্পষ্ট মনে রাখা দরকার যে ভারত যদি আক্রান্ত হয় এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় তবে আমরা পাল্টা আঘাত হানতে বাধ্য হবো।'
৩১ অক্টোবর কলকাতার দমদম বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় বলেন, 'পাকিস্তান যুদ্ধ তৈরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগরতলা ও আশপাশের এলাকায় পাকিস্তানিদের গোলায় নারী শিশুহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন, কিন্তু এরপরও ভারত ও ভারতের মানুষ সংযত আচরণ প্রকাশ করেছে। শান্তি মিশনে যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে তখন পাকিস্তান সরকার এই ধরনের প্ররোচনা ও অযৌক্তিক হামলা চালাচ্ছে। কোনো দেশ আজ ভারতের অবস্থানে থাকলে সংযত থাকতে পারতো কিনা সন্দেহ। পাকিস্তান যেভাবে বিনা উসকানিতে হামলা চালাচ্ছে তাতে ভারত আর সংযত থাকতে পারবে না।'
৩১ অক্টোবর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় 'পাকিস্তান সেনাবাহিনী শ্রীহট্টের মুরকা চা বাগান থেকে গতকাল রাত ৩টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ত্রিপুরার কমলপুরের উপর মর্টার দিয়ে গোলাবর্ষণ করে। এই গোলাবর্ষণে কমলপুর শহর, গঙ্গানগর ও বালিগাঁও গ্রাম যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে কমলপুর থানার বেতারের বার্তা প্রেরক বিভাগটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার ফলে কমলপুর এখন প্রায় জনশূন্য। বেসামরিক মানুষ প্রায় সবাই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।'
আন্তর্জাতিক মহলে এদিন
৩১ অক্টোবর প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদপত্র 'সানডে টাইমস' পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রায় ৮০০ গেরিলা সম্প্রতি ঢাকা শহরের কর্মব্যস্ত অঞ্চলে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে। গেরিলাদের আক্রমণের ফলে পাকিস্তানি বাহিনী বিমানঘাঁটি যাওয়ার পথে পিল বক্স তৈরি করেছে এবং ঢাকা বিমানবন্দরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ওয়েজের বিমানগুলোর উঠানামাতেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। আগে বোয়িং বিমানগুলি সব আলো জ্বেলে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করতো। কিন্তু এখন হামলার আশংকায় পিআইয়ের বিমানগুলো প্রায় বিনা আলোতে বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণ করছে।'
৩১ অক্টোবর মিশরের কায়রোতে ভারতের লোকসভার দুই সদস্য কে পি উন্নি কৃষ্ণন ও যুব কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদক পিএম সঈদ এক আলোচনা সভায় বলেন, 'বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আরব মিত্র রাষ্ট্রগুলোর আচরণে ভারত প্রচণ্ড হতাশ। আরব বিশ্বের রাজনীতি সম্পর্কে পাকিস্তানের নীতি ও মনোভাব বরাবরই সন্দেহজনক ও সুবিধাবাদী হলেও আরব দেশগুলো পাকিস্তানের প্রতি অব্যাহত সমর্থন প্রকাশ করছে।'
৩১ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র প্রাভদাতে একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এই নিবন্ধে বলা হয়, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যদি সংঘর্ষ হয় তাহলে তাদের জনগণের উপর নিদারুণ ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নেমে আসবে। যারা আন্তর্জাতিক উত্তেজনা তীব্রতর করতে চায় তাদের হাতের ক্রীড়ানকে পরিণত হবে ভারত ও পাকিস্তান।'
দেশব্যাপী গণহত্যা ও প্রতিরোধ যুদ্ধ
চাপিতলা গণহত্যা
৩০ অক্টোবর কুমিল্লার মুরাদনগরের রাজা চাপিতলায় রাজাকারদের সহযোগিতায় পৈশাচিক গণহত্যা চালায় হানাদার বাহিনী। এই গণহত্যায় শহীদ হন ৫১ জন নিরীহ গ্রামবাসী।
এদিন সকাল ৭টার দিকে হানাদার বাহিনীর বড় একটি দল মুক্তিবাহিনীর রাজা চাপিতলার ক্যাম্প আক্রমণের লক্ষ্যে রাজাকার কমান্ডার মাজেদুল ভূঁইয়ার সহায়তায় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে ৩ ভাগে ৩টি দল বিভক্ত হয়। একটি দল কোম্পানিগঞ্জ হয়ে টনকি গ্রামে অবস্থান নেয়। আরেকটি দল কোম্পানিগঞ্জ হয়ে নবীপুর হয়ে রঘুনাথপুরে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণের জন্য যায়। সর্বশেষ দলটি কোম্পানীগঞ্জ বাজার হয়ে নবীনগর সড়ক দিয়ে চাপিতলা গ্রামের পিছন দিক দিয়ে ঢুকে চাপিতলা অজিফা খাতুন হাইস্কুলের মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করে। এই সময় হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনীর বড় একটি গেরিলা দল স্থানীয় খামার গ্রাম মাদ্রাসা ও কবরস্থানের চারপাশে বাংলার খনন করে হানাদার বাহিনীর উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। এসময় মুক্তিবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে হানাদার বাহিনী ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর গোলাবারুদ এক পর্যায়ে শেষ হয়ে এলে মুক্তিবাহিনী পিছু হটে নিজেদের পূর্ববর্তী ক্যাম্পে ফিরে যায়। এই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয় এবং মুক্তিবাহিনীর ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরে হানাদার বাহিনী সর্বপ্রথম চাপিতলা গ্রামের অহিদ উল্লাহ্ কেরানীর বাড়িতে ঢুকে পৈশাচিক গণহত্যা চালায়। এসময় হানাদার বাহিনীর ব্রাশফায়ারে শহীদ হন ১১ নিরীহ গ্রামবাসী। এরপর রাজাকার তমিজুদ্দিনের সহায়তায় হানাদার বাহিনী খামারগ্রামে ঢুকে দ্বিতীয় দফা গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় সর্বমোট ৫১ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। গণহত্যা শেষে হানাদার বাহিনী ২১জন নারীকে শ্লীলতাহানি সহ ২০৬টি বাড়িঘর গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
বিটঘর গণহত্যা
৩১ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরাইলের পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় শহীদ হন ৮০ জনের বেশি নিরীহ গ্রামবাসী। এদিন সকালবেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সরাইল ও আশুগঞ্জ থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রায় ২০০ সেনা রাজাকারদের সহযোগিতায় বিটঘর গ্রামে প্রবেশ করে। এরপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানাদার বাহিনী নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করে। পরে বিটঘর গ্রামের পাশের খালের পাশে জড়ো করে ৮-১০ জন প্রতি একটি লাইন করে ব্রাশফায়ার করে গণহত্যা চালায়। এক পর্যায়ে আহতদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।
৩১ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার পাথরঘাটায় মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। এসময় হানাদার বাহিনীও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরে পাকিস্তান আর্টিলারি সহযোগে মুক্তিবাহিনীর উপর হামলা করে। এসময় মুক্তিবাহিনীও ভারতীয় আর্টিলারি বাহিনীর সহায়তা নেয়। এই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ১৫ সৈন্য নিহত হয়। অন্যদিকে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
৩১ অক্টোবর কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কটেশ্বর ঘাঁটি আক্রমণ করে। এসময় হানাদার বাহিনী আর্টিলারির সাহায্য নিয়ে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এসময় মুক্তিবাহিনী ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণের মুখে এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ৭ সৈন্য নিহত হয় এবং মুক্তিবাহিনীর এক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
৩১ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরে মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা দল লক্ষ্মীপুর বাজারে অবস্থানরত রাজাকারদের উপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এসময় মুক্তিবাহিনীর হামলায় ৪ রাজাকার নিহত হয়।
৩১ অক্টোবর ১৯৭১: মির্জাপুর থানার পাথরঘাটায় মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়
মির্জাপুর থানার পাথরঘাটায় মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ফাইল ছবি
১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর দিনটি ছিল রবিবার। এই দিন মির্জাপুর থানার পাথরঘাটায় মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলা বিনিময় হয়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ১৫ জন পাঞ্জাবী সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে দুই জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিবাহিনী কুমিল্লায় পাকহানাদার বাহিনীর কটেশ্বর ঘাঁটি আক্রমণ করে। এতে পাকসেনা আর্টিলারী ও র্২র্ মর্টারের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। প্রায় একঘন্টা ব্যাপী এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর সাত জন সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর একজন যোদ্ধা আহত হন।
২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর একদল যোদ্ধা লক্ষ্মীপুরে অবস্থানরত রাজাকারদেও ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এতে চার জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
‘সানডে টাইমস পত্রিকায় বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি জানান, প্রায় আট শতাধিক গেরিলা সম্প্রতি ঢাকা শহরের কর্মব্যস্ত অঞ্চলে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে। গেরিলাদের আক্রমণের ফলে পাকবাহিনী বিমানঘাঁটি যাওয়ার পথে পিল বক্স তৈরি করেছে এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ওয়েজের বিমানগুলো ওঠানামার পদ্ধতিও বদলে গেছে। এতদিন পর্যন্ত বোয়িং বিমানগুলো সব আলো জ্বেলে ঢাকা বিমানঘাঁটিতে বিতরণ করতো। তবে এখন বিমানগুলো যথাসম্ভব বিনা আলোয় জলের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের মধ্যে পাক-ভারত সঙ্কট ও বাংলাদেশ বিষয়ের ওপর আনুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
নয়াদিল্লীতে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনী মাত্র আধা মাইলের ব্যবধানে পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান করছে। এরই মধ্যে ভারতীয় সৈন্যরা পূর্ব সীমান্তে বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি হামলা প্রতিহত করেছে।
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডাঃ এ.এম. মালিক পাকিস্তানের উর্দু ডাইজেস্ট এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিকল্পনা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বেশ কয়েক বছর আগে থেকে পরিচালিত হিসেব করা আন্দোলনেরই ফল। বাঙালি জাতীয়তাবাদ যে পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী তা নিশ্চিতভাবে প্রমানিত হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়, পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের উপ-নির্বাচনে আরো ১১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এ নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬ জন।
শিখ নেতা ডঃ জগজিৎ সিং চৌহান লন্ডন থেকে লাহোর আসেন। লাহোরে তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধী যদি প্রকৃতই বাংলাদেশ প্রবক্তাদের সাহায্য করতে চান, তাহলে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিনকে তাদের সরকার গঠনের জন্যে তার পশ্চিমবঙ্গও দিয়ে দেয়া উচিত।