০৭ অক্টোবর ১৯৭১ এই দিনে
১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর লন্ডনের পাকিস্তান দূতাবাসে নিযুক্ত বাঙালি কূটনীতিবিদ ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলর রেজাউল করিম পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর এদিন বিকেলে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে পদত্যাগকারী বাঙালি কূটনীতিবিদদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ পদে।
ঢাকায় এদিন
৭ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রী পরিষদে তিন জন মন্ত্রী হিসেবে যুক্ত হন। তারা হলেন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির এ কে মোশাররফ হোসেন, জসিমউদ্দিন আহমদ ও কাইয়ুম মুসলিম লীগের মুজিবুর রহমান।
৭ অক্টোবর খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী নওয়াজেশ আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি শিগোমটস্থ কারিয়ামা।
ভারতে এদিন
১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর দিল্লি বিমানবন্দরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন থেকে ফিরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং বলেন, 'আমরা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবং বিভিন্ন দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় শরণার্থী সমস্যা এবং পূর্ব বাংলায় চলমান ঘৃণ্য গণহত্যা ও নিপীড়নের বিষয়টি তুলে ধরেছি। আমরা বারবার বলেছি এটি কখনো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না। বহু দেশ আমাদের সমর্থন দিয়েছে। ইউরোপের দেশগুলো পাকিস্তানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ে সব সমস্যার অবসান হবে এবং শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন।'
৭ অক্টোবর দিল্লিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রাম বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নের একটি রাজনৈতিক সমাধান বলতে একমাত্র স্বাধীনতা বুঝি। আমরা বিশ্বাস করি, বাঙালি একদিন স্বাধীনতা লাভ করবে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা ও স্বীকৃতি পাবে। কেননা, তারা ন্যায় ও সত্যের জন্য লড়াই করছে। ভারত সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে আছে।'
পাকিস্তানে এদিন
৭ অক্টোবর পাকিস্তান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সোভিয়েত ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত মৈত্রী চুক্তির সমালোচনা করে বলে, 'মূলত এই চুক্তির ফলে ভারত পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিরাম মিথ্যাচারের সুযোগ পাচ্ছে। যার প্রশ্রয় দিচ্ছে সোভিয়েত সরকার। একই সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি কোসিগিন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কার্যক্রমকে বিষোদগার করে যে বক্তব্য দিয়েছে তা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত ও চরম মিথ্যাচার। আমরা এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।'
আন্তর্জাতিক মহলে এদিন
৭ অক্টোবর ব্রিটিশ লেবার পার্টির সম্মেলনে বাংলাদেশে চলমান গণহত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এসময় শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি, আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা অর্পণ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুপারিশ জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়। একই সঙ্গে লেবার পার্টির সভাপতি ইয়ান মিকার্ডো প্রস্তাবে বলেন, 'পূর্ব বাংলার ৯০ লাখের বেশি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের জন্যও ব্যাপক ত্রাণের প্রয়োজন। এই অসহায় শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য বিশ্ববাসীকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের সাধারণ মানুষ থেকে ভারতের সরকার নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন সবারই দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। পাকিস্তানকে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ ও পাকিস্তানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। যতক্ষণ না পর্যন্ত পাকিস্তান পূর্ব বাংলার বিষয়ে কোনো সুরাহা না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের জন্য আমরা প্রতিটি দেশকে অনুরোধ করি।'
৭ অক্টোবর জাতিসংঘে সিরিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতা বলেন, 'সিরিয়া পাকিস্তানের ঐক্য রক্ষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে আগ্রহী। যা কেবল পূর্ব পাকিস্তানেই না, আঞ্চলিক শান্তির জন্যও অত্যন্ত জরুরি। এই জন্য পাকিস্তানকেই সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে।'
দেশব্যাপী এদিন
৭ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী সৈয়দপুর বিমান ঘাঁটির উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে জেনারেল নিয়াজী বলেন, 'যারা ভাষাভিত্তিক প্রশ্ন তুলে আমাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করতে চায় তারা পাকিস্তানের শত্রু। আমরা ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতি হিসেবে টিকে থাকবো এবং শত্রুর দুরভিসন্ধি নস্যাৎ করে দেবো।'
গণহত্যা ও দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ
সূর্যমণি গণহত্যা
৭ অক্টোবর ভোরে রাজাকারদের একটি দল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি গ্রামের ওয়াপদা বাঁধে রাজাকারদের ৩০ জন নিরীহ হিন্দু গ্রামবাসীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় শহীদ হন ২৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী।
এর আগের দিন ৬ অক্টোবর রাতে মঠবাড়িয়া ইউনিয়নের আঙ্গুলকাটা গ্রামে হালদার ও মিত্র পরিবারের বাড়িতে হামলা চালায় রাজাকার কমান্ডার ইস্কান্দার আলী মৃধা, মুকুল আহমেদ বাদশা, আনসার আলী খলিফা এবং সৈয়দ হাওলাদারের নেতৃত্বে ৬০-৬৫ জন সশস্ত্র রাজাকারের একটি দল। এসময় তারা পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের বেঁধে রাখে। পরে রাজাকারেরা বাড়ির মহিলাদের ধর্ষণ করে এবং দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ৩৭ জন পুরুষকে বন্দী করে নিয়ে যায়। প্রথমে তাদের মঠবাড়িয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে সাত জনকে মোটা অর্থের মুক্তিপণ পাওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর বাকি ৩০ জনকে সুর্যমণি গ্রামের দক্ষিণে ওয়াপদা বাঁধে নিয়ে যায় রাজাকারেরা। ওয়াপদা বাঁধে নেয়ার পর তাদের সবাইকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে ব্রাশফায়ার করলে ২৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। বাকি ছয় জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন সেদিন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ৪ নং ইস্ট বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন গাফফারের নির্দেশে সুবেদার আবদুল ওহাবের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দল শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন দখলের পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বড়দাসুয়া, চাঁদলা, কায়েমপুর এবং গোবিন্দপুর আক্রমণ করে। এসময় হানাদার সেনারাও মুক্তিবাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই হামলায় মুক্তিবাহিনীর নায়েব সুবেদার সিরাজ, সুবেদার মঙ্গল মিয়া এবং সুবেদার বেলায়েতের তাদের নিজ নিজ প্লাটুন নিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিক সামনে রেখে পূর্ব দিকে অবস্থান নেন।
৭ অক্টোবর টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে কাদেরিয়া বাহিনীর একটি দল ভুয়াপুর থানায় অবস্থানরত হানাদার সেনাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় কাদেরিয়া বাহিনী ও হানাদারদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভুয়াপুর থানা শত্রুমুক্ত করেন। এই যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং আনুমানিক ৮০ জনের মতো রাজাকার এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
৭ অক্টোবর রাজশাহীর মাগুরাপাড়ায় মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ৩ হানাদার সৈন্য ও ৪ পুলিশ নিহত হয়।
এদিন দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের মোগলহাটে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এসময় বেশ কয়েকজন হানাদার সেনা নিহত হয়।
৭ অক্টোবর ফেনীর ছাগলনাইয়ার রাধানগর তহসিল অফিস উড়িয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় মোকাসিয়া গ্রামের হানাদারদের অবস্থানের উপরও অতর্কিত হামলা চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। একইদিন ছাগলনাইয়া-বিলোনিয়া সড়কে একটি ব্রিজ উড়িয়ে দেয় মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা।
৭ অক্টোবর ১৯৭১: ‘বাঙালি একদিন স্বাধীনতা লাভ করবে’, জগজীবন রাম
বাঙালি একদিন স্বাধীনতা লাভ করবে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা ও স্বীকৃতি পাবে। ফাইল ছবি
১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম নয়াদিল্লীতে বলেন, আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নের একটি রাজনৈতিক সমাধান বলতে একমাত্র ‘স্বাধীনতা’ বুঝি। আমরা বিশ্বাস করি, বাঙালি একদিন স্বাধীনতা লাভ করবে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা ও স্বীকৃতি পাবে। কেননা, তারা ন্যায় ও সত্যের জন্য লড়াই করছে।
চট্টগ্রামের রাধানগর তহসিল অফিস উড়িয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় মোকাসিয়া পাক-প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপরও আকস্মিক আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। এলএমজি ও মেশিনগানসহ পাহারারত পাকসেনাদের অবস্থানকে পরোয়া না করে ছাগলনাইয়া-বিলোনিয়ার মধ্যবর্তী একটি সেতু উড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় গেরিলারা।
ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ার বিদ্যাকোটের কাছে পাকসেনারা কয়েকটি নৌকাযোগে টহলকালে মুক্তিসেনাদের আক্রমণের মুখে পড়ে, এতে ৪টি নৌকা ডুবে যায় এবং কয়েকটি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ আক্রমণে বেশ কিছু পাকসেনা হতাহত হয়। কাদেরিয়া বাহিনী ভুয়াপুর থানায় অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এ অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা ভুয়াপুর থানা শত্রুমুক্ত করে। এখানে ৭০/৮০ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন।
২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ক্যাপ্টেন গাফফারের নেতৃত্বে শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন দখলের পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকসেনা ঘাঁটি বড়দাসুয়া, চাঁদলা, কায়েমপুর এবং গোবিন্দপুর আক্রমণ করে। পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর নায়েব সুবেদার সিরাজ, সুবেদার মঙ্গল মিয়া এবং সুবেদার বেলায়েত স্ব-স্ব প্লাটুন নিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিক সামনে রেখে পূর্ব দিকে অবস্থান নেন।
রাজশাহীর মাগুরাপাড়ায় মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের বিরুদ্ধে এক সফল অভিযান চালায়। এই অভিযানে ৩ জন পাকসৈন্য ও ৪ জন পাকপুলিশ নিহত হয়। দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের মোগলহাটে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়। ডা. এ এম মালিক তার মন্ত্রী সভায় আরো তিনজন মন্ত্রী অন্তর্ভূক্ত করেন। নতুন মন্ত্রীরা হচ্ছেন, পিডিপি-র এ কে মোশারফ হোসেন, জসিমউদ্দিন আহমদ ও মুসলিম (কাইয়ুম) লীগের এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান।
বিশ্ব ব্যাংকের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি শিগোমটস্থ কারিয়ামা খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী নওয়াজেশ আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। লে. জেনারেল নিয়াজী সৈয়দপুরের নবনির্মিত বিমান ঘাঁটির উদ্বোধন করেন। বিমান ঘাঁটি উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে নিয়াজী বলেন, ‘যারা ভাষাভিত্তিক প্রশ্ন তুলে আমাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করতে চায় তারা পাকিস্তানের শত্রু। আমরা ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতি হিসেবে টিকে থাকবো এবং শত্রুর দুরভিসন্ধি নস্যাৎ করে দেবো। সিরিয়ার প্রতিনিধি জাতিসংঘে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘ সিরিয়া পাকিস্তানের ঐক্য রক্ষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে আগ্রহী।’