৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

এদিন মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক ভাষণে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, 'ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশের মানুষের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের চাপে এবং ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হয়েও ভারত নিরীহ আর্ত শরণার্থীদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বহু চেষ্টাই নস্যাৎ হয়ে গেছে বহির্মুখী চাপে। এই বছরের শুরুর দিকে আমাদের সাধারণ নির্বাচনে ভারতের জনগণ আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার অঙ্গীকার করেছে। আমরাও আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে জোর দিয়েছি। শরণার্থী সমস্যার ফলে আমরা বেশ বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু এরা তো কোনো সশস্ত্র লোক নয়। প্রাণে বেঁচে থাকার আশায় ক্ষুধায় জর্জরিত অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের একটি সুবিশাল অন্তঃপ্রবাহ চলতে থাকল। এদের অনেকে আহত, অসুস্থ এবং সবাই ক্ষুধার্ত। গত ছয় মাসের মধ্যে ৯০ লাখ শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করেছে। এখনো এসেই চলেছে। ইতিহাসে আমরা এর চেয়ে বড় শরণার্থী ঢল আগে দেখিনি। আমরা সবাই জানি যখন লাখ লাখ মানুষ অন্য দেশের সীমানায় ঢুকে তখন সেই দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, নিরাপত্তা ও শান্তি হুমকির মুখে পড়ে। তবে আমরা সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখাচ্ছি। কিন্তু প্রয়োজনে সঙ্কটের মূল কারণ দূর করার জন্য অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, এমন কোনো চেষ্টা করা হচ্ছে না। এটা বিশ্ববাসীর দায়িত্ব যে আর দেরি না করে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সঙ্গে উদ্বাস্তুদের তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করা। আমরা আশা করছি একটি সমাধানের। এই সমাধানটি হলে শরণার্থীরা নিজ দেশে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে।'

ঢাকায় এদিন

২৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সের ২ সদস্যের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকায় আসে।

সেদিন সচিবালয়ে ডা. মালিকের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে মন্ত্রীরা যুদ্ধকালীন ও দেশের এই দুরবস্থায় তাদের বেতন ৫ থেকে ১০ ভাগ কম নিবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।

ঢাকার দিলকুশা ইউনিয়ন শাখার শান্তি কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে মন্ত্রীদের সম্বর্ধনা দেয়। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম। সভায় শামসুল হক বলেন, 'ভারতের দুরভিসন্ধি ফাঁস হয়ে যাবে ভেবেই তারা জাতিসংঘ, রেডক্রস, সাংবাদিক এবং মানবতাবাদীদের দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না।'

পাকিস্তানে এদিন

২৯ সেপ্টেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, 'পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে অভিযুক্ত অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতে দায়েরকৃত মামলায় এ পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।'

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

২৯ সেপ্টেম্বর মস্কো থেকে প্রকাশিত সোভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, 'দুই পক্ষই পুরোপুরিভাবে একমত হয়েছে যে এই চুক্তির প্রভাব অসামান্য এবং উভয় রাষ্ট্রের জন্যই ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ। এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্ব পারস্পরিক সম্মান, আস্থা এবং প্রতিবেশীসুলভ সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে। এই চুক্তি নিশ্চিত করে যে সোভিয়েত-ভারত বন্ধুত্ব কোনো ক্ষণস্থায়ী পরিস্থিতির ওপর নয় বরং দুই দেশের জনগণের দীর্ঘমেয়াদী পারস্পরিক উন্নতি ও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির জন্য বহুমুখী পারস্পরিক সহযোগিতা এবং দুই দেশের শান্তি এবং নিরাপত্তার ওপর প্রতিষ্ঠিত। দুই পক্ষই চুক্তির শর্ত এবং মূলনীতি অনুসারে সোভিয়েত-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে তাদের দৃঢ় সংকল্পের ঘোষণা দিল।'

এদিন জাতিসংঘে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এম আর সিদ্দিকীর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ও জাতিসংঘের যেকোনো আয়োজনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের মহাসচিব উ'থান্টের কাছে আবেদন জানান।

২৯ সেপ্টেম্বর প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে চিঠি পাঠান ব্রিটিশ লেবার পার্টির সচিব টিম রিড আউট। এই চিঠিতে অক্টোবরে লন্ডনে অনুষ্ঠিত লেবার পার্টির সম্মেলনে যোগদানের জন্য আবু সাঈদ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

২৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালেক ডগলাস হোম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, 'ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর বিশ্বমহল গভীর উদ্বেগের সঙ্গে নজর রাখছে। সেখানকার পরিস্থিতি শঙ্কাজনক। এই অবস্থায় ভারত এবং পাকিস্তানকে নিজেদের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। যুদ্ধ কখনোই কাম্য নয়। পূর্ব বাংলা থেকে আসা শরণার্থীদের চাপে ভারতের অর্থনীতি এখন বিপর্যস্ত। অন্যদিকে পূর্ববঙ্গে যুদ্ধ বিধ্বস্ত মানুষ যে পরিস্থিতিতে বসবাস করছে তা না দেখলে বিশ্বাস করার মতো না। সেখানে ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। এই জন্য বিশ্ব মহলকেও এগিয়ে আসতে হবে।

২৯ সেপ্টেম্বর প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক 'দ্য টাইমস' এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'পাকিস্তানে পূর্ব বাংলার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার চলছে। এরই মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ১১ আগস্ট এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের পর বিচার শুরু হয়েছিল। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর ওই মামলা চলমান ছিল। এই মামলার বিরুদ্ধে বিশ্বের বহু জায়গায় বিক্ষোভ হলেও পাকিস্তান সরকার তাতে কর্ণপাত না করে বিচার চালু রেখেছে।'

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

২৯ সেপ্টেম্বর ফেনীর পরশুরামের নয়নপুরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে চতুর্থ বেঙ্গলের 'বি' কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই হামলায় মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে ভারতীয় আর্টিলারি। প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা এই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ১০ সৈন্য নিহত হন, ১৫ জন আহত এবং ৬ জনকে আটক করে মুক্তিবাহিনী। পরে হানাদার বাহিনী ফুলগাজীর মুন্সিরহাট থেকে আরও ব্যাপক সৈন্য এনে শক্তি বৃদ্ধি করলে মুক্তিবাহিনী ফের আক্রমণ চালায়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর গুলি ও রসদ ফুরিয়ে আসলে মুক্তিবাহিনীর নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে যায়। এদিন যুদ্ধের সময় মুন্সিরহাট থেকে একটি হানাদারদের ট্রলি পরশুরামের বিলোনিয়া যাওয়ার সময় মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়।

২৯ সেপ্টেম্বর রাত এগারোটার দিকে ফেনীর বল্লভপুর ও ছাগলনাইয়ায় মুক্তিবাহিনীর দুটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যূহে দুর্ধর্ষ আক্রমণ চালায়। বল্লভপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় যদিও কেউ হতাহত হননি। অন্যদিকে ছাগলনাইয়ায় মুক্তিবাহিনী আর্টিলারির সহায়তায় হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকজন হানাদার সৈন্য নিহত হন ও ৭ জন আহত হন।

২৯ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় আফসার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার আবুল কাশেম ও প্লাটুন কমান্ডার মনিরুদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর দুটি দল ভালুকা ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এই হামলায় ৪ জন হানাদার সেনা ও ৩ জন রাজাকার নিহত হন।

২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার নওয়াবগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একের পর এক মোট তিনটি অভিযানে ব্যর্থ হয়ে আড়িয়াল বিল ও আশপাশ থেকে মুক্তিবাহিনীর উপর ত্রিমুখী আক্রমণের চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধে সেই প্রচেষ্টাও ভেঙে পড়ে।

২৯ সেপ্টেম্বর ভোর পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের পূর্বমধুপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আসার খবর পেয়ে আগে থেকেই ফাঁদ পেতে রাখে মুক্তিবাহিনীর একটি অ্যামবুশে দল। এসময় মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুটি গাড়ি ধ্বংস হয়।

২৯ সেপ্টেম্বর বগুড়ার নশরতপুর স্টেশনের কাছে রেললাইনে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে হানাদার সৈন্যবাহী ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ছয় মাসে ৯ মিলিয়ন বাঙালি ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, যারা সবাই ক্ষুধার্ত-অসুস্থ

 

পূর্ব বাংলা থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা মানুষগুলো অসুস্থ, ক্ষুধার্ত। ফাইল ছবি

পূর্ব বাংলা থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা মানুষগুলো অসুস্থ, ক্ষুধার্ত। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল বুধবার। এদিন তিনটি অভিযানে ব্যর্থ হয়ে পাকসেনারা ঢাকার নওয়াবগঞ্জ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে বড় খাল ও আড়িয়াল বিলে হয়ে তিনদিক দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধে। হানাদাররা কখনও পিছু হটে কখনও শক্তি সঞ্চয় করে আবার আক্রমণে ফিরে আসে। গেরিলারা শক্ত অবস্থান থেকে পাক হামলার মোকাবেলা করতে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে যুদ্ধ।

ময়মনসিংহে মুক্তিবাহিনী কোম্পানি কমান্ডার আবুল কাশেম ও প্লাটুন কমান্ডার মনিরুদ্দিনের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর ভালুকা ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৪ জন পাকসেনা ও ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। বগুড়ার নশরতপুর ষ্টেশনের কাছে রেললাইনে গেরিলাদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে পাকসৈন্যবাহী একটি ট্রেন আংশিক বিধ্বস্ত হয়।

চট্টগ্রামের পূর্বমধুপুর এলাকায় ভোর পাঁচটার দিকে তিনটি পাক সামরিক যান গেরিলাদের অ্যামবুশে পড়ে তবে হতাহত না হলেও ২টি গাড়ী ধ্বংস হয়ে যায়। এদিন রাত এগারোটার দিকে বল্লভপুর ও ছাগলনাইয়ার পাক প্রতিরক্ষাব্যূহে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল আক্রমণ করে। বল্লভপুরে পাকসেনাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ছাগলনাইয়ায় কয়েকজন হানাদার নিহত ও ৭ জন আহত হয়। এ আক্রমণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ ইউনিট সহায়তা করে।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৪র্থ বেঙ্গলের ‘বি’ কোম্পানি পাকসেনাদের নয়ানপুর অবস্থানের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে গোলন্দাজ বাহিনীও সহায়তা করে। যুদ্ধ প্রায় ২৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত দুটো পর্যন্ত চলতে থাকে। ছয় ঘণ্টার যুদ্ধে গেরিলারা ১০ জন পাকসেনা নিহত, ১৫ জন আহত ও ৬ জনকে বন্দী করে। এছাড়া অনেক অস্ত্রশস্ত্রও দখল করে নেয়। পাকসেনারা মাসীরহাট থেকে আরও সৈন্য এনে শক্তি বৃদ্ধি করে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে আক্রমণের মোকাবিলা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর গোলাবারুদ ফুরিয়ে এলে অবস্থান পরিত্যাগ করে নিরাপদে মূল অবস্থানে ফিরে আসে। এই সংঘর্ষে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ও ১১ জন আহত হয়। এ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকসেনাদের একটি সরবরাহকারী ট্রলি মুন্সীরহাট থেকে বেলুনিয়ার দিকে যাওয়ার পথে গেরিলাদের পেতে রাখা মাইনের আঘাতে ধ্বংস হয়। ট্রলিতে বোঝাই গোলাবারুদ এবং রেশনও ধ্বংস হয়ে যায়।

পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এম আর সিদ্দিকীর জাতিসংঘের অঙ্গনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্যে মহাসচিব উ’থান্টের কাছে আবেদন জানায়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে বৃটিশ লেবার পার্টির সচিব টিম রিড আউট এক চিঠিতে অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় দলের সম্মেলনে যোগদানের জন্য অনুরোধ জানান।

রাওয়ালপিন্ডিতে সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে অভিযুক্ত অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতে দায়েরকৃত মামলায় এ পর্যন্ত ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সেক্রেটারিয়েট কেবিনেট কক্ষে ডা. মালিকের সভাপতিত্বে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রীরা যুদ্ধকালীন কৃচ্ছতা ও দেশপ্রেম দেখাতে তাদের বেতন ৫ থেকে ১০ ভাগ কমানোর সিদ্ধান্ত নেন।
শান্তি কমিটি দিলকুশা ইউনিয়ন শাখা কার্জন হলে মন্ত্রীদের সম্বর্ধনা দেয়। গোলাম আযমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় শামসুল হক বলেন, ভারতের দুরভিসন্ধি ফাঁস হয়ে যাবে ভেবেই তারা জাতিসংঘ, রেডক্রস, সাংবাদিক এবং মানবতাবাদীদের দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না।

এই দিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণে বলেন, ভারতীয় জনগণের প্রচেষ্টা প্রায়ই নস্যাৎ হয়ে গেছে বিভিন্ন বহির্মুখী চাপে। এই বছরের শুরুর দিকে আমাদের সাধারণ নির্বাচনে ভারতের জনগণ আমাদের দেশ এগিয়ে নিয়ে যাবার ম্যান্ডেট দিয়েছে। আমরা অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে জোর দিয়েছি। ঠিক এমনই এক সময়ে আমাদের সীমানা জুড়ে একটি নতুন ধরনের অনুপ্রবেশ শুরু হলো। এরা কোনো সশস্ত্র লোক নয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসে জর্জরিত অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের একটি সুবিশাল অন্তঃপ্রবাহ চলতে থাকল। এদের অনেকে আহত, অসুস্থ এবং সবাই ক্ষুধার্ত। 

গত ছয় মাসের মধ্যে ৯ মিলিয়ন মানুষ এসেছে এবং আসছে প্রতিনিয়ত। ইতিহাসের পাতায় এর চেয়ে বড় কোন মাইগ্রেশন আর কি হয়েছে? যখন লাখ লাখ মানুষ অন্য দেশের সীমানায় পুশ করা হয়, সেই দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, নিরাপত্তা ও শান্তি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। আমরা সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখাচ্ছি। কিন্তু প্রয়োজনে সঙ্কটের মূল কারণ দূর করার জন্য অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, এমন কোন চেষ্টা করা হচ্ছে না। এটা বিশ্ববাসীর দায়িত্ব যে আর দেরি না করে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সঙ্গে উদ্বাস্তুদের তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে সচেষ্ট হয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করা।

মস্কো থেকে প্রকাশিত সোভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, দুই পক্ষই পুরোপুরিভাবে একমত হয়েছে যে এই চুক্তির প্রভাব অসামান্য এবং উভয় রাষ্ট্রের জন্যই ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ এবং এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্ব পারস্পরিক সম্মান, আস্থা এবং প্রতিবেশীসুলভ সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে। এই চুক্তি নিশ্চিত করে যে সোভিয়েত-ভারত বন্ধুত্ব কোন ক্ষণস্থায়ী পরিস্থিতির ওপর নয় বরং দুই দেশের জনগণের দীর্ঘমেয়াদী পারস্পরিক উন্নতি ও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির জন্য বহুমুখী পারস্পরিক সহযোগিতা এবং দুই দেশের শান্তি এবং নিরাপত্তার ওপর প্রতিষ্ঠিত। দুই পক্ষই চুক্তির শর্ত এবং মূলনীতি অনুসারে সোভিয়েত-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে তাদের দৃঢ় সংকল্পের ঘোষণা দিল।