৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

দিন ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি টাইগারম্যান পদত্যাগ করেন। গত ৬ বছর ধরে তিনি ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছিলেন। গত বছরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি তার জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে গিয়েছিলেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন। পদত্যাগের পর টাইগারম্যান তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে তারবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেন। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিও তার আনুগত্য ও সমর্থন প্রকাশ করেন।

কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে টাইগারম্যান বলেন, 'ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের পর এখানকার প্রতিটি জেলা প্রতিটি শহর-বন্দরে গ্রাম-গঞ্জে আমি ঘুরেছি। গত ১৮ সেপ্টেম্বরে বিমান থেকে নেমেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার সেই পরিচিত ঢাকা বিমানবন্দর এ যেন নয়। এ যেন বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কোনো বিমান ঘাঁটি। বিমানবন্দরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলোকে প্রস্তুত হয়ে থাকতে দেখলাম। দেখলাম বিমানবন্দরের চার দিকে অসংখ্য বিমানবিধ্বংসী কামান। টার্মিনাল ভবনের ছাদে, জানালায় আর চিলতে ছাদ বা বারান্দাগুলোয় দেখলাম বালির বস্তা দিয়ে বাঙ্কার করা হয়েছে এবং সেখানে সশস্ত্র পাকিস্তানি সৈন্যরা বিমানবিধ্বংসী কামান, মেশিনগান ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তাক করে আছে যেন এখনই কিছু ঘটবে বা ঘটতে যাচ্ছে। আগে বিমানবন্দরে যেসব বেসামরিক কাস্টম ও ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মচারীদের দেখতাম, তাদের কাউকেই দেখলাম না। হয় তাদের সবাইকে গুলি করে হত্যা হয়েছে, অথবা তারা প্রাণভয়ে এ শহর ছেড়ে পালিয়েছে। বিমানবন্দরে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরাই সবকিছু করছে। বিমানবন্দরে যেসব বিদেশি নাগরিক যাওয়া আসা করছে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের নানাভাবে নাজেহাল করছে। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের সাজ-সরঞ্জাম, গোলাবারুদ ও সৈন্যদের পরিবহণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে একজন বাঙালিকেও আমি খুঁজে পেলাম না। অথচ দেশটা একান্তভাবে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির দেশ। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আমি দেখলাম এয়ারপোর্ট রোডের দু'পাশে বহু ট্রেঞ্চ খোঁড়া হয়েছে এবং রাস্তার দু'ধারের বাড়িগুলো জনশূন্য। আর এইসব জনশূন্য বাড়িগুলোর ছাদে, বারান্দায় ও জানালায় বালির বস্তা দিয়ে বাঙ্কার বানানো হয়েছে। ঢাকা রেডিওকে বর্তমানে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর ঢাকার রাস্তায় কেউ হাঁটে না। মানুষ বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলতে ভীষণ ভয় পায়। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে সেখানে থেকে কাজ করা আমার পক্ষে যুক্তিসঙ্গতভাবে কিংবা নৈতিকতার দিক থেকে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পাকিস্তানে আমি আর কোনোদিন ফিরে যাব না। আমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে কাজ করব।'  

ঢাকায় এদিন

২৮ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. এ এম মালিক এক বক্তৃতায় বলেন, 'পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংসের প্রয়াসে লিপ্ত শত্রুদের তৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। 

২৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসনের দপ্তর থেকে জারিকৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'দেশদ্রোহী ও ষড়যন্ত্রকারী শেখ মুজিবের বিচার সম্পর্কে কোনো প্রকার মন্তব্য করা যাবে না।'

২৮ সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বগুড়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মওলানা নজির উল্লাহর নেতৃত্বে মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল, দুষ্কৃতকারীদের দমনে মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্ররা রাজাকার ও শান্তি কমিটিকে সর্বাত্মক সাহায্য করবে বলে জানায়।

ভারতে এদিন

২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী ইউনিট কিলো ফ্লাইট গঠন করা হয়। কিছুদিন আগে ভারতের কাছ থেকে পাওয়া তিনটি নন-কমবেট এয়ার ক্রাফট, ১টি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার, ১টি অটার বিমান এবং ১টি ডাকোটা বিমান দিয়েই এদিন প্রশিক্ষণ শুরু হয়। অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারের দায়িত্ব দেয়া হয় স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলমকে। অন্যদিকে অটার বিমানের দায়িত্ব দেয়া হয় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ এবং বেসামরিক ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন আহমেদকে। ডাকোটা বিমানের দায়িত্ব পান পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের তিন ক্যাপ্টেন। যথাক্রমে ক্যাপ্টেন আবদুল খালেক, ক্যাপ্টেন আবদুল মুকিত, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার।

পাকিস্তানে এদিন

২৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বীয় ক্ষমতাবলে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করায় পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের ৬ অফিসারকে বরখাস্ত করেন। এই ছয় অফিসার হলেন, ইরাকের বাগদাদে পাকিস্তানের হাইকমিশনার এ এফ এম আবুল ফাত্তাহ, কলকাতাস্থ ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলী, জাতিসংঘের সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি এস এ করিম, ওয়াশিংটনের কাউন্সিলার এস এ এম এস কিবরিয়া, থার্ড সেক্রেটারি মহিউদ্দিন আহমদ ও আনোয়ারুল করিম।

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে সুইডেন, ফ্রান্সের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ বিষয়ক সুষ্ঠু সমাধান ও গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান। সুইডেনের প্রতিনিধি বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধি শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এটি খুবই অমানবিক। শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি প্রয়োজন। ফ্রান্সের প্রতিনিধি তার বক্তব্যে বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানে পাকিস্তান সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। কারণ তারাই এই সমস্যার উদ্ভব করেছে। যারা ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষের জীবন বিপন্নের মুখে। সেখানে এখনো গণহত্যা চলমান। এই সমস্যা সমাধান একমাত্র রাজনৈতিকভাবেই সম্ভব। রাজনৈতিক সমাধানের জন্য এই উদ্যোগ পাকিস্তান সরকারকেই নিতে হবে।'

২৮ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিনের ভোজসভায় যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এসময় ইন্দিরা গান্ধী ভারত সরকারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সোভিয়েত সরকারের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, 'পাকিস্তানের উপর অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক চাপ প্রদান করতে হবে। নয়তো পাকিস্তানে গণহত্যা বন্ধ সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে শরণার্থী প্রত্যাবর্তনও আশার মুখ দেখবে না। কিন্তু আশ্চর্য ও প্রচণ্ড দুঃখজনক এই যে এখনো কিছু দেশ পাকিস্তানকে অব্যাহতভাবে সমর্থন প্রদান করেই যাচ্ছে। এই সমস্যাটিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে চালানো হচ্ছে। যা কখনোই অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। কিংবা পাকিস্তান ভারত সমস্যাও নয়।'

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

২৮ সেপ্টেম্বর ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি শক্তিশালী দল কায়েমপুর পাকিস্তানি হানাদার ঘাঁটি আক্রমণ করে। চার ঘণ্টা যুদ্ধের পর হানাদার সেনারা টিকতে না পেরে কায়েমপুর ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ১৫ জন হানাদার সেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। এর প্রায় ১ ঘণ্টা পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এক ঘণ্টাব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর এয়ার স্ট্র্যাফিং করে। পরে বিমান ফিরে যাবার কিছুক্ষণের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল কায়েমপুর, শ্রীপুর, মইনপুর, কামালপুর ও লক্ষ্মীপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের উপর তীব্র আক্রমণ গড়ে তোলে। এসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৭০টি বাঙ্কার বিধ্বস্ত হয়। পরে মুক্তিবাহিনীর গোটা এলাকায় নিজেদের দখল নেয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অসংখ্য সৈন্য নিহত হয় অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৬ জন আহত হন।

২৮ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাইউমপুর ঘাঁটির ওপর মর্টার হামলা চালায়। এসময় প্রায় ৩৫ জন হানাদার সৈন্য নিহত হয় এবং ১৫ জন আহত হয়।

২৮ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ১১ নম্বর সেক্টরে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ৩ প্লাটুন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ধর্মপাশা থানায় ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এসময় থানায় থাকা হানাদার সেনারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে টিকতে না পেরে মোহনগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। এসময় বেশ কয়েকজন হানাদার সৈন্য নিহত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন শহীদ হন।

 

২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: উপহারের তিনটি বিমান দিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ শুরু

 
 

অনলাইন ডেস্কঃ ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল মঙ্গলবার। এদিন ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী ইউনিট ‘কিলো ফ্লাইট’ গঠন করা হয়। ভারতের কাছ থেকে পাওয়া তিনটি নন-কমবেট এয়ার ক্রাফট, ১টি অ্যালুয়েট ( Alouette III) হেলিকপ্টার, ১টি অটার (Otter DHC-3) বিমান এবং ১টি ডাকোটা (DC-3) বিমান দিয়েই শুরু হয় প্রশিক্ষণ।

অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারের দায়িত্ব পান স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ,  পিআইএ-র ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম। অটার বিমানের দায়িত্ব পান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম, পিআইএ-র ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ এবং বেসামরিক ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন আহমেদ। ডাকোটা বিমানের দায়িত্ব পান পিআইএ-র ক্যাপ্টেন আবদুল খালেক, পিআইএ -র ক্যাপ্টেন আবদুল মুকিত এবং পিআইএ-র ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার।

১১ নম্বর সেক্টরে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ৩ প্লাটুন গেরিলা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানা ৩ দিক থেকে আক্রমণ করে। প্রবল প্রতিরোধ আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাকসেনা হতাহত হবার পর রাতের অন্ধকারে হানাদারেরা মোহনগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন শহিদ হন।

২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি শক্তিশালী দল কায়েমপুর পাকসেনা ঘাঁটি আক্রমণ করে। চারঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা টিকতে না পেরে কায়েমপুর ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ১৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। ১ ঘন্টা পরে পাক বিমানবাহিনী এক ঘন্টাব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর এয়ার ষ্ট্র্যাফিং করে। বিমান ফিরে যাবার কিছুক্ষণের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল কায়েমপুর, শ্রীপুর, মইনপুর, কামালপুর ও লক্ষ্মীপুরের পাক অবস্থানে আক্রমণ করে পাকক্যাম্পের ৭০টি বাঙ্কার ধ্বংস, অসংখ্য পাকসেনা হতাহত করলে হানাদাররা নিশ্চিহ্ন হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এ সমস্ত এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং পাকসেনাদের কাছ থেকে মেশিনগান, মর্টার ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রচুর গোলাবারুদ দখল করে। এয়ার ষ্ট্র্যাফিং ও অপরাপর যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ১০ যোদ্ধা শহিদ ও ৬ জন আহত হন।

খুলনা অঞ্চলে পূর্ণ প্রস্তুতি ও গোলন্দাজ বাহিনী, পদাতিক বাহিনী ও গানবোটের শক্তিতে হানাদারেরা শ্যামনগর মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর হামলা চালায়। ৩ দিন ধরে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখে কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা শ্যামনগর ছেড়ে যায়। কুমিল্লার কসবার কাছে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের কাইউমপুর ঘাঁটির ওপর মর্টারের সাহায্যে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৩৫ জন সৈন্য নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর একজন যোদ্ধা আহত হন।

প্রধান সামরিক প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের ৬ অফিসারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। এরা হলেন, ইরাকস্থ রাষ্ট্রদূত এ এফ এম আবুল ফাত্তাহ, কলকাতাস্থ ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলী, জাতিসংঘস্থ সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি এস এ করিম, ওয়াশিংটনস্থ কাউন্সিলার এস এ এম এস কিবরিয়া, থার্ড সেক্রেটারি মহিউদ্দিন আহমদ ও আনোয়ারুল করিম।

গভর্নর ডা. এ এম মালিক এক বক্তৃতায় ‘পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংসের প্রয়াসে লিপ্ত শত্রুদের তৎপরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। সামরিক প্রশাসকের দফতর থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জনগণকে সতর্ক করে দেয়া হয় যে, কোনক্রমেই শেখ মুজিবের বিচার সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা যাবে না।

বগুড়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মওলানা নজির উল্লাহর নেতৃত্বে মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মাদ্রাসা শিক্ষকরা মন্ত্রীকে জানান, এলাকায় তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে।