৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

এদিন সচিবালয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. এ এম মালিকের সভাপতিত্বে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মন্ত্রীরা এইদিন নির্ধারিত বেতনের চেয়ে বেতন ভাতা কম গ্রহণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। এদিন বিকেলে গভর্নর ডা. এ এম মালিক সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়।

ঢাকায় এদিন 

২২ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খানের সঙ্গে পুরান ঢাকার শান্তি কমিটির নেতা এম আর এ রেজভীর নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও পুরনো ঢাকার বিহারি নেতাদের একটি দল সাক্ষাৎ করে।

২২ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় 'নয়া প্রাদেশিক মন্ত্রীবর্গ কর্তৃক সরকারী নীতির প্রতি আলোকপাত' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গতকাল এপিপির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারকালে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থদপ্তরের মন্ত্রী জনাব আবুল কাসেম বলেন যে, প্রদেশে ভারতীয় এজেন্ট ও তাহাদের সহযোগীদের হাতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারবর্গের পুনর্বাসনের জন্য তিনি কতকগুলি স্কিমের প্রস্তাব করিবেন। তিনি বলেন যে, যাহারা গোলযোগের সময়ে সীমান্তের অপর পাড়ের দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন, তাহাদের পুনর্বাসনের জন্য একটি পরিকল্পনার উপর তিনি কাজ করিতেছেন।'

ভারতে এদিন

২২ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাতে ৫০ হাজার টাকা অনুদান তুলে দেন তরুণ যাদুশিল্পী প্রদীপ চন্দ্র সরকার (পিসি সরকার জুনিয়র)। এর আগে পিসি সরকার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের জন্য কিছু সহায়তা করতে চান।

২২ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলে আগামী পহেলা অক্টোবর একদিনের সফরে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নি ভারত সফরে আসছেন। তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বৈঠকের কথা রয়েছে। মূলত ভিয়েতনামের হ্যানয় যাওয়ার পথে দিল্লিতে একদিন যাত্রাবিরতি করবেন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট।

২২ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে কলকাতায় শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে আসেন সম্মেলনে যোগ দেয়া ১৮টি দেশের ৩৫জন প্রতিনিধি। এদিন তারা কলকাতাস্থ ৮ নং থিয়েটার রোডের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সদর দপ্তরে আসেন। 

২২ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ভারতের শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন জাপানের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতা ওশিও সাকুরাউচি। এসময় সাকুরাউচি বলেন, বাংলাদেশের বিষয়টি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করবে জাপান। একই সঙ্গে শরণার্থী সমস্যার বিষয়টিও আলোচনা করবে জাপান। জাপান চায় এই সমস্যাটি একটি স্থায়ী সমাধানে আসুক।

২২ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে আসেন সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ বিষয়ক প্রধান এস কে জারাপকিন। এই সফরে তার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিংসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

পাকিস্তানে এদিন

২২ সেপ্টেম্বর করাচিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, 'পাকিস্তান পিপলস পার্টি পূর্ব পাকিস্তানের উপনির্বাচনে অংশ নেবে। তবে আমরা চাই জানুয়ারির আগেই যেন পাকিস্তানে পূর্ণ সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করে একই সাথে কেন্দ্রে ও প্রদেশসমূহে ক্ষমতা জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ২৬তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে নবনির্বাচিত ইন্দোনেশিয়ার ড. আদম মালিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'ভারত পাকিস্তানের উচিত এক সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া তারা কী করবে। এজন্য দুই পক্ষকেই ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ এই বিতর্কের সমাধান একমাত্র আলোচনার মধ্য দিয়েই আসতে পারে।

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

২২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মুক্তিবাহিনীর ৬০ জন গেরিলার একটি দল ভারতের মেঘালয়ের ক্যাম্প থেকে গেরিলা ট্রেনিং শেষে ৪টি নৌকায় বাংলাদেশে প্রবেশের পথে কসবা এলাকায় শালদা নদীতে হানাদার বাহিনী তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় হানাদার বাহিনীর গুলিতে চার মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং একজন আহত হন।

২১ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের শরণখোলার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল তাফালবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্পের উপর হামলা চালায়। এসময় মুক্তিবাহিনী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে গড়ে তোলে। এসময় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সাড়ে ৩ ঘণ্টা ব্যাপী যুদ্ধ হয়। কিন্তু যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী সামাল দিতে না পেরে পার্শ্ববর্তী বগা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে খবর দেয়। সেখান থেকে মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দল এসে হানাদারদের ওপর পিছন দিক থেকে আক্রমণ শুরু করলে যুদ্ধে পরাজয়ের কথা ভেবে হানাদার বাহিনী ও রাজাকারেরা পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে ৪ রাজাকারসহ বেশ কয়েকজন হানাদার নিহত হয় এবং ১০টি রাইফেল উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। 

২২ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামকে হানাদার সেনারা আটক করে তালতলা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ক্যাম্পটি আক্রমণ করে। এসময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা যুদ্ধের পর আব্দুস সালামকে মুক্ত করে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে আসে মুক্তিযোদ্ধারা।

২২ সেপ্টেম্বর ৭ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কাটাখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। এসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২ সৈন্য নিহত হয় এবং ১০ জন আহত হয়।

২২ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার তেঁতুলবাড়িয়াতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় মুক্তিবাহিনী গ্রামের চার দিক থেকে ঘিরে ফেলে বৃষ্টির মতো গুলি শুরু করে। এসময় হানাদার বাহিনীর ৩ সৈন্য নিহত হয় এবং ৫ জন সৈন্য গুরুতর আহত হয়। যুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনী হানাদারদের প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।

২২ সেপ্টেম্বর ২ নম্বর সেক্টরের শ্রীপুরে সুবেদার গোলাম আম্বিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দল হানাদার বাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। মুক্তিবাহিনীর হামলায় এসময় হানাদার বাহিনীর ২ সৈন্য নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।

২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর ইসলামপুর ইউনিয়নে মুক্তিবাহিনীর একটি দল ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে বৈঠকরত রাজাকারদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় শান্তি কমিটির ২ নেতাকে অস্ত্রসহ আটক করে মুক্তিবাহিনী।

২২ সেপ্টেম্বর ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কোটা এলাকায় অবস্থানরত হানাদার সেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই হামলায় হানাদার বাহিনীর ৪ জন সৈন্য নিহত হয়।