৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

০৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

কুমিল্লায় পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর মন্দভাগ অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে পাকসেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করে। পাকবাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য পরাজয়ের আক্রোশে ফেরার পথে মুক্তিবাহিনীর মইনপুর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দু’ঘণ্টার এ যুদ্ধে ৪০ জন পাকসৈন্য হতাহত হয়। অপরদিকে ৯জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর প্রবল গোলাবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধা দল তাদের অবস্থা পরিত্যাগ করে ৬০০ গজ পিছিয়ে বায়েকের নিকট জেলা বোর্ডের রাস্তায় নতুন অবস্থান স্থাপন করে।


সিলেটে মুক্তিবাহিনী শাহবাজপুর – বিয়ানীবাজার সড়কে পাকহানাদার বাহিনীর টহলদার দলকে অ্যামবুশকরে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।


৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ৪০ জন যোদ্ধার একটি দল সাইলকুপা থানার আলফাপুর গ্রামে পাকবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্যকে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৫৩ জন সৈন্য ও ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরদিকে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে ১৬ টি রাইফেল ও ৭টি গোলার বাক্স দখল করে।


পাকহানাদার বাহিনী দালাল রাজাকারদের নিয়ে কয়েকটি নৌকায় করে সুনামগঞ্জ সদর থানার ভাঁদের টেক মুক্তিবাহিনী অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। এ খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় এবং তাদের আওতায় আসার সাথে সাথে পাকবর্বরদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা সম্মুখে এগুতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য হতাহত হয়। অপরদিকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।


৩নং সেক্টরে তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয়।


ঔপনিবেশিক দেশ ও জনগণকে স্বাধীনতা দানের ঘোষণা কার্যকরিকরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘ বিশেষ কমিটির সভায় বিশ্বশান্তি পরিষদের ভারতীয় প্রতিনিধি কৃষ্ণ মেনন বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে ঐ কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।


বাংলাদেশ ফোর্স হেডকোয়ার্টার – এর গণসংযোগ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘যুদ্ধ বিষয়ক বুলেটিন’ এ বলা হয় : মুক্তিবাহিনী শাসিআলী, গাজীপুর পানছড়া, জামবাড়ি ও কুটিশ্বরে শত্র“বাহিনীর ৪৫ জনকে নিহত এবং ১৫ জনকে আহত করে।


পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত ইসলামীর আমীর গোলাম ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ প্রশ্ন ও বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিশালী লবিকে মোকাবেলা করার জন্য পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলে হামিদুল হক চৌধুরী, মৌলবী ফরিদ আহমদ ও বিচারপতি হামুদুর রহমান, ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, এ. কিউ.এম শফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিন, আব্দুস সবুর ও ফজলুর কাদের চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

 

৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ছদ্মবেশে পাকসেনাদের ক্যাম্পে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গেরিলারা

রূপগঞ্জের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা গ্যাস লাইন ধ্বংস করে দেয়। ফাইল ছবি

রূপগঞ্জের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা গ্যাস লাইন ধ্বংস করে দেয়। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করবার জন্য আওয়ামী লীগ এবং অন্য আরো চারটি দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে দুইদিনব্যাপী বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার জন্য আওয়ামী লীগসহ পাঁচটি প্রধান রাজনৈতিক দলের আট-সদস্য বিশিষ্ট ‘সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করা হয়।

আব্দুল হামিদ খান ভাসানী  (সভাপতি) – ন্যাপ ভাসানী, মণি সিং (সভাপতি) – বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, মোজাফ্ফর আহমেদ (সভাপতি) – ন্যাপ মোজাফ্ফর, মনোরঞ্জন ধর (সভাপতি) – বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস, তাজউদ্দিন আহমেদ (প্রধানমন্ত্রী) – পদাধিকারবলে, খন্দকার মোশতাক আহমেদ (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) – পদাধিকারবলে এবং আওয়ামী লীগের আরও দুজন সদস্য (যাদের নাম পরে দেয়া হবে বলে জানানো হয়) এ পরিষদের সদস্যভুক্ত হন। এদিন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এর সভাপতিত্বে দলসমূহের নেতৃবৃন্দের দুই-দিনের সভা শেষে এ পরিষদ ঘোষণা করা হয়। 

বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র জানান, ‘বাংলাদেশের ঔপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী শোষকদের’ বিনাশে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করে সকল সম্প্রদায়ের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদানের বিষয়টি কমিটি অবশ্যই নিশ্চিত করবে। কমিটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আস্থাবান মুক্তিকামী জনসাধারণের মধ্যে একতার প্রতিফলন ঘটানো নিশ্চিত করবে। সভায় বাংলাদেশ সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ভারতসহ বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও সভায় যুদ্ধোপকরণাদি প্রদান করে মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সরকারকে ‘সক্রিয় সহযোগিতা’ প্রদান করতে তাদের প্রতি আকুল-আবেদনও জানানো হয়।

কুমিল্লায় পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেও পাকহানাদার বাহিনী সেনেরহাট দখল করতে না পেরে মুক্তিবাহিনীর মন্দভাগ অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে পাকসেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করে। পাকবাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য পরাজয়ের আক্রোশে ফেরার পথে মুক্তিবাহিনীর মইনপুর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দু’ঘণ্টার এ যুদ্ধে ৪০ জন পাকসৈন্য হতাহত হয়। অপরদিকে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর প্রবল গোলাবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধা দল তাদের অবস্থা পরিত্যাগ করে ৬০০ গজ পিছিয়ে বায়েকের কাছে জেলা বোর্ডের রাস্তায় নতুন অবস্থান স্থাপন করে। হানাদাররা এ অবস্থানের উপরও হামলা চালায় কিন্তু মুক্তিফৌজের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়।

ঢাকা অঞ্চলের রূপগঞ্জের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করা গ্যাস লাইন পাকিস্তানী প্রকৌশলীরা মেরামত করে নেয়। এই সংবাদ মুক্তিফৌজের হেডকোয়ার্টারে পৌঁছালে ঘোড়াশালের মুক্তিফৌজের গেরিলাদের গ্যাস লাইনটি মেঘনা নদীর মাঝে ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুসারে গেরিলারা রাতে নৌকা করে নদীর মাঝামাঝি জায়গায় যায় এবং প্রায় ১৫-২০ ফুট পানির নিচে অবস্থিত গ্যাস পাইপ ডিমোলিশন লাগিয়ে ‘ডিলে সুইচ’ এর সাহায্যে উড়িয়ে দেয়। ফলে গ্যাস পাইপের ভেতর পানি ঢুকে যায়। এতে গ্যাস সরবরাহ অনেক দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবেশ ও গেরিলা আক্রমণ ঠেকানোর জন্য পাকসেনারা শহরের বিভিন্ন স্থানে অনেক ক্যাম্প ও চেক পোস্ট বসায়। বাসাবো এলাকায় এমন একটি ক্যাম্পে একদল পাঞ্জাবি পুলিশ ও রাজাকার পাহারায় থাকত। গেরিলাদের কয়েকজন সাধারণ বেশে ‘ভাল মানুষের মতো’ প্রতিদিন তাদের সঙ্গে আলাপ করতে করতে ভাব জমায়। এদিন ৫ জন আলাপী গেরিলা বেলা ২টায় পুলিশ ও রাজাকারদের সঙ্গে দ্বিপ্রহরিক বিশ্রামকালে আলাপ জুড়ে দেয় এবং সুযোগ বুঝে হঠাৎ এক সময় শত্রুদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। আশপাশে লুকিয়ে থাকা গেরিলারাও শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষে ১১ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ও কয়েকজন রাজাকার নিহত হয় ও বাকিরা ক্যাম্প ছেড়ে চম্পট দেয়।

সিলেটে মুক্তিবাহিনী শাহবাজপুর – বিয়ানীবাজার সড়কের উপর পাকহানাদার বাহিনীর টহলদারদলকে অ্যামবুশ করে। পাকসেনারা প্রতিরোধের চেষ্টা না করে পিছু হটে যায়। এর পরে শাহবাজপুরে বেশ কিছুদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ৪০ জন যোদ্ধার একটি দল শৈলকুপা থানার আলফাপুর গ্রামে পাকবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্যকে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৫৩ জন সৈন্য ও ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরদিকে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে ১৬টি রাইফেল ও ৭টি গোলার বাক্স দখল করে।

পাকহানাদার বাহিনী দালাল রাজাকারদের নিয়ে কয়েকটি নৌকায় করে সুনামগঞ্জ সদর থানার ভাদেরটেক মুক্তিবাহিনী অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। এ খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় এবং তাদের আওতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে পাকবর্বরদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা সম্মুখে এগুতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য হতাহত হয়। অপরদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। ৩ নম্বর সেক্টরে তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয়।

ঔপনিবেশিক দেশ ও জনগণকে স্বাধীনতা দানের ঘোষণা কার্যকরকরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘ বিশেষ কমিটির সভায় বিশ্বশান্তি পরিষদের ভারতীয় প্রতিনিধি কৃষ্ণ মেনন বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে ঐ কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ফোর্স হেডকোয়ার্টারের গণসংযোগ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘যুদ্ধ বিষয়ক বুলেটিন’ এ বলা হয়: মুক্তিবাহিনী শাসিআলী, গাজীপুর পানছড়া, জামবাড়ি ও কুটিশ্বরে শত্রুবাহিনীর ৪৫ জনকে নিহত এবং ১৫ জনকে আহত করে।

পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত ইসলামীর আমীর গোলাম ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ প্রশ্ন ও বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিশালী লবিকে মোকাবেলা করার জন্য পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলে হামিদুল হক চৌধুরী, মৌলবী ফরিদ আহমদ ও বিচারপতি হামুদুর রহমান, ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিন, আব্দুস সবুর ও ফজলুর কাদের চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

দৈনিক হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে ‘ইউরোপে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি’ শিরোনামের সংবাদভাষ্য থেকে জানা যায়, অক্টোবর মাসে মিসেস গান্ধীর পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকা সফরের কথা রয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের ভুমিকার যথাযথ প্রেক্ষাপট তুলে ধরাই এই সফরের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।