৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

০১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এই দিনে

 মুক্তিবাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার আইয়ুব আলী ও সেকশন কমান্ডার আমজাদ হোসেন ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানায় পাকবাহিনীর মল্লিকবাড়ি ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ১২ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।


৮নং সেক্টরের বনগাঁও সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের রঘুনাথপুর ঘাঁটির ওপর গোলা আক্রমণ চালায়। এতে পাকসেনারা নিশ্চুপ থাকে। এ আক্রমণে পাকসেনাদের ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।


৮নং সেক্টরের শিকারপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ২ ইঞ্চি মর্টার ও এস.এল.আর-এর সাহায্যে পাকসেনাদের মহেশকান্দি ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এতে পাকসেনারা ৩ ইঞ্চি মর্টার ও এমএমজি’র সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৫ জন হতাহত হয়। মুক্তিবাহিনী কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।


মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল ঢাকা-দাউদকান্দি সড়কে বারুনিয়া ও ভবেরচর সেতু দুটি বিস্ফোরক লাগিয়ে বিধ্বস্ত করে। এতে পাকহানাদারদের ঢাকা-কুমিল্লা যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।


ভারতের নয়াদিল্লীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ মিশনের উদ্বোধন করা হয়।


প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্যারিস থেকে প্রকাশিত ‘লা ফিগারো’ পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, ‘ভারত যদি এতে বাড়াবাড়ি করে তবে সর্বাত্মক যুদ্ধ করতে হবে। ’তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সীমান্ত ছাড়া সব জায়গাই এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে’। এক প্রশ্নের জবারে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ বাতিল করে দেশদ্রোহীদের বিতাড়িত করেছি।’


প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ৭৭নং সামরিক আদেশ পুনর্গঠন করে ৮৯ নং বিধি জারি করে। এই এদেশে বলা হয়, কোনো লোক এমন কোনো গুজব বা সামরিক আইনের সমালোচনা করতে পারবে না, যাতে পাকিস্তানের অখণ্ডতা কিংবা সংহতি বিনষ্ট হয়।


ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), আবদুর রাজ্জাক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), সারোয়ার মুর্শেদ (ইংরেজী), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাযহারুল ইসলাম (বাংলা), বাংলা একাডেমীর আবু জাফর শামসুদ্দিন ও ১৩ জন সি.এস.পি অফিসারকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়।

 

১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা এলাকায় এক যুদ্ধে ১৬ জন পাকসৈন্য ও ২৪ জন রাজাকার নিহত হয়

 

কালীগঞ্জ এলাকায় গেরিলারা নৌকার ওপর হালকা মেশিনগানের গুলি চালায়। ফাইল ছবি

কালীগঞ্জ এলাকায় গেরিলারা নৌকার ওপর হালকা মেশিনগানের গুলি চালায়। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল আজকে মতোই বুধবার। এদিন মুক্তিবাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার আইয়ুব আলী ও সেকশন কমান্ডার আমজাদ হোসেন ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানায় পাকবাহিনীর মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ১২ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। এদিনে মুক্তিফৌজের গেরিলারা নওয়াবগঞ্জ থানা আক্রমণ করে। এই আক্রমণে থানার সমস্ত অস্ত্র-শস্ত্র গেরিলাদের হস্তগত হয়।

বিকেল ৫টায় কালীগঞ্জ থানার দারোগা ৭০ জন পাকসেনা এবং ৭০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ নৌকাযোগে যাবার সময় নৌকাটি অ্যামবুশের আওতায় এলে গেরিলারা নৌকার ওপর হালকা মেশিনগানের গুলি চালায়। গুলিতে নৌকার আরোহী পাকসেনা, পুলিশ এবং দারোগা নিহত হয় এবং নৌকাটি ডুবে যায়।

ঢাকার আজিমপুরে গেরিলারা একটি রাজাকার দলের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ৪ জন রাজাকারকে হত্যা এবং ৪টি রাইফেল ও ৬০ রাউন্ড গুলি দখল করে। টঙ্গীতেও গেরিলারা একটি রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা, ৪টি রাইফেল দখল করে নেয়। 

এদিন বিকেল ৪টের সময় মুক্তিফৌজ ৩” মর্টারের সাহায্যে হানাদার বাহিনীর মন্দভাগ ও নারায়ণপুর অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আক্রমণের আকস্মিকতায় পাকসেনারা বিচলিত হয়ে পড়লে প্রতি আক্রমণ করতে ব্যর্থ হয়। পাকবাহিনীর একজন অধিনায়ক নিহত হয়। নারায়ণপুর মুক্তিফৌজ আক্রমণে তিনটি বাঙ্কার ধ্বংস, ৫ জন সৈন্য নিহত ও ৭ জন আহত হয়।

চালনা এলাকায় এক যুদ্ধে ১৬ জন পাকসৈন্য ও ২৪ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিসেনারা ১টি এলএমজি এমকে-১, ১২টি এলএমজি ম্যাগাজিন, ৪টি মার্ক থ্রি রাইফেল, ২টি মার্ক ফোর রাইফেল, ১টি ম্যাগাজিন বক্স এবং ৭টি বড় কাঠের নৌকা জব্দ করে। ৮ নম্বর সেক্টরের বনগাঁও সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের রঘুনাথপুর ঘাঁটির ওপর গোলা আক্রমণ চালায়। এতে পাকসেনারা নিশ্চুপ থাকে। এ আক্রমণে পাকসেনাদের ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী মর্টার ও এসএলআর -এর সাহায্যে পাকসেনাদের মহেশকান্দি ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়।

পাকসেনারা মর্টার ও এমএমজির সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৫ জন হতাহত হয়। মুক্তিবাহিনী কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদ নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে। মুক্তিবাহিনী গেরিলা দল ঢাকা-দাউদকান্দি সড়কে বারুনিয়া ও ভবেরচর সেতু দুটি বিস্ফোরক লাগিয়ে বিধ্বস্ত করে। এতে পাক হানাদারদের ঢাকা-কুমিল্লা যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের নয়াদিল্লীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ মিশনের উদ্বোধন করা হয়।

পাকিস্তানের ৬ নম্বর উপ-সামরিক আইন প্রশাসক ১৩ জন সিএসপি অফিসারকে  সামরিক আদালতে তলব করে। সামরিক  আদালতে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হাজির হবার নির্দেশ যাদের দেয়া হয় তারা হলেন ১) খন্দকার আসাদুজ্জামান, ২) হোসেন তৌফিক ইমাম, ৩) আব্দুস সামাদ, ৪)  নুরুল কাদের খান, ডিসি পাবনা, ৫) সৈয়দ আব্দুস সামাদ,  উপসচিব, ৬) কুদরতে এলাহি চৌধুরী, এডিসি রাজশাহী, ৭)  খসরুজ্জামান, এসডিও কিশোরগঞ্জ,  ৮) কাজী রকিবুদ্দিন, এসডিও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৯) ওয়ালিউল ইসলাম, এসডিও মাগুরা, ১০) আকবর আলি খান, এসডিও হবিগঞ্জ, ১১) কামাল সিদ্দিকি, এসডিও নড়াইল, ১২) তৌফিক এলাহি চৌধুরী, এসডিও মেহেরপুর,  ১৩) সাদত হুসাইন, সহকারী কমিশনার।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্যারিস থেকে প্রকাশিত ‘লা ফিগারো’ পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভারত যদি বাড়াবাড়ি করে তবে সর্বাত্মক যুদ্ধ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সীমান্ত ছাড়া সব জায়গায়ই এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘আওয়ামী লীগ বাতিল করে দেশদ্রোহীদের বিতাড়িত করেছি।’

করাচী থেকে প্রকাশিত ‘ডেইলি নিউজ’ ‘আগামী দুই সপ্তাহের মাঝে মুজিবের বিচার সম্পন্ন হবে’ শিরোনামের সংবাদ প্রকাশ করে জানায়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগা শাহী গতকাল (আগস্ট ৩১) দেশের আস্থার উন্নয়নের জন্য পাকিস্তান সরকারের নতুন পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে মহাসচিব উ’থান্টকে অবহিত করেন। এরপর তিনি নিউইয়র্কে সংবাদদাতাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন দেশের আস্থা অর্জনের জন্য এবং এই ক্ষেত্রে আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এই পদক্ষেপগুলো ‘আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে’ বাস্তবায়ন করা হবে। 

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১১ আগস্ট তার বিচার শুরু হয়েছে এবং আগামী দুই সপ্তাহের মাঝে তা শেষ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া এবং বিদ্রোহ ও সহিংসতা উস্কে দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। শেখ মুজিবের বিচার কোথায় হচ্ছে এই ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান, অবশ্য তিনি জানিয়েছেন যে শেখ মুজিবের পছন্দ অনুযায়ী এ কে ব্রোহী, যিনি পাকিস্তানের একজন সেরা সাংবিধানিক আইনজীবী, তিনি শেখ মুজিবের পক্ষে এ মামলায় অংশ নিচ্ছেন।