৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২৬ আগষ্ট ১৯৭১ এই দিনে

এদিন মার্কিন সিনেটের শরণার্থীবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান প্রভাবশালী মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে ভারত সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের উপর চরম অমানবিকতার বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।

গত এক সপ্তাহ ভারতের বিভিন্ন অংশে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন এডওয়ার্ড কেনেডি। একই সঙ্গে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। পূর্ব বাংলার বিষয়ে ভারতের মত এবং অবস্থান নিয়েও প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে অবহিত করেন এডওয়ার্ড কেনেডি। এডওয়ার্ড কেনেডি প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বলেন, 'আপনি ভাবতেও পারবেন না মানুষ মানুষের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করতে পারে। গ্রামের পর গ্রাম, জনপদের পর জনপদ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শরণার্থীরা মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত কারণ ওরা কী অবস্থা থেকে পালিয়ে এসেছে কেবল তারাই জানে। পূর্ব বাংলায় তাদের ওপর যে ধরনের পৈশাচিকতা ও বর্বরতা চালানো হয়েছে তা ইতিহাসে বিরল। নিরীহ মানুষের উপর নির্মম কায়দায় গণহত্যা চালানো হয়েছে। প্রাণে বাঁচতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে নিরীহ মানুষ। আপনার কাছে অনুরোধ মানবিক দিক থেকে পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি অবলোকন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। এই গণহত্যা নিপীড়ন ও নির্যাতনের জন্য প্রধানত দায়ী পাকিস্তান সরকার। অথচ আমরা তাদের সাহায্য দিয়েছি। তাদের যে সামরিক সাহায্য দিয়েছি সেই সামরিক শক্তি অপপ্রয়োগ করছে তারা পূর্ব বাংলার সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর।' একই সঙ্গে এডওয়ার্ড কেনেডি পাক ভারত উত্তেজনা নিরসনে মার্কিন প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে তা নিরসন করতে যুক্তরাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। এই উত্তেজনা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ।'

পরে সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি বলেন, 'পাকিস্তানকে এখনো স্বাভাবিকভাবে সমরাস্ত্র সহায়তা দেয়ার কোনো যুক্তি হতে পারে না। যাদের কাছে তাদের নিজের দেশের লোকদেরই কোনো মূল্য নেই। পূর্ব বাংলায় যা হয়েছে তাতে কোনো বিবেকবান মানুষ চুপ করে থাকতে পারে না। পূর্ব বাংলার বিষয়ে আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন তিনি ভেবে দেখবেন। কিন্তু এখানে ভেবে দেখার অবকাশ নেই। পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসন এখন পূর্ব বাংলাকে মনুষ্যবিহীন জনপদে পরিণত করছে। মার্কিন সরকারের উচিত পাকিস্তানকে সমস্ত প্রকার সমরাস্ত্র সহায়তা বন্ধ করে দেয়া। একই সঙ্গে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে কাজ করা।'

ঢাকায় এদিন 

২৬ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি শামসুল হুদা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা দেখে দুষ্কৃতকারীদের দমন করুন। এরা দেশ ও জাতির শত্রু। এদের দমন করতে আরও কঠোর হন।'

২৬ আগস্ট ইস্ট আফ্রিকান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার একটি অভিমত ইত্তেফাক পত্রিকায় 'নয়াদিল্লী ও কলিকাতা হইতেই মুজিবকে সমর্থন দেওয়া হয়' শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয় 'ইস্ট আফ্রিকান স্তান্দার পত্রিকার সম্পাদক বলিয়াছেন যে 'নয়াদিল্লী ও কলিকাতা হইতেই শেখ মুজিবকে সমর্থন দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ভারতের এই আশা ছিল যে, মুজিবের বিচ্ছনতাবাদী ধারণা বাস্তবায়িত করা যাইবে। সত্যিই যদি ইহা হইত, তাহা হইলে পাকিস্তান খণ্ডবিখণ্ড হইয়া যাইত। উক্ত সম্পাদক তাঁহার পাঠকদের সামনে একটি পক্ষপাতহীন বিবরণ তুলিয়া ধরার জন্য সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করিয়া গিয়াছেন।' 

২৬ আগস্ট ইত্তেফাক পত্রিকায় পিপিআইএ, এএফপি সূত্রে পাওয়া 'প্রেসিডেন্টের নিকট বন্দরনায়কের পত্র' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, '২৫শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী মিসেস বন্দরনায়েক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নিকট লিখিত এক পত্রে পাক-ভারত উপমহাদেশের অধিকতর উত্তেজনা বৃদ্ধি রোধের ও শান্তি নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালানোর ব্যাপারে তাহার সম্মতির আভাস দিয়েছেন বলিয়া গতকাল এখানে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবরে উল্লেখ করা হয়। সরকারী পত্রে বলা হয় যে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে একটি বাস্তব সারা প্রদান করিয়াছেন। অবশ্য উক্ত সূত্রে ইহা উল্লেখ করা হয় যে মিসেস বন্দরনায়েকের প্রস্তাবটি পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যার ব্যাপারে মদ্ধস্ততা করার কোন প্রস্তাব নহে।'

পাকিস্তানে এদিন 

২৬ আগস্ট রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তার। এসময় তারা পরিস্থিতি অনুকূল সাপেক্ষে নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে কথা বলেন।

২৬ আগস্ট রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উপদেষ্টা ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির চার সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ দলের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা ব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পিপিপির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা বলেন, 'স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা মূলত শাসনতান্ত্রিক বিষয়ে ও নির্বাচন নতুন করে আয়োজন করার বিষয়ে মত দিয়েছি। তারা বলেছে শাসনতান্ত্রিক বিষয়ে আমাদের সবারই ঐকমত্যে আসা প্রয়োজন।'

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

২৬ আগস্ট আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরেসে পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের সাহায্যার্থে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বুয়েন্স এইরেসের যুদ্ধবিরোধী নাগরিক সমাজ। মূলত প্রখ্যাত সাহিত্যিক ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ও সালভাদর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার কুইয়েসের নেতৃত্বে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানে যুদ্ধবিরোধী ও শান্তির বার্তা নিয়ে গান, নাচ ও কবিতা পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। এই অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সমস্ত অর্থ রেডক্রসের তহবিলে জমা দেয়া হয়।

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

২৬ আগস্ট কুমিল্লায় ব্রাহ্মণপাড়ার কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৬টি নৌকার উপর অতর্কিত হামলা চালায় মুক্তিবাহিনী। এসময় বেশ কয়েকজন হানাদার সেনা নিহত হয়। এসময় হানাদার বাহিনীর বাকি সৈন্যরা কয়েকটি নৌকায় পালাতে গেলে নাগাইশে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার সুবেদার নজরুলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দল তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। এই যুদ্ধে ১৮ জন হানাদার সেনা নিহত হয়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন শহীদ হন।

২৬ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন ইদ্রিস ও সুবেদার মজিদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর দুটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কানসাট অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এসময় মুক্তিবাহিনীর ভয়াবহ আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা কানসাট ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সংগঠিত হয়ে ফের কানসাটের উপর আক্রমণ চালায়। এরপর মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

২৬ আগস্ট ময়মনসিংহের ভালুকায় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মল্লিকবাড়ি ঘাঁটির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলায় ৮ জন হানাদার সেনা নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন হানাদার সৈন্য আহত হয়।

২৬ আগস্ট রাজশাহীর দুর্গাপুরে মুক্তিবাহিনীর একটি দলের উপর অতর্কিত হামলা চালায় পাকিস্তানি হানাদার সেনারা। এসময় মুক্তিবাহিনী মর্টার ও হালকা মেশিনগানের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যায়।

২৬ আগস্ট ফেনীর ছাগনাইয়ায় মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আমজাদহাট প্রতিরক্ষাব্যূহের ওপর মর্টার আক্রমণ চালায়। এসময় মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথমে পাল্টা জবাব দিলেও এক পর্যায়ে হানাদার সেনারা অস্ত্র ও রসদ ফেলে মুহুরী নদী পার হয়ে চলে যায়।

২৬ আগস্ট টাঙ্গাইলের জলপাই গ্রামে কাদেরিয়া বাহিনীর সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং একজনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়।

 

২৬ আগস্ট ১৯৭১: টাঙ্গাইল ও ছাগলনাইয়ায় দুইজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন 

 

আহত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে অন্যরা। ফাইল ছবি

আহত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে অন্যরা। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ২৬ আগস্ট দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ৭ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন ইদ্রিস ও সুবেদার মজিদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর দু‘টি দল পাকবাহিনীর কানসাট অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড চাপে পাকসেনারা কানসাট ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। অল্প সময় পরে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী এই আক্রমণের মুখে পিছনে সরে আসে। 

রাজশাহী জেলার দুর্গাপুরে হাবিলদার শফিকের দলের উপর অতর্কিতে পাকসেনারা আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা মর্টার ও হালকা মেশিনগানের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যায়। আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল ভালুকা থানায় পাকসেনাদের মল্লিকবাড়ি ঘাঁটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৮ জন পাকসেনা নিহত ও অনেক সৈন্য আহত হয়।

মুক্তিবাহিনী ছাগলনাইয়া থানায় পাকবাহিনীর আমজাদহাট প্রতিরক্ষাব্যূহের ওপর মর্টার আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে পাকসেনারা মুহুরী নদী পার হয়ে খাদ্যদ্রব্য ও অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ফেনীতে মুক্তিবাহিনী ব্রাহ্মণপাড়ার কাছে পাকসেনাদের ৬টি নৌকার উপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। বাকী সৈন্যরা কয়েকটি নৌকায় পালাতে গেলে নাগাইশে সুবেদার নজরুলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী তাদের উপর আক্রমণ রচনা করে। এতে ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। এই যুদ্ধে গেরিলাযোদ্ধা আবদুল মতিন শহিদ হন।

টাঙ্গাইল শহরের তিনমাইল দূরে জলপাই গ্রামে কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন এবং একজনকে পাকহানাদাররা ধরে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পূর্ব পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি শামসুল হুদা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, সরেজমিনে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা দেখে ‘দুষ্কৃতকারী’ দমনে আরও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিন।

 

একাত্তরের এই দিনেঃ ২৬ আগস্ট, ১৯৭১

৭নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন ইদ্রিস ও সুবেদার মজিদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর দু‘টি দল পাকবাহিনীর কানসাট অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায় । মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড চাপে পাকসেনারা কানসাট ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় । অল্প সময় পরে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করে । মুক্তিবাহিনী এই আক্রমণের মুখে পিছনে সরে আসে ।

রাজশাহী জেলার দুর্গাপুরে হাবিলদার শফিকের দল অতর্কিতভাবে পাকসেনা কর্তৃক আক্রান্ত হয় । মুক্তিযোদ্ধারা মর্টার ও হালকা মেশিনগানের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে নিরাপদে নিজ অবস্থানে ফিরে আসে ।

আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল ভালুকা থানায় পাকসেনাদের মল্লিকবাড়ি ঘাঁটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় । এই আক্রমণে ৮ জন পাকসেনা নিহত ও অনেক সৈন্য আহত হয় ।

মুক্তিবাহিনী ছাগলনাইয়া থানায় পাকবাহিনীর আমজাদহাট প্রতিরক্ষাব্যূহের ওপর মর্টার আক্রমণ চালায় । মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে পাকসেনারা মুহুরী নদী পার হয়ে খাদ্যদ্রব্য ও অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পিছু হটতে বাধ্য হয় ।

ফেনীতে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ৬টি নৌকাকে ব্রাহ্মণপাড়ার কাছে তীব্র আক্রমণ চালায় । এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় । বাকী সৈন্যরা কয়েকটি নৌকায় পালাতে গেলে নাগাইশে সুবেদার নজরুলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী তাদের ওপর আক্রমণ রচনা করে । এতে ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয় । এই যুদ্ধে গেরিলাযোদ্ধা আবদুল মতিন শহীদ হন ।

টাঙ্গাইল শহরের তিনমাইল দূরে জলপাই গ্রামে কাদেরিয়া বাহিনীর সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় । এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং একজনকে পাকহানাদাররা ধরে নিয়ে যায় ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন ।

পাকহানাদাররা ‘শিল্পরক্ষী বাহিনী’ নামে একটি বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় । এ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে-পূর্ববাংলায় ক্ষীণ হলেও যেটুকু শিল্প বিকশিত হয়েছে তা ধ্বংস করা ।

পূর্ব পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি শামসুল হুদা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উদ্দেশ্যে আহবান জানান, সরেজমিনে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা দেখে ‘দুষ্কৃতকারী’ দমনে আরও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়ার।