২০ আগষ্ট ১৯৭১ এই দিনে
এদিন সামরিক আইন প্রশাসক ও গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ১৩ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
এই ১৩ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য ছিলেন- নূরজাহান মোর্শেদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, এম ওয়ালিউল্লাহ, কাজী জহিরুল কাইয়ুম, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, খোরশেদ আলম, নূরুল ইসলাম চৌধুরী, মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোস্তাফিজুর রহমান, খালেদ মোহাম্মদ আলী, খাজা আহমদ, নূরুল হক এবং মোহাম্মদ হানিফ।
দেশব্যাপী এদিন
২০ আগস্ট জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠকের প্রস্তাবে বলা হয়, 'ভারতীয় যুদ্ধবাজ ও তাদের চরদের যোগসাজশে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্তদের দমনে সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, মজলিশে শুরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে।'
২০ আগস্ট দেশের কোনো এক মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র সাপ্তাহিক 'জয়বাংলা' পত্রিকার চলতি সংখ্যার সাম্প্রতিক যুদ্ধ প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মুক্তিবাহিনী খুলনায় পাকিস্তানি বাহিনীর শ্যামনগর অবস্থানের ওপর তিনটি কলামে যথাক্রমে ক্যাপ্টেন হুদা, লে. বেগ এবং নায়েব সুবেদার আবদুল গফুর ও হাবিলদার সোবাহানের নেতৃত্বে তীব্র আক্রমণ চালায়। তুমুল যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থান ত্যাগ করে এবং শ্যামনগর মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। এ সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী ৪ জন পাকিস্তানি সেনার মরদেহ উদ্ধার করে ও ৪ জনকে আহত অবস্থায় বন্দী করে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার ইলিয়াসসহ ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে যায়।'
২০ আগস্ট সাপ্তাহিক জয় বাংলা পত্রিকায় আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 'সামরিক জান্তার এখন উভয় সংকট' শিরোনামে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গিশাহী বিচার-প্রহসনের নামে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রাণ হননের যে ষড়যন্ত্র করছে তাতে বাংলাদেশের অবরুদ্ধ এলাকার জনসাধারণের মনে তীব্র ক্ষোভ ও ক্রোধের সঞ্চার হয়েছে। ফলে অবরুদ্ধ এলাকা মুক্তি সংগ্রাম আরও সংহত ও জোরদার হয়ে উঠছে। বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসন বন্ধ করার এবং তার মুক্তির দাবিতে ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার পড়তে শুরু করেছে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে হত্যাযজ্ঞের উল্লাসে মত্ত সামরিক জান্তার ঐক্যজোটে মারাত্মক কোন্দল দেখা দিয়েছে বলে অবরুদ্ধ এলাকা থেকে সদ্য আগত জনৈক বিশিষ্ট চিকিৎসাবিদ গত বৃহস্পতিবার এ সংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের অবরুদ্ধ এলাকার জল্লাদগণের ও সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান গোড়াতেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পক্ষপাতী ছিল। অপরদিকে সামরিক জান্তার অপর একটি দল চাচ্ছে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করতে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রাণের মূল্যে বাংলাদেশকে নেওয়া সম্ভব কিনা তা বাজিয়ে দেখতে। কিন্তু, এখন তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু, উভয়কেই মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। তাই তারা এক্ষুণে গোপনে নাকি এমন এক বন্ধুর সন্ধান করছে যে পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গিশাহীকে এই উভয় সঙ্কটের চোরাবালি থেকে উদ্ধার করতে পারে। তাই তারা নাকি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের দোরে ধর্না দিচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উ থান্টও বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিচার সম্পর্কে ইসলামাবাদের আকস্মিক নীরবতার কারণ জানা সম্ভব হয়নি।'
ভারতে এদিন
২০ আগস্ট দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সুইস নিউজ এজেন্সি ও সুইস রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যদি আমরা পাকিস্তানের সকল কথা সত্য বলে মেনেও নিই, তবে লাখ লাখ শরণার্থী কেন পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে? কী জবাব হবে এটির? তারা বাধ্য না হলে কেন তারা দেশত্যাগ করে ভিন্ন একটি দেশে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিবে। জাতিসংঘ ওপরে ওপরে কেবল ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছে। অথচ এই প্রশ্নের জবাবের বিষয়ে তারা আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। যাদের কারণে তারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, স্বজন হারিয়েছে। তাহলে পূর্ব বাংলার মানুষ কীভাবে পূর্ববর্তী শাসকদের বিশ্বাস করবে?
পাকিস্তানে এদিন
২০ আগস্ট পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান নিয়মিত কাজের আড়ালে একটি বিমান ছিনতাই করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিকল্পনা অনুযায়ী এদিন করাচীর মাসরুর বিমান ঘাঁটি থেকে সকাল ১১.১৫ মিনিটে পাঞ্জাবি পাইলট রাশেদ মিনহাজসহ টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান ছিনতাই করে ভারত অভিমুখে উড্ডয়ন করেন। কিন্তু, কিছুক্ষণের মধ্যে অপর পাইলট মিনহাজের জ্ঞান ফিরে এলে তার সঙ্গে কন্ট্রোল নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সিন্ধুর বেদিনে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান শাহাদত বরণ করেন।
২০ আগস্ট রাওয়ালপিন্ডিতে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সদর দপ্তর থেকে এক প্রেসনোটে বলা হয়, বেআইনি ঘোষিত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান প্রখ্যাত আইনজীবী এ কে ব্রোহীকে বিশেষ সামরিক আদালতে তার পক্ষ সমর্থনের জন্য মনোনীত করেছেন। প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ প্রধান গত ১১ আগস্ট বিশেষ সামরিক আদালতে প্রথম উপস্থিত হতে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তিনজন আইনজীবীর নামের তালিকা প্রদান করেন। ১১ আগস্ট পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানের রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার শুরু হয়েছে। মামলার সমস্ত শুনানি গোপন রাখা হবে।
আন্তর্জাতিক মহলে এদিন
২০ আগস্ট আফগানিস্তানের কাবুল থেকে প্রকাশিত ইংরেজি সংবাদপত্র সাপ্তাহিক 'নিউ ওয়েভ' পত্রিকায় পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান খান আবদুল ওয়ালী খানের দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি প্রকাশিত হয়। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'পাকিস্তানের রাজনীতি এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়। পাকিস্তান ছিন্নভিন্ন টুকরো টুকরো হয়ে যাবেই। পাকিস্তানের রাজনীতি এখন যেভাবে চলছে তাতে সমূলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করার আর কোনো উপায় নেই। পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড প্রাগৈতিহাসিক বর্বরতাকেও হার মানায়। তবে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানকে দখলে রাখা আদৌ সম্ভব নয়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যদি মনে করে থাকে যে, চরম অত্যাচার চালিয়ে, গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রেখে পূর্ব পাকিস্তানের বীর জনগণকে দাবিয়ে রাখতে পারবে তাহলে তারা চরম ভুল করবে। ধর্ম যে ভিন্ন সংস্কৃতির দুটি জাতির রাষ্ট্রীয় বন্ধন হতে পারে না, তা চিরকালের মতো প্রমাণিত হয়ে গেল। ধর্মকে রাষ্ট্রীয় বন্ধন বলে যারা ভাবতো এবার তাদের মোহমুক্তি চিরদিনের মতো ঘটে গেল। আমার কাছে বাঙালিদের প্রতিরোধ আন্দোলনের গুরুত্ব এখানেই। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ যে কেবল অন্ধকারাচ্ছন্ন তা নয়, বিপজ্জনক।'
রাওয়ালপিন্ডির বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখ করতে গিয়ে ওয়ালী খান একটি উপমা দিয়ে বলেন, 'দুধের কলসি ভেঙে গেছে। দুধ চারিদিকে গড়িয়ে পড়ছে। আর তার চারপাশে বসে তারা কাঁদছে।'
২০ আগস্ট ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে বিশ্ব শান্তি পরিষদের সচিবালয় থেকে পাঠানোর এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি না দিলে পূর্ব পাকিস্তানের পরিণতি শুভ হবে না। আলোচনা হলে একমাত্র তাকে নিয়েই হতে পারে। তাহলেই আলোচনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আশা করা যায়।'
দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ
২০ আগস্ট রাত ১টার দিকে নরসিংদী গেরিলা ইউনিটের ডিমোলিশন পার্টি নরসিংদী ইউনিট কমান্ডার ইমাম উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ লাইন উড়িয়ে দেয়। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি আগুনের লেলিহান শিখা প্রায় ১০ মাইল দূর থেকে দেখা যায় এবং ৬-৭ মাইল দূর থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। এই বিস্ফোরণের ফলে দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
২০ আগস্ট টানা পাঁচ দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রামের চিলমারী এলাকা হানাদার মুক্ত করে। এসময় আনন্দে উদ্বেলিত জনগণ চিলমারীর রণক্ষেত্রে এসে দেখেন শতাধিক হানাদার ও রাজাকারের মরদেহ বাঙ্কারে বাঙ্কারে পড়ে আছে।
২০ আগস্ট কুমিল্লার এক মাইল উত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের একটি টহলদার প্লাটুনকে অ্যামবুশ করে মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশ দল। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে হানাদার সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। এই অ্যামবুশে ১১ জন হানাদার সেনা নিহত ও তিন জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার সেনাদের একটি মেশিন গান ও কয়েকটি জি-৩ রাইফেল দখল করে।
২০ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার মাসুদ হোসেন আলমগীর নোবেলের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল সারিয়াকান্দি থানার আওলাকান্দী গ্রামের পূর্ব পাশে যমুনা নদীতে হানাদার বাহিনীর একটি লঞ্চকে আক্রমণ করে। এসময় মুক্তিবাহিনীর ছোঁড়া রকেট লাঞ্চারের আঘাতে লঞ্চটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে ডুবে যায়। এবং লঞ্চে থাকা সব হানাদার সেনা নিহত হয়।
২০ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার পাণ্ডব চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মুসলিমপুর অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে এক ঘণ্টারও বেশি সময় যুদ্ধ হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ কৌশল পরিবর্তন করে জিরানপুর গ্রামে এসে অবস্থান নেয়।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন মতিউর রহমান। তাঁর কর্মস্থল ছিল পাকিস্তানের করাচির মশরুর বিমানঘাঁটিতে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন। ১ মার্চ তাঁর ছুটি শেষ হলেও তিনি পাকিস্তানে যাননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যান। ৬ মে তিনি করাচি ফিরে যান।
করাচিতে যাওয়ার কিছুদিন পর মতিউর মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকেন কীভাবে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর একটি বিমান ছিনতাই করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া যায়। তাঁর এ পরিকল্পনার কথা তিনি কাউকে বলেননি। এমনকি নিজের স্ত্রীকেও বুঝতে দেননি। স্ত্রীও তাঁর হাবভাব থেকে ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি। এর পর থেকেই তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
দেশে আসার আগে মতিউর রহমান পাকিস্তানি শিক্ষানবিশ পাইলট রাশেদ মিনহাজকে বিমান উড্ডয়ন শিক্ষা দিতেন। গ্রাউন্ডেড হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন মিনহাজ যখন প্লেন নিয়ে উড়তে যাবেন, তখন তিনি ওই প্লেনে চড়ে সেটি ছিনতাই করবেন। বিমান ঘাঁটির কাছাকাছি সীমান্তের ওপারে আছে ভারতের এক বিমানঘাঁটি। বিমান ছিনতাই করতে পারলে তিনি সেখানে যাবেন।
মতিউর রহমান তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তারিখ নির্ধারণ করেন ২০ আগস্ট, শুক্রবার। সেদিন বেলা ১১টায় মিনহাজের একাই টি ৩৩ বিমান নিয়ে ওড়ার শিডিউল ছিল। আর কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে এ বিমানের যোগাযোগের সাংকেতিক নাম ছিল ‘ব্লুবার্ড’। সেদিন নির্ধারিত সময় মিনহাজ বিমান নিয়ে ৪ নম্বর ট্যাক্সি-ট্র্যাক দিয়ে রানওয়েতে ঢোকার জন্য এগিয়ে আসতে থাকেন। এ সময় মতিউরও নিজের গাড়ি চালিয়ে ওই ট্যাক্সি-ট্রাকে রওনা দেন। বিমানটি সেখানে একটি টিলার আড়ালে পৌঁছামাত্র তিনি বিমান থামানোর সংকেত দেন।
তাঁর সংকেতে মিনহাজ বিমান থামান। কারণ, কন্ট্রোল টাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পরও ফ্লাইট সেফটি অফিসার কোনো বৈমানিককে বিমান থামানোর সংকেত দিলে তিনি বিমান থামাতে বাধ্য থাকেন। মতিউর সেফটি অফিসারের এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। ফলে মিনহাজ বিমান থামাতে বাধ্য হন এবং ক্যানোপি (জঙ্গি বিমানের বৈমানিকদের বসার স্থানের ওপরের স্বচ্ছ আবরণ) খুলে কারণ জানতে চান।
মতিউর এ সুযোগে দ্রুতগতিতে বিমানের ককপিটে উঠে পড়েন। এর একটু আগে একটি যুদ্ধবিমান অবতরণ করায় তখন রানওয়ে খালিই ছিল। হকচকিত মিনহাজ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি বিমানটি রানওয়েতে নিয়ে আকাশে ওড়ান। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানটি দিগন্তে মিলিয়ে যায়। তবে মতিউর বিমানটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিতে পারেননি। আকাশে ওড়ার পর দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি চলা অবস্থায় সেটি বিধ্বস্ত হয় এবং তাঁরা দুজনই নিহত হন।