৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১২ আগষ্ট ১৯৭১ এই দিনে

ইতিহাসে ১২ আগস্ট গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন মুজিবনগর থেকে পাঠানো এক বার্তায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ এখন কেবল মুক্তিফৌজ ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মুক্তিযুদ্ধ এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। দেশবাসী হানাদারদের বিতাড়িত করে স্বদেশ ভূমিকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।'
১২ আগস্ট বিশ্বের বেশ কয়েকটি বৃহৎ শক্তিধর দেশের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি চিঠিতে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করার আইনগত, সাংবিধানিক বা অন্য কোনো অধিকার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নেই। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তির জন্যই বঙ্গবন্ধুকে প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত।'
ঢাকায় এদিন
১২ আগস্ট ঢাকা শহর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর আলী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজাদী দিবস পালনের আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, 'অবশ্যই আমাদেরকে দুষ্কৃতৃকারী ও বিছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশের আদর্শ ও অখন্ডতা রক্ষার জন্যে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।'
ভারতে এদিন
১২ আগস্ট দিল্লিতে লোকসভার অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক সরকার কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিলে শুধু তা পূর্ববঙ্গেই হবে না, এর প্রভাব গোটা পৃথিবীতেই পড়বে। তার নিরাপত্তায় এগিয়ে আসার জন্য আমরা বেশ কয়েকটি দেশকে অনুরোধ জানিয়েছি।'
১২ আগস্ট দিল্লিতে আয়োজিত ভারতীয় জনসংঘের এক বিশাল সম্মেলনে সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়ি বলেন, ভারত-সোভিয়েত যুক্ত বিবৃতিতে আমরা বুঝতে পারছি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। অথচ পাকিস্তান সরকার নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, ভারত সরকারের কোনো বিকার নেই। যদি বিকার থাকতো তবে ভারত সরকার মার্কিন সরকারের চাপে পড়ে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে ভয় পেত না।' 
১২ আগস্ট ভারতের রাজ্যসভার ২০ মুসলিম সদস্য এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান পাকিস্তানের অবস্থান ও আদর্শ সম্পূর্ণভাবে ইসলামিক মূল্যবোধ ও আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নিরীহ মানুষের উপর নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ কখনোই ইসলাম বৈধতা দেয়নি। বিশ্বের সব মুসলিম দেশের উচিত এই ভয়াবহ পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। এটি সব মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। 
১২ আগস্ট ত্রিপুরার আগরতলায় দুটো শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সিনেটের শরণার্থীবিষয়ক সাব-কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি বলেন, 'পাকিস্তানের সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচারের সম্মুখীন হওয়াটা নিন্দনীয়। আমরা শেখ মুজিবের বিচার বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাবো। আশা করি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের যথাযথ শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।'

১২ আগস্ট দিল্লিতে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং এক বিবৃতিতে বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষায় মার্কিন সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মার্কিন সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। মার্কিন সরকার কখনোই গোপন বিচারের পক্ষে নয়, একই সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এও বলেছেন পাকিস্তান যদি তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তবে চিরস্থায়ীভাবে মার্কিন সরকারের সমস্ত সহায়তা ও বন্ধুত্ব থেকে বঞ্চিত হবে পাকিস্তান।'
১২ আগস্ট কাশ্মীর থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পাঠানো এক টেলিগ্রামে কাশ্মীরের নেতা, শেরই কাশ্মীর শেখ আবদুল্লাহ বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার হলে সমঝোতা আর সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ প্রতিকূলে পৌঁছে যাবে। সহিংসতা পূর্ণমাত্রায় বৃদ্ধি পাবে। পাকিস্তান সরকারের উচিত সমঝোতার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে তার সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পূর্ব বাংলার বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসা।
পাকিস্তানে এদিন
১২ আগস্ট ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, 'সোভিয়েত-ভারত চুক্তি অনেকাংশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র। এই চুক্তির মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করছে।'
আন্তর্জাতিক মহলে এদিন
১২ আগস্ট মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি গোপন সূত্র জানায়, 'মার্কিন সিনেটের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আরো তিন কোটি ডলার মূল্যের সমরাস্ত্র পাকিস্তানকে দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সমরাস্ত্র দেয়া হবে পূর্বের লাইসেন্সকৃত রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে।'
১২ আগস্ট নিউইয়র্কে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেন, 'শেখ মুজিবের বিচার সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ নিয়ে তিনি এখন প্রকাশ্যে আলোচনা করবেন না। জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন ১১ আগস্ট রাতে উ থান্টের হাতে শেখ মুজিবের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন।
১২ আগস্ট লন্ডনে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী ব্রিটিশ মন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বর্তমানে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে, তা সেনাবাহিনীর সৃষ্ট নয়। এর জন্য দায়ী সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীরা।'
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এদিন
১২ আগস্ট দ্যা স্টেটসম্যান পত্রিকায় 'পাক বাহিনীর কৌশলগত পশ্চাদপসরণ' শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার সময় সম্প্রতি বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মি সেক্টর কমান্ডারদের কয়েকজন মনে করেন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডো ও গেরিলারা অপারেশনে মুখোমুখি অবস্থানে বেশ কয়েকটি এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর তেমন যুক্ত হয়নি। কমান্ডারেরা মনে করেন যে এটি কৌশলগত কারণ হতে পারে। এটা এখন স্পষ্ট যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা মূলত পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা গঠিত এবং তারা পূর্ব বাংলায় কাদা এবং কাঁটার ঝোপে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এখন প্রবল বর্ষণ পরিস্থিতি চলছে যা যুদ্ধের জন্য ভালো পরিবেশ না। সেনাবাহিনীর বর্তমান কৌশল হতে পারে বর্ষা পরবর্তী মৌসুমের জন্য তারা অস্ত্র ও শক্তি সংরক্ষণ করছে। বর্ষার পরে হয়ত তারা কঠোর আক্রমণ শুরু করবে।'
১২ আগস্ট কলকাতা থেকে প্রকাশিত যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জঙ্গীশাহী ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর সেনাসজ্জা তৎপরতা বাড়িয়ে তুলেছে। পাক জঙ্গিবাহিনী সীমান্তের ষাটটি চৌকিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করেছে। কিন্তু সেনাকমান্ডের নির্দেশ সত্ত্বেও নদী, জলপথ, পাহাড় দিয়ে বিস্তৃত ২৭০টি সীমান্ত ফাঁড়ির ওপর সফল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এখনো সফল হয়নি। মুক্তিবাহিনী সমগ্র সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং নানা অঞ্চলে আরও বেশি অভ্যন্তরেও ঢুকে পড়েছে।'
দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ
১২ আগস্ট টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল মর্টারের গোলা ছুঁড়তে ছুঁড়তে মটরা সেতু দখল করে করটিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। এসময় করটিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ৩০০ হানাদার সেনা ও রাজাকার মুক্তিবাহিনীর সামনে টিকতে না পেরে করাতিপাড়া থেকে করটিয়া এবং করটিয়া থেকে কিছুটা পূর্ব দিকে সরে গিয়ে বাংড়া ও পৌলির কাছাকাছি আশ্রয় নেয়।
১২ আগস্ট খুলনায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সুন্দরবনের ভিতরে মুক্তিবাহিনীর লাওতাড়া ঘাঁটির ওপর দুদিক থেকে আক্রমণ চালায়।
হানাদার বাহিনীর এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পিছু হটে আশাসুনি থানার বড়দল ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
১২ আগস্ট ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর পোটখালী বিওপির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে হানাদার সৈন্যরা পোটখা

লী বিওপি অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিবাহিনী পোটখালী বিওপি দখল করে সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ স্থাপন করে।

 

বাংলাদেশের ভেতরে পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে মুক্তিবাহিনী

 

মুক্তিবাহিনী সমগ্র সীমান্ত বরাবর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ফাইল ছবি

মুক্তিবাহিনী সমগ্র সীমান্ত বরাবর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সামাদ গামা, বেনু, ভোম্বল, দুরমুজ খাঁ, জাহাঙ্গীর, আজহার, মান্নান, আব্দুল্লাহ, মালেক, মকবুল, কাশেম, তমছের আলী, ফজলুল হক, দুলাল, শামসু, বজলু, পিন্টু, বাবলুসহ ৪০ জন যোদ্ধার একটি দল মর্টারের গোলা ছুঁড়তে ছুঁড়তে মটরা সেতু দখল করে করটিয়ার দিকে এগোতে থাকে।

করটিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ৩ শত পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকার মুক্তিবাহিনীর চাপের মুখে টিকতে না পেরে করাতিপাড়া থেকে করটিয়া এবং করটিয়া থেকে কিছুটা পূর্ব দিকে সরে গিয়ে বাংড়া ও পৌলির কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। শত্রু এতই ভীত ও আতঙ্কের শিকার হয়েছিল যে, করটিয়া ঘাঁটি থেকে পিছিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে যেতেও সাহস পায়নি। মুক্তিযোদ্ধারা দখল নেয় করটিয়ার।

বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম  কামরুজ্জামান মুজিবনগরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এখন কেবল মুক্তিফৌজ ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এ লড়াই এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। দেশবাসী হানাদারদের বিতাড়িত করে স্বদেশ ভূমিকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব ও ২৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আবেদন জানান। ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর পোটখালী বি ও পি ঘাঁটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকহানাদার সৈন্যরা পোটখালী বি ও পি অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী পোটখালী বি ও পি দখল করে সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ স্থাপন করে।

পাকনেভী সুন্দরবনের ভেতরে মুক্তিবাহিনী লাওতাড়া ঘাঁটির ওপর দু’দিক থেকে আক্রমণ চালায়। পাকহানাদারদের এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পিছু হটে খুলনা জেলার আশাসুনি থানার বড়দল ঘাঁটিতে ফিরে আসে। লন্ডনে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী বৃটিশ মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বর্তমানে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে, তা সেনাবাহিনীর সৃষ্ট নয়। এর জন্য দায়ী সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী (মুক্তিযোদ্ধা)।

ঢাকা শহর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন ও সেক্রেটারী মোহাম্মদ মনসুর আলী প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যথাযথভাবে আজাদী দিবস পালনের আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অবশ্যই আমাদেরকে দুষ্কৃতকারী ও বিছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশের আদর্শ ও অখন্ডতা রক্ষার জন্যে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।

যুগান্তর পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গীশাহী ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর সেনাসজ্জা তৎপরতা বাড়িয়ে তুলেছে। পাক জঙ্গীবাহিনী সীমান্তের ষাটটি চৌকিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করেছে। কিন্তু সেনাকমান্ডের নির্দেশ সত্ত্বেও নদী, জলপথ, পাহাড় দিয়ে বিস্তৃত ২৭০টি সীমান্ত ফাঁড়ির ওপর সফল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এখনো সফল হয়নি। মুক্তিবাহিনী সমগ্র সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং নানা অঞ্চলে আরও বেশি অভ্যন্তরেও ঢুকে পড়েছে।