৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১০ আগষ্ট ১৯৭১ এই দিনে

 এদিন দিল্লিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁদ্রে গ্রোমিকোর সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এই বৈঠকে শরণার্থী সংকট, আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের উপর চাপ বৃদ্ধি, শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের উত্তেজনা নিরসনসহ বিভিন্ন বিষয় ঠাঁই পায়। 


বৈঠকে সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁদ্রে গ্রোমিকো ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলেন, 'সোভিয়েত ইউনিয়ন শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের বিরুদ্ধে। কারণ এই বিচারের সিদ্ধান্ত থেকে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন যদি সরে না আসে তবে পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের ভোটে নির্বাচিত। সুতরাং তাকে নিয়েই আলোচনা হতে পারে। শরণার্থী সমস্যা আসলেই জটিল। এক্ষেত্রে সোভিয়েত সরকার ভারতকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয়ভাবেই সহায়তা ও সহযোগিতা দেবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সবসময়ই ভারতের পাশে ছিল এবং থাকবে।'


ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বৈঠকে আঁদ্রে গ্রোমিকোকে বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচারের মুখোমুখি করা মানে নির্বাচিত গনপ্রতিনিধিকে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আক্রমণ করা। যেখানে তিনিই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এখন তাকেই উৎখাত করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। পাকিস্তান সরকার শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো নাটক সাজিয়েছে। যেখানে শরণার্থীদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ পূর্ব বাংলা নিরাপদ নয়। মানুষ গণহত্যা ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে অথচ পাকিস্তান সরকার নিজেরাই তাদের তাড়িয়ে এখন ভারতকে দোষারোপ করছে, বৈশ্বিক মহলে ভারতের নামে মিথ্যাচার করছে।'


১০ আগস্ট বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুজিবনগর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, 'বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কোনো চেষ্টা করা হলে বিশ্বের এই অঞ্চল অগ্ন্যুৎপাতের মুখোমুখি হবে।' এসময় তিনি সভ্যতা, গণতন্ত্র, মানবতা ও ন্যায়বিচারের নামে বিশ্বের সব রাষ্ট্রপ্রধান এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানান।


ভারতে এদিনঃ

১০ আগস্ট রাজ্যসভায় অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম বলেন, 'দেশের নিরাপত্তায় সর্বদা সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত আছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী থেকেও তারা বেশি প্রশিক্ষিত। আমাদের নৌ বাহিনীকেও আমরা ঢেলে সাজিয়েছি। পাকিস্তান যদি আমাদের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় তবে এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।'


১০ আগস্ট দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ২০টি উর্দু পত্রিকার সম্পাদকেরা। এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের নেতৃত্ব দেন প্রখ্যাত সম্পাদক আলী সিদ্দিকী। এসসময় তারা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। সমাবেশ শেষে আলী সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন উর্দু পত্রিকার সম্পাদক পাকিস্তান দূতাবাসে প্রতিবাদ স্মারকলিপি দিতে গেলে দূতাবাসের কেউ সেই স্মারকলিপি গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। এই অবস্থায় তারা এই প্রতিবাদ স্মারকলিপিটি পাকিস্তান দূতাবাসে ছুঁড়ে দিয়ে, দিল্লির মার্কিন দূতাবাসে যান। সেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা ও বিক্রির প্রতিবাদে একটি প্রতিবাদ লিপি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে হস্তান্তর করেন।


পাকিস্তানে এদিনঃ
১০ আগস্ট মার্কিন সিনেটের শরণার্থী বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড কেনেডির ১২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া পূর্ব পাকিস্তান সফর বাতিল করে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন। একই সঙ্গে এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তার নির্ধারিত বৈঠকও বাতিল করা হয়।


আন্তর্জাতিক মহলে এদিনঃ
১০ আগস্ট মার্কিন সিনেটের শরণার্থী বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড কেনেডি শরণার্থীদের অবস্থা পরিদর্শন ও সাম্প্রতিক সময়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য কলকাতায় আসেন। এদিন তিনি কলকাতায় এসেই সরাসরি বয়রা সীমান্তে চলে যান। সেখানে তিনি দুটো শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে তিনি কলকাতা বিমানবন্দরে ফিরে যান। এসময় তিনি কলকাতা বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'দেশে ফিরে শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য এবং শরণার্থীরা যেন দ্রুততম সময়ে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে সে ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নেবো।'
১০ আগস্ট নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স পূর্ব বাংলার বিষয়ে ও শরণার্থী পরিস্থিতি, ভারত পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সময়ের অবস্থা সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব উ'থান্টের সঙ্গে আলোচনা করেন। চার ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ ডব্লিউ বুশও উপস্থিত ছিলেন।


দেশব্যাপী এদিনঃ
১০ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিমের আবদুল্লাহপুরে শান্তিকমিটির সমাবেশে স্থানীয় রাজাকার ও শান্তিকমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেওয়ার সময় মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের গুলিতে নিহত হয় পূর্ব পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা, রাজাকার ও শান্তিকমিটির নেতা মাওলানা মাহমুদ মোস্তফা আল মাদানী।


দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধঃ
১০ আগস্ট সিলেটে ক্যাপ্টেন রবের নেতৃত্বে পাঁচ কোম্পানি যোদ্ধা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশন অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় হানাদার বাহিনীও পাল্টা আক্রমণ চালায়। প্রায় দুই ঘন্টা যুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনী শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের একটি বড় অংশ নিজেদের দখলে নেয়। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা দখলকৃত এলাকায় পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। এক পর্যায়ে হানাদার সেনারা পিছু হটে ক্যাম্পে ফিরে আর্টিলারি আক্রমণ শুরু করে। হানাদার বাহিনীর এ পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে পিছু হটে। এই যুদ্ধে ইপিআরের হাবিলদার কুতুব, নায়েক মান্নান ও মুজাহিদ হাবিলদার মোহাম্মদ ফয়েজসহ মোট ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাঁচ জন আহত হন। মুক্তিবাহিনী শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসময় প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
১০ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাটের ৪ নম্বর সেক্টরের ডাউকি সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর একটি দল রাজাকারদের চতুলবাজার ঘাঁটি আক্রমণ করে। এসময় তিন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে এবং দুই রাজাকার নিহত হয়। আক্রমণ শেষে মুক্তিবাহিনীর দলটি কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে যায়।
১০ আগস্ট শালদা নদীর পশ্চিমে মুক্তিবাহিনীর ক্যাপ্টেন সালেকের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লা সিএন্ডবি সড়কের কাছে শিদলাই গ্রামে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে।
এদিন দিরাইয়ে এক রাজাকারের বাড়িতে হামলা চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। 

 

শাহবাজপুর স্টেশনে দুই পক্ষের যুদ্ধে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন

 

পাকবাহিনীর এ পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। ফাইল ছবি

পাকবাহিনীর এ পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট দিনটি ছিল মঙ্গলবার। এদিন সিলেটে ক্যাপ্টেন রবের নেতৃত্বে পাঁচ কোম্পানী যোদ্ধা পাকবাহিনীর শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশন অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দু‘ঘন্টা যুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনী শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের একটি বড় অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং দখলকৃত এলাকায় পাকিস্তানী পতাকা ধবংস করে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।

এ পর্যায়ে হঠাৎ পাকসেনারা আর্টিলারি আক্রমণ চালায়। পাকবাহিনীর এ পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং পিছু হটে। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করে তবে ইপিআর হাবিলদার কুতুব, নায়েক মান্নান ও মুজাহিদ হাবিলদার মোহাম্মদ ফয়েজসহ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন এবং ৫ জন আহত হন।

৪ নম্বর সেক্টরের ডাউকি সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকহানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকারদের চতুলবাজার ঘাঁটি আক্রমণ করে। এতে ৩ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয় ও ২ জন নিহত হয়। অভিযান শেষে মুক্তিযোদ্ধা দল কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই নিজ অবস্থানে ফিরে আসে। ক্যাপ্টেন সালেক এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সালদা নদীর পশ্চিমে কুমিল্লা সি এন্ড বি রোডের কাছে শিদলাই গ্রামে ঘাঁটি স্থাপন করেন।

মুক্তিবাহিনী দিরাই এলাকায় ডাকাতদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ২১ ডাকাত নিহত হয়। এ ছাড়াও তারা ১টি হালকা মেশিনগান, ৮টি রাইফেল, ২১টি শটগান, ৪টি গ্রেনেড এবং কিছু গোলাবারুদ জব্দ করে। দিরাই এলাকায় একটি পাক সমর্থকের বাড়ি ধ্বংস করে।

৫ আগস্টে টাংগাইলের কাদেরিয়া বাহিনী পাক বাহিনীর এক ওয়্যারলেস বার্তা ধরে ফেলে। জানা যায়, সদরঘাটে কয়েকটি বড় বড় জাহাজে অস্ত্র বোঝাই করা হচ্ছে। গন্তব্য বগুড়ার ফুলতলি, তারপর রংপুর। মুক্তিবাহিনী গুপ্তচর মারফত নিশ্চিত হয় যে কাদেরিয়া বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকার ভেতর দিয়ে ধলেশ্বরী নদী পথে যাবে জাহাজগুলো। কমান্ডার হাবিবুর রহমান ১০-১৫ জন সেরা যোদ্ধা বাছাই করে রওয়ানা হন সিরাজকান্দি ঘাট অভিমুখে। ১০ আগস্ট সিরাজকান্দি ঘাটে (বর্তমান যমুনা সেতুর অদূরে) এসে ভেড়ে ৭টি জাহাজ। কমান্ডার হাবিব মোতাহার, জিয়া এবং জামশেদকে নিয়ে জেলের ছদ্মবেশ ধরে জাহাজের কাছে গিয়ে তিনি মাছ ধরতে শুরু করলে এক পর্যায়ে টহল স্পিডবোটের মুখোমুখি হন। পাক বাহিনীর সঙ্গে গল্পচ্ছলে কৌশলে জেনে নেন দরকারি তথ্য। জানা যায়, ভেতরে অন্তত ১ ব্যাটালিয়ন সেনা আছে। ক্যাম্পে রিইনফোর্সমেন্ট চান হাবীব, বদলে আসে এক রহস্যময়ী বার্তা। “এই মাত্র সর্বাধিনায়কের (কাদের সিদ্দিকী) কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে, সুবিধামত অবস্থান থেকে শুধু আক্রমণ করো, আক্রমণ করা মাত্রই জাহাজের পতন ঘটবে”। আক্রমণের সুবিধাজনক সময়ের অপেক্ষায় থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে শাহবাজপুরের সবুজপুর (লাটু) রেলওয়ে স্টেশন অপারেশনের মাস্টার প্লান প্রস্তুত করেন সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল চিত্তরঞ্জন দত্ত। পুরো এলাকা ৩১ পাঞ্জাবের এক প্লাটুন এবং এক প্লাটুন অস্ত্রধারী রাজাকার দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। এই দিনটিকে বেছে নেয়া হয় অপারেশনের জন্য। মুক্তিফৌজের দলে ৫টি কোম্পানি রাখা হয় অপারেশনের জন্য। রেকি কার্যক্রম শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সামনা সামনি হামলা করার, এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না, কিন্তু সেটা হবে অনিয়মিত উপায়ে। 

৫টার দিকে মুক্তিফৌজের সব কোম্পানি তাদের নিজ নিজ পূর্ব নির্ধারিত পজিশনে অবস্থান নেয়। শত্রুর বাঙ্কার অবস্থান মাটির এত গভীরে খনন করা ছিল যে, মিডিয়াম গানের শেলিং তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারছিল না। মুক্তিযোদ্ধারা পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল শত্রু হননে। ১৫ মিনিটের মধ্যে শত্রু বাহিনী পিছু হটা শুরু করল। ৭টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা শাহবাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের একটা বড় অংশ থেকে হানাদারদের উচ্ছেদ করে। শত্রুর যেই অবস্থান থেকে সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ আসছিল, সেখানে চার্জ করল মুক্তিযোদ্ধা দল। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডো বাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। এরই মধ্যে খবর এলো হানাদার সৈন্যরা বাম দিকে জড়ো হচ্ছে। বড়লেখা থেকে সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দেয়ার এবং তাদের পুনরায় একত্রিত হতে বাধা দেয়ার যেই দলের দায়িত্ব ছিল, তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং পাকিস্তানীরা, মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে আর্টিলারি শেলিং শুরু করেছে। লে. কর্নেল দত্ত নির্দেশনা দিলেন অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে। অবশেষে মুক্তিফৌজ পিছু হটে নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে আসে। সেদিন ওখানে ৮ জন শত্রু সেনা নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়। মুক্তিফৌজের ৬ জন শহিদ আর ৫ জন আহত হন। এই দিন চারটি চা বাগানসহ ২০ বর্গমাইল এলাকা শত্রুমুক্ত হয় এবং মুক্তিফৌজের দখলে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স বাংলাদেশ প্রশ্নে পাকিস্তান-ভারত পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ সদর দফতরে মহাসচিব উ’ থান্টের সাথে আলোচনা করেন। চারঘন্টাব্যাপী এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ ডব্লিউ বুশও উপস্থিত ছিলেন