৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১৮ জুলাই ১৯৭১ এই দিনে

পাকসেনাদের একটি দল শালদা নদী ঘাঁটি থেকে দক্ষিণদিকে মনোরা ব্রিজের দিকে অগ্রসর হলে ৪র্থ বেঙ্গলের ‘এ’ কোম্পানীর যোদ্ধারা মর্টার ও কামানের সাহায্যে আক্রমণ করে। ফলে পাকসেনাদের ৪ জন সৈন্য নিহত ও ১০ জন আহত হয়। পরে পাকসেনারা সামনে অগ্রসর না হয়ে পিছু হটে মনোরা ব্রিজের উত্তরে অবস্থান নেয়।

ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি রেইডিংপার্টি কসবার উত্তরে কাসিমপুর সেতুর কাছে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং যারা বেঁচে ছিল তারা অবস্থানটি পরিত্যাগ করে খাইরাতুল্লাতে পালিয়ে যায়।

মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা দল গোসইরহাট থানার দামুদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পুলিশ ফাঁড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং গেরিলা দল ৫টি রাইফেল, একটি ওয়্যারলেস সেট ও প্রচুর গোলাবারুদ দখল করে।

কুমিল্লায় সুবেদার আবদুল ওহাবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল নওগাঁ নামক জায়গায় পাক ডিফেন্সের ও-পি পোস্ট আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকবাহিনীর ২ জন অফিসার, ১ জন জেসিও ও ২ জন সিপাই নিহত হয় এবং ১ জন সিপাই আহত অবস্থায় ও-পি পোস্টের ওপর হতে নীচে পড়ে যায়।

পাকবাহিনীর এক বিগ্রেড সৈন্য লেঃ কর্নেল হেলাল মুর্শেদের কোম্পানী ও ক্যাপ্টেন নাসিমের কোম্পানীর ওপর আক্রমণ চালায়।

জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাই কমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান জেনেভায় বলেন, ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আরো বিপুল পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু তাদের স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হবে এ সমস্যার সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান।

নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেপলেন অসলোতে বলেন, নরওয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে না কারণ এতে ত্রাণ কাজে জটিলতার সৃষ্টি হবে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার পাকহানাদাররা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। তেরশ্রীর জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায়প্রসাদ চৌধুরীকে হানাদাররা জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে।

হামিদুল হক চৌধুরী ও মাহমুদ আলী নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টকে ‘ভয়ঙ্কর অতিরঞ্জিত’ বলে অভিহিত করে বলেন, এ রিপোর্ট লোকমুখে শোনা কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত। তারা আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানি হানাদারদের (মুক্তিবাহিনী) আশ্রয় দেয়ায় ভারতীয় নীতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টির ইন্ধন হিসেবে কাজ করবে।

 

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বহু পাকসৈন্য নিহত এবং আহত

 

মুক্তিফৌজদের দখলে দেশের বিভিন্ন এলাকা। ফাইল ছবি

মুক্তিফৌজদের দখলে দেশের বিভিন্ন এলাকা। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ১৮ জুলাই দিনটি ছিল রবিবার। এদিন পাকসেনাদের একটি দল শালদা নদী ঘাঁটি থেকে দক্ষিণদিকে মনোরা ব্রিজের দিকে অগ্রসর হলে ৪র্থ বেঙ্গলের ‘এ’ কোম্পানীর যোদ্ধারা মর্টার ও কামানের সাহায্যে আক্রমণ করে। ফলে পাকসেনাদের ৪ জন সৈন্য নিহত ও ১০ জন আহত হয়। পরে পাকসেনারা সামনে অগ্রসর না হয়ে পিছু হটে মনোরা ব্রিজের উত্তরে অবস্থান নেয়।

ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি রেইডিংপার্টি কসবার উত্তরে কাসিমপুর সেতুর কাছে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং যারা বেঁচে ছিল তারা অবস্থানটি পরিত্যাগ করে খাইরাতুল্লাতে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা দল গোসইরহাট থানার দামুদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পুলিশ ফাঁড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং গেরিলা দল ৫টি রাইফেল, একটি ওয়্যারলেস সেট ও প্রচুর গোলাবারুদ দখল করে।

কুমিল্লায় সুবেদার আবদুল ওহাবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল নওগাঁয় পাক ডিফেন্সের ওপি পোস্ট আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকবাহিনীর ২ জন অফিসার, ১ জন জেসিও (জুনিয়র কমিশন অফিসার) ও ২ জন সিপাই নিহত হয় এবং ১ জন সিপাই আহত অবস্থায় ওপি পোস্টের ওপর থেকে নিচে পড়ে যায়।

পাকবাহিনীর এক বিগ্রেড সৈন্য লে. কর্নেল হেলাল মুর্শেদের কোম্পানী ও ক্যাপ্টেন নাসিমের কোম্পানীর ওপর আক্রমণ চালায়। রংপুরের বরখাতা ও চৌইলাদি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক সৈন্যদের দুই দুইবার ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। ময়মনসিংহে মুক্তিযোদ্ধারা রাতে পাকবাহিনীর টেলিফোন লাইন কেটে দেয়। করিমগঞ্জের কাছে এক সংঘর্ষে ১২ জন পাকসেনাকে নিহত হয়।

মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার পাকহানাদাররা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। তেরশ্রীর জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায়প্রসাদ চৌধুরীকে হানাদাররা জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে।

শিলিগুড়ি থেকে আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর মুক্তিফৌজ বৃহস্পতিবার পাক দখলদার বাহিনীর কবল থেকে ঠাকুরগাঁর জগদলপুর থানা ছিনিয়ে নিয়েছে। জগদলপুর, ইসলামপুর সীমান্তের উল্টো দিকে। গত কয়েকদিনের মুক্তিফৌজ ২৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। মাদারীপাড়া সীমান্ত ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজ বেশ কিছু পাক সেনাকে হত্যা করে। বাকি সেনারা পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। সীমান্ত চৌকি দখল নেয়ার পর মুক্তিফৌজ সেখানে প্রচুর রসদ বিশেষ করে ৫০০ মণ চাল পায়। উত্তর রণাঙ্গন থেকে যেসব খবর আসছে তাতে পাক দখলদার বাহিনীর মনোবল ক্রমশই ভেঙ্গে পড়ছে এবং ঘাঁটি ছেড়ে ৫ থেকে ৭ মাইল ভেতরে দৌঁড়াচ্ছে। দিনহাতার উল্টোদিকে ভুরুঙ্গামারী এখন মুক্তিফৌজের দখলে। এছাড়া গত কয়েক সপ্তাহে মুক্তিফৌজের কমান্ডোরা যুগপৎ আক্রমণ চালিয়ে দিনাজপুর ও রংপুর জেলার অন্তত ৪২টি সীমান্ত চৌকি পুড়িয়ে দিয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, পাক দখলদাররা কোন ক্রমেই ওইসব সীমান্ত চৌকি যাতে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। রংপুর সেক্টরে মগলহাট, হাতিবান্ধা, বড়খাতা, অন্যদিকে দিনাজপুর সেক্টরে পাঁচবাড়ি, পাঁচবিবি, আতোয়ার, পাক হিলি ও গৌরীপুর এলাকায় মুক্তিফৌজ ও কমান্ডোদের আক্রমণে দখলদাররা বিপর্যস্ত।

জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাই কমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান জেনেভায় বলেন, ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আরো বিপুল পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু তাদের স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হবে এ সমস্যার সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেপলেন অসলোতে বলেন, নরওয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে না কারণ এতে ত্রাণ কাজে জটিলতার সৃষ্টি হবে।

হামিদুল হক চৌধুরী ও মাহমুদ আলী নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টকে ‘ভয়ঙ্কর অতিরঞ্জিত’ বলে অভিহিত করে বলেন, এ রিপোর্ট লোকমুখে শোনা কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত। তারা আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানী হানাদারদের (মুক্তিবাহিনী) আশ্রয় দেয়ায় ভারতীয় নীতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টির ইন্ধন হিসেবে কাজ করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে, পাকিস্তানকে সমর সম্ভার ও অর্থ সাহায্য দিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করলেও আমেরিকান জনগণ, সংবাদপত্র, বেতার- টেলিভিশন ও সিনেটররা বাংলাদেশের প্রকৃত ঘটনাবলী প্রকাশ করে বাংলার জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। 

মার্কিন সংবাদপত্রসমূহ খোলাখুলিভাবেই বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন সরকারী নীতির কঠোর সমালোচনা করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘ইভিনিং স্টার প্রভৃতি প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকায় মার্কিন সরকারী নীতির কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ঋণদানকারী রাষ্ট্রগুলোর উচিত পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার সাহায্য বন্ধ করে দেয়া। ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পাকিস্তানে মার্কিন সাহায্য প্রেরণের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, মার্কিন সরকারের এ ভুলের কোন তুলনা হয় না। মার্কিন সরকারের এটা শুধু ভুল নয়, এটা একটি ক্ষমাহীন অপরাধ, ইতিহাস এ অপরাধ কোন দিনই ক্ষমা করবে না।