৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

০৫ জুলাই ১৯৭১ এই দিনে

০৫.০৭.১৯৭১

 

 

 

 উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ভালুকা ১৩ ও বিরিশিরিতে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন

দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিবাহিনীরা পাকসেনাদের এ্যামবুশ করে। ফাইল ছবি

দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিবাহিনীরা পাকসেনাদের এ্যামবুশ করে। ফাইল ছবি

ইপিআর ল্যান্সনায়েক আব্দুল মান্নান এবং আফসারউদ্দিন আহমদ-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল ভালুকা থানার ভাউলিয়া পাক ঘাঁটি আক্রমণ করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হয় ও ৬০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।

মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার পাকবাহিনীর মনোরা সেতু অবস্থানের ওপর মর্টার ও মেশিনগানের সাহায্যে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলিতে পাকসেনারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মনোরা সেতু অবস্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এ সংঘর্ষে ৪ জন পাকসেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়।

ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি এ্যামবুশ দল নওগাঁও এবং আকশিনার মাঝামাঝি রাস্তায় পাকসেনাদের একটি দলকে এ্যামবুশ করে। এতে ৭ জন পাকসেনা নিহত ও ৪ জন আহত হয়। অপরদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতরভাবে আহত হন। এ্যামবুশ দল নিজ ঘাঁটিতে ফেরার পথে সাইদাবাদ থেকে কসবাগামী পাকবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্যকে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে ২১ জন পাকসেনা ও ১ জন দালাল নিহত এবং ৯ জন আহত হয়।

নোয়াখালীতে সুবেদার ওয়ালীউল্লা নরিমপুর রেকি করতে এলে পাকদালালরা তাকে কৌশলে ঘিরে ফেলে ও বন্দী করে। তৎক্ষণাৎ ওয়ালীউল্লা পিস্তল দিয়ে একজন দালালকে গুলি করে দৌড়াতে থাকেন এবং শেষপর্যন্ত দালালদের কাছ থেকে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন। 

গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী সকাল ৮টার দিকে নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরি থেকে কলমাকান্দায় পাকসেনাদের ক্যাম্পে রসদ যাবে। এ সংবাদে কমান্ডার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা নাজিরপুর পৌঁছে যান ২৫ জুলাই সন্ধ্যায়। ৩টি পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে নাজিরপুর বাজারের সব ক’টি প্রবেশ পথ আগলে এ্যামবুশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সকাল ৯টা অতিক্রান্ত হলো, পাকহানাদারদের হদিস নেই।

মুক্তিযোদ্ধারা একে একে তাদের এ্যামবুশ তুলে নেয়ার সময় হঠাৎ হানাদার বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে যায়। গুলি, পাল্টা-গুলি উভয়পক্ষের তুমুল যুদ্ধ। অতর্কিত যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকাংশে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। পাকহানাদাররা এক পর্যায়ে ক্রলিং করে সন্তর্পণে মুক্তিযোদ্ধাদের ডিফেন্স এলাকায় ঢুকে পড়ে। দুপুরের দিকে পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর এলএমজি পজিসন নির্দিষ্ট করে জামালের অবস্থানের ওপর ফায়ার শুরু করে। পাকহানাদারদের গুলিতে ঘটনাস্থলে জামালউদ্দিন শহিদ হন। বিকেলের দিকে পাকবাহিনীর আক্রমণ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। গুলির আঘাতে কমান্ডার নাজমুল হক তারার কণ্ঠনালী ছিঁড়ে যায়। এতে যুদ্ধের গতি পাল্টে যায়। পাক হানাদাররা সশস্ত্র অবস্থায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে বন্দী করে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। এই যুদ্ধে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন।

সোনাগাজীতে লড়াইয়ের পর পাক কমান্ডার গুল মোহাম্মদের শিরচ্ছেদ করা হয়। সুনামগঞ্জের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ২ জন পাকসৈন্য ও ১ জন আনসার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত কৃষিমন্ত্রী ফখরুদ্দিন আলী আহমদ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষে কায়রোয় পৌঁছান এবং প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদতের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে ভারত সরকারের মনোভাব ব্যাখ্যা করেন।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কট অতিক্রমের জন্য এখন প্রয়োজন জনপ্রিয় নেতৃত্ব ও সত্যিকার রাজনৈতিক পদক্ষেপ। 

পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খান রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও নাটোরস্থ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যারাকসমূহ পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। পশ্চিম জার্মান পার্লামেন্টের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল করাচী থেকে ঢাকা আসেন। সন্ধ্যায় তারা জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।