৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১৬ জুন ১৯৭১ এই দিনে

* চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর চাঁদগাজী ঘাঁটির ওপর পাকসেনারা তীব্র আক্রমণ চালায়। ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকসিনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সংঘর্ষে পাকিস্তানিদের ৫০ জন সৈন্য নিহত হয়। কুমিল্লার রাজাপুর রেলস্টেশন ঘাঁটি থেকে টহল দিতে আসা পাকসেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন যোদ্ধা এ্যামবুশ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৮ জন সৈন্য নিহত ও একজন আহত হয়। সংঘর্ষ শেষে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, টেলিফোন সেট ও অন্যান্য জিনিস মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয় ।

* মুক্তিযোদ্ধাদের কসবা অবস্থান থেকে একটি দল বগাবাড়ি নামক স্থানে পাকবাহিনীর একটি টহল দলকে এ্যামবুশ করে। এ অভিযানে পাকবাহিনীর ১০ জন সেনা নিহত ও ৫ জন আহত হয় ।

* গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের কোদালধোয়া ঘাঁটির ওপর পাকবাহিনী চারটি স্পিডবোটে করে আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী তাদের প্রতিরোধ করলে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির মুখে পাকসেনারা পয়সারহাট থেকে আট মাইল দূরে পালায়। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের ৯ জন সৈন্য নিহত হয় ।

* ঝালকাঠির বৈশাইল থানা এলাকায় হানাদার পাকসেনারা স্থানীয় দারারদের সহায়তায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয় ।

* যশোরের বেনাপোল পাকবাহিনীর ঘাঁটির ওপর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনী প্রচুর ক্ষতির শিকার হয় ।

* ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্য সভায় বলেন, আমরা অবশ্যই বাংলাদেশ প্রশ্নের রাজনৈতিক মীমাংসা চাই, তবে বাংলাদেশের কবর রচনা করার কিংবা গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা লড়াই করছে তাদের থেকে নিষ্ক্রিয় করার অধিকার আমাদের নেই। ভারত সে ধরণের মীমাংসার আশাও করে না। আমরা শরণার্থীদের সীমান্তের ওপারে বর্বরতার মুখে ঠেলে দিতে পারি না, যেখান থেকে প্রাণভয়ে তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করে আমাদের দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ।

* কানাডার অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী মিজেল শার্প তাঁর দেশের কমন্স সভায় বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের উদ্ভুত পরিস্থিতির রাজনৈতিক মীমাংসা ছাড়া শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টির সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ । আর এই রাজনৈতিক মীমাংসার একমাত্র উপায় হচ্ছে পাকিস্তান বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ।

* পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী রাওয়ালপিন্ডিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।

 

ইয়াহিয়া খান

ইয়াহিয়া খান

এ সপ্তাহে বিশ্বের প্রথমসারীর সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে পাক সামরিকবাহিনীর গণহত্যার বিভীষিকা বর্ণনা এবং পাকিস্তানী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, তামিলনাড়ু থেকে পশ্চিমবাংলা অনেক দূরে অবস্থিত হলেও বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নজিরবিহীন প্রবাহ এখানেও অব্যাহত আছে। এখানকার মানুষও ইয়াহিয়া খানের হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এখানকার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার বিলম্বের কারণে ভারত সরকারের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছে স্থানীয় নেতারা। ফণীভূষণের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের মর্মান্তিক পরিস্থিতি এখানকার মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য তিনদিনের সফরে এই শহরে এসেছেন। মি. মজুমদার আশা প্রকাশ করেছেন যে শরণার্থীদের এই প্রবাহ ভারতের সচিব পরিষদে উত্থাপিত হবে।

কলকাতার দৈনিক কালান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাক সামরিক চক্র বাংলাদেশে জাতিগত হত্যার ঘৃণ্য অপরাধ চাপা দেয়ার জন্য ইসলামিক দেশ বিপন্ন বলে যে ধুয়া তুলেছে তা আরব দেশের জনগণকে প্রতারিত করতে পারবে না বলে এখানে আরব দেশের ৫টি যুব সংস্থা এক যুক্ত বিবৃতি প্রচার করেছে। আরব দুনিয়া থেকে বাংলাদেশের জনগণের ওপর ইয়াহিয়ার আক্রমণের প্রতিবাদে এই প্রথম বিবৃতি। 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চমকপ্রদ জয় বর্ণনা করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে প্রশাসনিক দায়িত্ব তুলে দেবার এবং জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের অনুরোধে ইয়াহিয়া বাংলাদেশের ওপর জাতিগত হত্যা শুরু করেছে। বাংলাদেশের জনগণের ওপর গণহত্যা এবং ইয়াহিয়ার সামরিক বর্বরতা দেশের ঐক্যের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামরত যুবকদের প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য সংহতিমূলক প্রচার সংগঠিত করার এবং সামরিক শাসকের জাতিগত হত্যার মুখোশ খুলে দেয়ার উদ্দেশ্যে আরব দেশের যুবকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। 

পূর্ববঙ্গের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে সিরিয়ার ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়ন, ইরাকের ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়ন, ইয়েমেনের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের আসসালাফি যুব আন্দোলন, সুদানের যুব ইউনিয়ন, লেবানন ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করেছেন। জানা গেছে, যে জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের যুব সংস্থার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে যোগদানের উদ্দেশ্যে আগত উপরোক্ত আরব যুব সংস্থার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভারতীয় যুব ফেডারেশন ও যুব কংগ্রেসের সর্বশ্রী যোগীন্দ্র সিং দয়াল ও জনার্দন সিং আলোচনার ফলশ্রুতি হিসেবেই বাংলাদেশ সম্পর্কে আরব দেশের যুব সমাজের পক্ষ থেকে ঐ মর্মে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।