৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১১ জুন ১৯৭১ এই দিনে

* আর্জেন্টিনার বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল ১১ জুন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস মারিয়া দে পাবলো পার্দোর সঙ্গে দেখা করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তারা ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য জরুরি সাহায্য পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে স্মারকলিপি দেয়। স্মারকলিপিতে যাঁরা সই করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধু ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, প্রখ্যাত গল্পকার হোর্হে লুইস বোর্হেস এবং ফাদার ইসমাইল কুলিস। আর্জেন্টিনার জাতীয় পত্রিকায় স্মারকলিপির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ১২ জুন প্রকাশিত হয়।


* যুক্তরাজ্যের কমন্স সভায় ১১ জুন পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে বিতর্ক হয়। বিরোধী লেবার পার্টির সদস্য পিটার শোর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সমালোচনা করে বলেন, রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্যে পাকিস্তান ব্রিটেনের বন্ধুত্ব আশা করতে পারে না। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের সাহায্য যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করতে পারে না পাকিস্তান।


* যুক্তরাজ্যের অধিবাসীরা বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য এই দিন ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ভারতীয় রুপির সমপরিমাণ অর্থ সাহায্য দেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের রেডক্রস সোসাইটি শরণার্থীদের জন্য অবিলম্বে চিকিৎসাসামগ্রী, কলেরা ও টাইফয়েডের টিকা, খাদ্য ও তাঁবু পাঠানোর ঘোষণা দেয়। বেলজিয়াম সরকার শরণার্থীদের জন্য ২০ মিলিয়ন বেলজিয়াম ফ্রাঙ্ক এবং কানাডার কানাডিয়ান ক্যাথলিক কনফারেন্স ও কানাডিয়ান ক্যাথলিক অর্গানাইজেশন অ্যান্ড পিস শরণার্থীদের জন্য ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলার সাহায্যের ঘোষণা দেয়।


* ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই দিন আসামে শরণার্থীশিবির পরিদর্শনকালে বলেন, শরণার্থীদের অনুকূলে বিশ্বে জনমত গড়ে উঠেছে। পৃথিবীজুড়ে পাকিস্তানের বর্বর অত্যাচারের কাহিনি প্রচারিত। পূর্ব বাংলায় যা ঘটেছে, তা শুধু পাকিস্তানের ব্যাপার নয়। ভারত সরকার ব্যাপারটি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখছে।


* বাংলাদেশের ঘটনাবলি ও শরণার্থী সমস্যা বিশ্বনেতাদের জানাতে বিভিন্ন দেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং এই দিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জর্জ পম্পিদুর সঙ্গে দেখা করেন।


* ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর দেশটি এই দিন সরকারি ইশতেহার প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ভারত একা শরণার্থী সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। ভারত উপমহাদেশে শান্তি ও স্থায়িত্ব অক্ষুণ্ন রাখার ব্যাপারে জার্মানি তার আগ্রহের কথাও জানায়। ইশতেহারে বলা হয়, পরিস্থিতির দিকে তাঁরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ রাখছেন এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তার পক্ষে যে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সে সম্পর্কেও তাঁরা সচেতন।


* ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এদিন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম ম্যাকমাহানের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের ঘটনাবলি ও শরণার্থীদের বিষয়ে অবহিত করেন। বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে ভূমিকা রাখতে তিনি তাঁকে অনুরোধ করেন।


* ভারতের কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়নমন্ত্রী মইনুল হক চৌধুরী নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পিয়েত দে জংয়ের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং এ নিয়ে ভারতের মনোভাব তাঁকে জানান।


* লন্ডনের উইক এন্ড টেলিভিশনে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত আবু সাঈদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্য পেশ করেন।


* বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বভ্রমণরত ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ নিউইয়র্কে এক সভায় বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল অশান্ত হয়ে পড়বে। বক্তব্যের শুরুতে তিনি বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমি, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ, শরণার্থীদের ভারতে আগমনের কথা বর্ণনা করেন।


* বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত আবদুস সামাদ আজাদ ১১ জুন দিল্লি থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের কাছে একটি আবেদন পাঠান। সে আবেদনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য পেশ করতে দেওয়া হোক। কারণ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং তাঁর সামরিক সরকার বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করছেন এবং ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গণহত্যা বন্ধে বাংলাদেশ থেকে অবিলম্বে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য ইয়াহিয়া খানকে বাধ্য করতে পাকিস্তানের ওপর অবরোধ আরোপের জন্যও বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর কাছে তিনি আবেদন জানান।


* বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মুক্তাঞ্চলে চার দিনব্যাপী সফরের পর এই দিন মুজিবনগরে ফিরে আসেন। মনসুর আলী জানান, শিবিরসমূহে তিনি তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অদম্য মনোবল ও অনমনীয় দৃঢ়তা প্রত্যক্ষ করেছেন।


* ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার উত্তরে চানলায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের একটি দলকে অ্যামবুশ করেন। পর্যুদস্ত পাকিস্তানি সেনারা ইয়াকুবপুরের দিকে পালানোর পথে আরেক দল মুক্তিযোদ্ধার আক্রমণের মুখে পড়ে। দুই অভিযানে পাকিস্তানি সেনাদের ক্ষয়ক্ষতি এবং অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।


* কুমিল্লার লাকসামে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি গাড়িতে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল অ্যামবুশ করে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহের দুর্গাপুর, সিলেটের এনায়েতপুর, পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় ও নোয়াখালীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর গুলিবিনিময় হয়।

 

সব বয়সী, পেশার মানুষ দেশমাতৃকাকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে।   ফাইল ছবি

সব বয়সী, পেশার মানুষ দেশমাতৃকাকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। ফাইল ছবি

মস্কো সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ও সোভিয়েত নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠক শেষে এক যুক্ত ইশতেহারে বলা হয়, অবিলম্বে পূর্ব বাংলায় এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে সেখান থেকে ভারতে উদ্বাস্তু যাওয়া নিশ্চিতরূপে বন্ধ হয়। উভয়পক্ষই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন যে, শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং উদ্বাস্তুরা যাতে নিরাপদে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করতে পারে তার সমস্ত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ বেঙ্গল ‘ডি’ কোম্পানির এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা কসবার উত্তরে চার্নলে পাকসেনাদের  এ্যামবুশ করে। এ অভিযানে ১২ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। চার্নলে পর্যুদস্ত পাকসেনারা ইয়াকুবপুরের দিকে পালাবার পথে আরেকদল মুক্তিযোদ্ধার এ্যামবুশের মুখে পড়ে। এখানে পাকবাহিনীর ৮ জন সৈন্য নিহত ও ১৩ জন আহত হয়। এ দুটি এ্যামবুশের পর অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।

মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল কুমিল্লার লাকসামে পাকবাহিনীর একটি গাড়িতে এ্যামবুশ করে ফলে এতে ৫ জন পাকসৈন্য নিহত হয় এবং পাকসেনাদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এদিন সন্ধ্যায় বলা হয় চুয়াডাঙ্গার শেয়ালমারীতে ৫ জুন মাইন বিস্ফোরণে ২টি সামরিক ট্রাক ধ্বংস হয়ে ২৯ জন পাকহানাদার নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। ওই মাইন বিস্ফোরণের শব্দে ভীত পাক হানাদাররা জীবননগর দর্শনা থেকে ঘটনাস্থলের দিকে আসে। দুইপক্ষেই পরস্পর মুক্তিসেনা বলে ভুল করে এবং পরস্পরের ওপর গুলি চালাতে থাকে। ফলে ১৩ জন পাকহানাদার নিজেদের গুলিতেই নিহত হয়।

পূর্ব পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি খাজা খায়রুদ্দিন ও পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপের জন্য তাকে অভিনন্দন জানান এবং আশ্বাস দেন, শান্তি কমিটি এক পাকিস্তানের আদর্শ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

আইনজীবী জুলমত আলী বলেন, “আওয়ামী লীগ জনগণের বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। তারা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে কিছু সংখ্যক বিচ্ছিন্নতাবাদীকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। এসব দুস্কৃতকারীদের অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।” তিনি আরো বলেন, “সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ হস্তক্ষেপ না করলে বিশ্বের মানচিত্র থেকে অখন্ড পাকিস্তানের নাম মুছে যেতো। সেনাবাহিনী হিন্দু ও আওয়ামী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে।”
পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির (মফস্বল সাংবাদিক সংগঠন) সহকারী সম্পাদক এম এ রব (বগুড়া আজিজুল হক কলেজের শিক্ষক) বলেন, “সেনাবাহিনী দেশদ্রোহীদের ধ্বংস করেছে। এখন সাংবাদিকদের উচিত ভারতীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে কলম ধরে দেশের মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করা।”

স্বাধীনতা- বিরোধীদের মধ্যে পাকিস্তানবোধ জাগানোর জন্য পাকিস্তান কল্যাণ ও শান্তি পরিষদ ১৪ আগষ্ট থেকে জাতীয় সংহতি কল্যাণ ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ব সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭১ সালের এইদিনে আর্জেন্টিনার বুদ্ধিজীবী মহলের একটি প্রতিনিধিদল সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. লুইস মারিয়া ডি পাবলো পার্ডোর সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং পশ্চিমবঙ্গে যেসব শরণার্থী এসেছিল তাদের জরুরী সাহায্য-সহযোগিতা পাঠানোর অনুরোধ করে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। আর্জেন্টিনার প্রথম সারির লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিত্রশিল্পী, বিচারক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, সঙ্গে স্বনামধন্য লেখক মাদামি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো এবং জর্জ লুইস বার্জেস এবং শ্রদ্ধেয় ফাদার ইসমাইল কুলিস, ই এল সালভাদর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন। স্মারকলিপির পাঠযোগ্য অংশ আর্জেন্টিনার পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল।

‘পূর্ববঙ্গের সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশাল জনগোষ্ঠী নারী, পুরুষ, শিশু পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়েছে এবং বিশাল সমস্যা তৈরি হয়েছে। নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভারত তার শান্তি, সহ অবস্থান ও পারস্পরিক সহযোগিতা কামনা করছে। শরণার্থীরা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের জন্য কঠিন সংগ্রাম করছে। ভারত, যারা নিজেরাই নিজেদের জাতিগঠনে কাজ করছে, তারা এই বিশালসংখ্যক শরণার্থী একা আশ্রয় দিতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সমস্যা মানুষের দুঃখ দুর্দশার ঘটনা কোন সীমারেখা মানে না। পৃথিবীর যে কোনো স্থানের দুঃখ, মৃত্যু, দরিদ্রতা পুরো মানবজাতির জন্য উদ্বেগের। তবুও এটা দুঃখজনক যে, পূর্ববঙ্গের ঘটনায় এখনও বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়নি অথবা মানবিক সমস্যা, যেগুলো অন্যকোথাও সৃষ্টি এবং যার উপর কোনো হাত নেই, সেগুলো সমাধানের জন্য ভারতকে সাহায্য করার ব্যাপারেও যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যায়নি। আশা করছি যে, আমাদের সরকার নিজেদের সার্বজনীন ও পারস্পরিক সংহতির ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দ্রুততার সঙ্গে যথাসাধ্য সর্বোচ্চ সাহায্য করবে, যেন অবস্থার প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী ভারতের উপর আরোপিত এই সঙ্কটের সমাধান হয়।’

দৈনিক কালান্তরে ‘মুক্তিযোদ্ধারা দেশের মাটি থেকে পাক হানাদারদের উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে চারদিনব্যাপী সফরের পর আজ মুজিবনগরে প্রত্যাবর্তন করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দেশের মাটি থেকে পাক হানাদারদের উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর। ওই সফরের সময় তিনি মুক্তিফৗজ নিয়ন্ত্রিত কতিপয় শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ওই শিবিরসমূহে তিনি ‘তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অদম্য মনোবল ও অনমনীয় দৃঢ়তা’ প্রত্যক্ষ করেছেন।

আকাশবাণীর খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র বাংলাদেশের পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত স্বাগত কেন্দ্রগুলোকে বন্দী শিবিরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি জানান, সম্প্রতি ভারতের পথে আসার সময় বহুসংখ্যক শরণার্থীকে পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ জোর করে ওই স্বাগত কেন্দ্রগুলোতে ধরে নিয়ে গেছে।

ঢাকা থেকে পাকসামরিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ইংরেজী দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকার অধিকাংশ বাঙালি কর্মচারীকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে বলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ প্রচার করে। পাক অধিকৃত বাংলাদেশে সামরিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ওই সকল পত্রিকার কোন গ্রাহক নেই। সামরিক কর্তারা পত্রিকার ২০০০ কপি কিনে নেয়, মাঝে মাঝে সেনাদের মধ্যে বিমান থেকে এগুলো ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু সাধারণ নিরপেক্ষ কোন বেসামরিক পাঠক নেই।

করাচীর ডন পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক আলী জাফরী এদিন লন্ডনে বাংলাদেশে সংঘটিত পাক নৃশংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়ে জনসাধারণের কাছে এই মর্মে আবেদন জানিয়েছেন যে, তারা যেন ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী টেস্ট ম্যাচগুলো বয়কট করে। আলী জাফরী ইতিপূর্বে পাকিস্তানে ব্যক্তি স্বাধীনতা অপহরণের প্রতিবাদে পাক নাগরিকত্ব বর্জন করেছিলেন।