৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

০৭ জুন ১৯৭১ এই দিনে

* ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ৭ জুন মস্কোতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে গ্রোমিকোর সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা শরণার্থীদের বিষয়ও উঠে আসে। আন্দ্রে গ্রোমিকোকে তিনি বলেন, ভারতের একার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতা চান তিনি।


* বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করার উদ্দেশ্যে একই দিনে ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ চার দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে পৌঁছান। সেখানে সরকারি কর্মকর্তা, সিনেট ও কংগ্রেসের সদস্য এবং বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।


* যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগা হিলালি এক চিঠিতে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডিকে বলেন, ভারত শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে বাধা না দিলে সমস্যার তাড়াতাড়ি সমাধান হবে। তাদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের জন্য পাকিস্তান উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করতে পাকিস্তান ও জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানান আগা হিলালি।


* ইউনিসেফের একজন মুখপাত্র এই দিন জানান, বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ৩২ টন ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে ভাড়া করা একটি বিমান কলকাতায় রওনা হবে। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ছাড়াও প্লাস্টার, ব্যান্ডেজ, ইনজেকশন দেওয়ার সুচ ও সিরিঞ্জও থাকবে।


* বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য জাপান ৩০ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই অর্থ দিয়ে জাপান থেকে চাল কেনা হবে।


* ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রধান মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ আজ লাখ লাখ বাঙালির রক্তে রঞ্জিত। এই রক্তস্নানের মধ্য দিয়ে অবশ্যই বাংলার স্বাধীনতা আসবে। কেউ সাহায্য করুক বা না করুক, বাংলাদেশের মানুষ লড়াই চালিয়ে যাবে।


* মাওলানা ভাসানী আরও বলেন, এই সংকট মুহূর্তেও ইয়াহিয়া খান সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা প্রচার করছে, ভারতের টাকা এবং পূর্ব বাংলার হিন্দুদের সহযোগিতায় কিছু দুষ্কৃতকারী পাকিস্তানকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তিনি এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান।


* বাংলাদেশ সংসদীয় দলের নেতা ফণীভূষণ মজুমদার এদিন লক্ষ্ণৌয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্ন নিয়ে ভারতের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণনাশের আশঙ্কায় তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। এই সংকটজনক সময়ে তাঁর জীবনের নিরাপত্তাই অত্যন্ত জরুরি।


* ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার টোয়েনস গার্ভে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্ত এলাকার শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ত্রাণ কমিশনার বি বি মণ্ডল। স্যার গার্ভে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জির সঙ্গে দেখা করলে তিনি শরণার্থী সংকটকে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে দেখার জন্য ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে অনুরোধ করেন।


* পাকিস্তান সরকার এদিন ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করে। ঘোষণায় বলা হয়, এসব নোট ৭ জুন মধ্যরাত থেকে অচল বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ইয়াহিয়া খান অর্থসংক্রান্ত একটি সামরিক বিধি জারি করেন।


* পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে জাতিসংঘের সাহায্যসামগ্রী বণ্টন করার পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পাকিস্তান সরকার এই দিন পরিত্যাগ করার ঘোষণা দেয়।


* পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর টিক্কা খান এদিন আগরতলা মামলার সরকারপক্ষের কৌঁসুলি টি এইচ খানকে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন।


* পূর্ব পাকিস্তানের (‘খ’ অঞ্চল) সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ এদিন সামরিক বাহিনীকে আরও আক্রমণাত্মক করার জন্য সামরিক সেক্টরগুলোকে পুনর্গঠিত করে ১৫০ নম্বর সামরিক আদেশ জারি করে।


* মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর খান ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, যেকোনো মূল্যে আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হবে। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরুর আগে পাকিস্তানি পতাকা ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের দাবি এবং ইসলামি ও পাকিস্তানি আদর্শে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।


* পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল এই দিন ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা থানা ক্যাম্প আক্রমণের উদ্দেশ্যে শ্রীপুরের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। নিদ্রিত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দোহা কাজল, নাজমুল আবেদীন, নারায়ণচন্দ্র ধর ও আবুল কালাম শহীদ হন। পুনর্গঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়।


* পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল এই দিন ফেনীর ভান্দুরা রেলস্টেশনের পাশের সেলোনিয়া নদীর তীরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে অতর্কিতে আক্রমণ করে। তারা সারা দিন ও রাত মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে।

 

ঘুমন্ত একদল মুক্তিযোদ্ধার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায় পাকবাহিনী। ফাইল ছবি

ঘুমন্ত একদল মুক্তিযোদ্ধার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায় পাকবাহিনী। ফাইল ছবি

ফেনীতে মুক্তিবাহিনীর ভান্দুরা রেল স্টেশন-সেলোনিয়া নদী তীরে অবস্থানের ওপর পাকসেনারা অতর্কিতে হামলা চালায়। সারাদিনভর এবং এমনকি রাতেও হানাদাররা মর্টার গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে। পাকসেনাদের এ প্রচন্ড আক্রমণের মুখেও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখে।

সাতক্ষীরার দেবহাটা থানা ক্যাম্প আক্রমণের উদ্দেশ্যে শ্রীপুরের খেলার মাঠের পার্শ্বে একটি বাড়িতে আশ্রয়রত ৪৫ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধার ওপর ভোরে পাক হানাদাররা অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ঘুমন্ত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দোহা কাজল, নাজমুল আবেদীন, নারায়ন চন্দ্র ধর ও আবুল কালাম শহিদ হন। তবে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পালিয়ে যায়।

আগরতলা মামলার সরকার পক্ষের কৌশলী টি এইচ খানকে টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের স্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ইয়াহিয়া খান অর্থ সংক্রান্ত সামরিক বিধি জারি করেন। তাতে বলা হয়, যেসব পাকিস্তানী নোটে ‘বাংলাদেশ’ অথবা ‘জয়বাংলা’ লেখা অথবা মুদ্রিত থাকবে সেসব নোট অচল বলে ধরা হবে। ৫০০ ও ১০০ টাকার পাকিস্তানী নোট ৭ জুন মধ্যরাত থেকে অচল বলে গণ্য হবে।

ঢাকায় সামরিক বাহিনীকে আরো আক্রমণাত্মক করার জন্য সামরিক সেক্টরগুলোকে পুনর্গঠিত করে ১৫০ নং সামরিক আদেশ জারি করা হয়। ইসলামাবাদে জনৈক মুখপাত্র ঘোষণা করেন, পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সংস্থাগুলোর জাতিসংঘের সাহায্য সামগ্রী বন্টন করার পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পাকিস্তান পরিত্যাগ করেছে।

মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর ঢাকায় এক বিবৃতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরুর আগে পাকিস্তানী পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের দাবি করেন এবং ইসলামী ও পাকিস্তানী আদর্শে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, এক ব্যক্তির খামখেয়ালী ও ঔদ্ধত্যের ফলে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছিল। পাকিস্তান একটি আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র এবং যে কোনো মূল্যে আমরা দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে একে রক্ষা করবো।

ডা. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বগুড়া সেন্টাল হাই স্কুল মাঠে শান্তি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন প্রিন্সিপাল মওলানা নজিবুল্লাহ, বগুড়া জেলা জামায়াত নেতা মওলানা আবদুর রহমান। বক্তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী হিসেবে চিহ্নিত করে এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানান।

খান ফজলে রব চৌধুরী, এমএনএ নূরুল ইসলাম সিকদার প্রমুখের নেতৃত্বে ঝালকাঠির স্বাধীনতাবিরোধীরা সংগঠিত হয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, “যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবে তাদেরকেই ধরতে হবে।”