৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

৩১ মে ১৯৭১ এই দিনে

৩১ মে ১৯৭১

 

শরনার্থী শিবিরে কলেরার প্রকোপ দেখা দেয় ব্যাপক হারে। ফাইল ছবি

শরনার্থী শিবিরে কলেরার প্রকোপ দেখা দেয় ব্যাপক হারে। ফাইল ছবি

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সভাপতিত্বে সরকারের নীতিনির্ধারণী রাজনৈতিক কমিটি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা সভায় বসে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং পর্যালোচনায় বলেন, পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের সামরিক তৎপরতার ফলে এশিয়া মহাদেশের এই অঞ্চলে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। যে কোনো অঞ্চলে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা থাকলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো সদস্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকতে পারে।

পর্যালোচনা সভায় পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র-এই চার দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিংকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পঞ্চম স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র চীনকে ভারত স্বীকার করে না।

বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের মধ্যে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় তার প্রতিকারে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন, ১০ লাখ কলেরার টিকা প্রভৃতি পাঠায়। কলকাতার ওষুধের ডিপোগুলোতেও নানা ধরনের ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়। পশ্চিমবঙ্গের পৌর সংস্থার কাউন্সিলররা মিছিল করে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য দাবি জানান।

মেয়র শ্যামসুন্দর গুপ্তের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় পৌর ভবন থেকে মিছিল রওনা হয়। রাজভবনে এলে রাজ্যপাল শান্তিস্বরূপ ধাওয়ান তাদের বক্তব্য শোনেন। বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতির দাবিতে ২৬ মে পৌর করপোরেশনের বিশেষ অধিবেশনে নেয়া প্রস্তাবের প্রতিলিপি মেয়র রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন।

শ্রীলঙ্কার সংসদে তামিল ফেডারেল পার্টির সদস্য ভি ধর্মালিঙ্গন একটি বেসরকারি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সররকারকে স্বীকৃতি দেয়া হোক।

এম এইচ উইহেনের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের আট সদস্যের প্রতিনিধিদলের ছয়জন পূর্ব পাকিস্তানের উদ্দেশে ওয়াশিংটন থেকে রওনা দেন। দলটি পাঠানো হয় পাকিস্তান সাহায্যগোষ্ঠীর পক্ষে পাকিস্তানের বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা সমীক্ষা করে দেখার উদ্দেশ্যে।

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রধান মাওলানা ভাসানী ৩১ মে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা বা মীমাংসা সম্ভব নয়। হয় স্বাধীনতা, নয় মৃত্যু। তিনি বলেন, কয়েকটি রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন, তাতে সময় নষ্ট করলে বাংলাদেশেরই ক্ষতি।

চীন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, আলবেনিয়াসহ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভূমিকায় দুঃখ প্রকাশ করে মাওলানা ভাসানী বলেন, দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে এবং অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে এই রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলছে না। ভিয়েতনামের জন্য বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করেছে, কিন্তু তারাও নিশ্চুপ। মাওলানা ভাসানী আরও বলেন, বর্তমান যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র আমজাদুল হক বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে, এরপর যুক্ত পাকিস্তানের ভিত্তিতে আর কোনো আপসরফার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ এখন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এর বাইরে রাজনৈতিক সমাধানের কোনো অবকাশ নেই। কেউ সে রকমের চেষ্টা করলে তা অগ্রাহ্য করা হবে। পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে যে হত্যালীলা চালিয়েছে, তারপর যুক্ত পাকিস্তানের ভিত্তিতে কোনো আপস অসম্ভব।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার উত্তম সমাধানের জন্য দরকার রাজনীতিতে অভিজ্ঞ এবং জনগণের আস্থাভাজন রাজনীতিক। তাই দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর জরুরি। তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব যে ভুল করেছেন, আমি তা করব না।’সাতজন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল এই দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী-নিয়ন্ত্রিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শালদা রেলস্টেশনে অতর্কিতে হানা দিলে দুজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কুটি নামে গ্রামেও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনাদলের একজন চালক নিহত এবং একটি জিপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য আরেকটি দল সিঙ্গাবিলে অ্যাম্বুশ করলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কয়েকজন সেনা নিহত হন।

৩১ মে রাতে এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লার দক্ষিণে জগমোহনপুরে পাকিস্তানি সেনাঘাঁটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হন।

 

 

৩১ মে ১৯৭১: ভারতে আশ্রয় নেয়া শরনার্থীরা কলেরায় আক্রান্ত হতে থাকে

বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের মধ্যে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় তার প্রতিকারে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন, ১০ লাখ কলেরার টিকা প্রভৃতি পাঠায়। কলকাতার ওষুধের ডিপোগুলোতেও নানা ধরনের ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়।