৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১৪ মে ১৯৭১ এই দিনে

* হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ১৪ মে বিশ্ব শান্তি কংগ্রেসের অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন জানানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বার্তা পড়ে শোনানো হয়। সে বার্তায় ইন্দিরা বলেন, ভারত যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, তাতে তার পক্ষে পূর্ববঙ্গের ঘটনাধারার প্রতি উদাসীন থাকা কঠিন। ইন্দিরা গান্ধী প্রত্যাশা জানিয়ে বলেন, বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ মানবিক অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হবেন। পূর্ববঙ্গে জনসাধারণের দাবি যেহেতু ন্যায্য, তাই তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই যে তাদের দেশ শাসন করবেন, বিশ্বের মানুষ তাদের এই দাবি নিশ্চয়ই সমর্থন করবেন।


* অধিবেশনে ইন্দিরা গান্ধীর বার্তা পড়ে শোনান ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য অমৃত নাহার। অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা কৃষ্ণ মেনন বলেন, পূর্ববঙ্গে কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না, সেখানে গুলি চালিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমন করা হচ্ছে।


* জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহী এদিন জাতিসংঘের সামাজিক কমিটিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্ন কোনো আন্তর্জাতিক বিরোধ নয়।


* ভারতের মুম্বাইয়ে আদি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সভায় বাংলাদেশকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়। সভায় নেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়, ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশও স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে আসবে। তারা বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে সব রকমের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।


* পিএসপি নেতা সমর গুহ কয়েক দিনের সীমান্ত এলাকা ভ্রমণ শেষে কলকাতায় সাংবাদিকদের কাছে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এই চরম মুহূর্তে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলে শরণার্থী সমস্যার গুরুদায়িত্ব ভারতের ওপরই বর্তাবে। এর ফলে বিশেষ করে ভারতের পূর্বাঞ্চলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেবে। আর তার পরিণাম ছড়িয়ে পড়বে সমস্ত ভারতে।


* ১৪ মে কলকাতায় বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ লাইট হাউস সিনেমা হলে প্রমোদ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘নয়া জমানা’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করে। সংগঠনটি জানায়, এই প্রদর্শনীর টিকিট বিক্রির টাকার সঙ্গে ছবির নির্মাতা নিজেও ব্যক্তিগতভাবে অর্থ যুক্ত করে বাংলাদেশের সাহায্যার্থে প্রদান করবেন। সে অর্থের চেক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী তরুণকান্তি ঘোষের হাতে তুলে দেওয়া হয়।


* জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা দুই দিন আসামের কাছাড় জেলায় বাংলাদেশের শরণার্থীদের পরিদর্শন করার পর আসামের শিলচরে এই দিন সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রতিনিধিদলের নেতা চার্লস মেস বলেন, বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যার মোকাবিলায় ভারতকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা করা হবে।


* পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীকে ১৪ মে পূর্ব পাকিস্তানের সহকারী সামরিক শাসক নিযুক্ত করা হয়।


* যে দল পাকিস্তানের আদর্শ ও সংহতিতে বিশ্বাস করে না, তার সঙ্গে যুক্ত থাকা উচিত নয়—এ ঘোষণা দিয়ে কক্সবাজারে চীনপন্থী ন্যাপের আহ্বায়ক মাহমুদুল হক চৌধুরী সে অঞ্চলে ন্যাপের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন।


* পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয়দের সহায়তায় মৌলভীবাজারের কাগাবালা ইউনিয়নের নড়িয়া গ্রামে হিন্দুধর্মাবলম্বী কয়েকজন মানুষকে হত্যা করে।


* এদিন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, বরিশালের বাকাই গ্রাম, কুমিল্লার ডাকাতিয়া নদীর পার, চৌদ্দগ্রাম, রাজশাহীর চারঘাট এবং হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের নলুয়া চা-বাগানে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সেনাদের যুদ্ধ হয়।

ডেমরা গণহত্যা, পাবনা

১৯৭১ সালের ১৪ মে শুক্রবার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর স্থানীয় রাজাকারদের সহয়তায় ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা গ্রামের প্রায় ৮০০ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এই নারকীয় হত্যাকান্ড ‘ডেমরা হত্যাকান্ড নামে পরিচিত’। ১৯৭১ সালের ১২ মে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজাকারেরা হিন্দু অধ্যুষিত এই এলাকায় এসে স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে। এরপর ১৪ মে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা হিন্দু অধ্যুষিত ডেমরা ও পাশের গ্রাম বাউশগাড়ী গ্রামে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গ্রামবাসীদের হত্যা করে গণকবর দেয়। ১৪ মে ডেমরা গণহত্যার অন্যতম নায়ক ছিল মতিউর রহমান নিজামী। দুদিন আগে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় এসে তিনি পরিকল্পনা করে যান স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে। ওই এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াজেদ আলী বলেন, এখানে ৮০০-৯০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে। অধিকাংশ মানুষকে মাটি চাপা দেয়া হয়।