৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১২ মে ১৯৭১ এই দিনে

* বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি এবং তাঁর জীবন রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১২ মে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টসহ বিশ্বনেতাদের কাছে আবেদন জানায়। সরকারের বিশেষ দূত আবদুস সামাদ আজাদ আবেদনটি প্রচার করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে অনুরোধ জানান তারা যেন সরকারের কোনো প্রতিনিধিকে অনুমতি দেয় যাতে বাংলাদেশের বিষয়টি জাতিসংঘে তুলে ধরা যায়।


* জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সংগ্রামকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই।


* ব্রিটেনের কমন্স সভায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস হোম বিবৃতি দেওয়ার পর কমন্স সভার সদস্য হিকি বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর যে পৈশাচিক তাণ্ডব চলছে, ইতিহাসে তার তুলনা বিরল। তিনি বলেন, শুধু ত্রাণসাহায্য নয়, বাংলাদেশের ব্যাপারে জাতিসংঘের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।


* পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও ট্যাংক ব্যবহার করায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এই দিন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে।


* পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও ট্যাংক ব্যবহার করায় এদিন পাকিস্তানের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।


* অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব আমেরিকার বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকা সফর শেষে খবর দেন, শকুনের দল এত খেয়েছে যে তাদের আর ওড়ার শক্তি নেই। শকুনের দল মার্চ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ বাঙালির মৃতদেহ খাদ্য হিসেবে পেয়েছে।


* ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এদিন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দেশটিতে নিযুক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পেগভ। তাঁরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং শরণার্থীদের বিষয়ে আলোচনা করেন। কূটনৈতিক মহলের ধারণা, বাংলাদেশের যুদ্ধ সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়ন কী কূটনীতি অবলম্বন করেছে, পেগভ হয়তো সে সম্বন্ধে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনা করেন।


* সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ফিজ রিলসও একই দিনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, সীমান্ত রাজ্যগুলোতে শরণার্থী পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে ইন্দিরা গান্ধী ১৬ মে পশ্চিমবঙ্গে যাবেন।


* বাংলাদেশ সাহায্য সমিতির পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল এই দিন কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হোসেন আলীর হাতে অর্থ তুলে দেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এর আগে তাঁরা সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরাসরি প্রয়োজনীয় রসদ পৌঁছে দিয়েছিলেন।


* পাকিস্তান জাতিসংঘকে জানায়, জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট বিশেষ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে সাহায্যের যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা তা অবশ্যই নেবে, তবে বিতরণ করবে নিজেদের ব্যবস্থাপনায়।


* পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) প্রধান নুরুল আমিন এদিন পশ্চিম পাকিস্তানে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী শাসন কোনো উপকারে আসবে না।


* এই দিন ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ জানায়, সুনামগঞ্জের কর্তৃত্ব সেনাবাহিনীর আয়ত্তে এসেছে। নারায়ণগঞ্জে ১২৪ সদস্যবিশিষ্ট শান্তি কমিটি গঠন করা হয়।


* পাকিস্তানি সেনারা সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের শুভপুর সেতু দখলের জন্য ট্যাংক ও কামান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়।

 

নারয়ণগঞ্জ শান্তি কমিটি গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে স্বাধীনতা-বিরোধীরা

নারয়ণগঞ্জ শান্তি কমিটি গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে স্বাধীনতা-বিরোধীরা

মার্কিন সিনেটর বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ রাখার আহ্বান জানায়। বাংলাদেশে মার্কিন বিমান ও ট্যাঙ্ক ব্যবহার সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে। মার্কিন কংগ্রেসম্যান কর্নেলিয়াস গ্যালাঘর প্রতিনিধি সভায় বাংলাদেশ সমস্যাটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সংগ্রামকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব আমেরিকার বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকা সফর শেষে খবর দেন, শকুনের দল এ্যাতো খেয়েছে যে, তাদের আর ওড়ার শক্তি নেই। মার্চ থেকে প্রায় ৫ লাখ বাঙালির মৃতদেহ তারা খাদ্য হিসেবে পেয়েছে। তবে দায়িত্বশীল মহলের হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখের ওপর।

চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়কের শুভপুর সেতু এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে পাক হানাদারবাহিনী ট্যাঙ্ক ও কামান নিয়ে আক্রমণ চালায়। সারাদিন যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা সেতু ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়। কুমিল্লার চৌমুহনীর দেড় মাইল উত্তরে মান্দারহাট নামক স্থানে এ্যামবুশরত মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য ঘেরাও করার চেষ্টা চালায়। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ বাধে। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা কোনো ক্ষতি স্বীকার না করে নিরাপদ স্থানে চলে আসতে সক্ষম হয়। ব্যর্থ পাকসেনারা পরে মান্দারহাট বাজার সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয়।

 

মার্চ থেকে প্রায় ৫ লাখ বাঙালির মৃতদেহ তারা খাদ্য হিসেবে পেয়েছে

মার্চ থেকে প্রায় ৫ লাখ বাঙালির মৃতদেহ তারা খাদ্য হিসেবে পেয়েছে

ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, পাক সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছ থেকে সুনামগঞ্জ দখল করে নিয়েছে। পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান নুরুল আমিন বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো রাজনৈতিক সমাধানের প্রশ্ন ওঠে না। প্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী শাসন কোনো উপকারে আসবে না । এখন অন্তবর্তী শাসন জারি করা হলে পূর্ব পাকিস্তানে কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে?

 

নিখিল ভারত ইত্তেহাদুল মোছলেমানের প্রেসিডেন্ট আবদুল ওয়াহিদ বলেন, বাংলাদেশের স্বীকৃতির ব্যাপারে কেউ অংশ গ্রহণ করলে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত মারাত্মক। জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনালে উ থান্ট বিশেষ এজেন্সিসমূহের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের সাহায্যদানের যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার জবাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বলেন, পাকিস্তান অবশ্যই সাহায্য নেবে, তবে এ সাহায্য বিতরণ করবে নিজস্ব সংস্থাসমূহের মাধ্যমে।

নারায়ণগঞ্জে আজিজ সরদারকে আহবায়ক করে ১২৪ সদস্যবিশিষ্ট নারয়ণগঞ্জ শান্তি কমিটি গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে স্বাধীনতা-বিরোধীরা।

 

 

১২ মে ১৯৭১, বেগম মুজিব পরিবারসহ গ্রেফতার হন

 

 
১২ মে ১৯৭১, বেগম মুজিব পরিবারসহ গ্রেফতার হন

 

এইদিন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আশ্রয় নেয়া মগবাজারের বাসা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর হোসেনের নেতৃত্বে একদল সৈন্য ঘেরাও করে। সেখানে উপস্থিত বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদকে বলেন তারা মুজিবের পরিবারকে গ্রেফতার করতে এসেছেন। তাদের কাছে খবর আছে যে এ বাসাতেই মুজিব পরিবার অবস্থান নিয়েছে। মেজর হোসেন ওয়্যারলেস মেসেজ দিয়ে আরও সৈন্য আনেন। সন্ধ্যার সময় সবাইকে কন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে দিয়ে ধানমণ্ডির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে এ সময় এনা চিফ গোলাম রসুল মল্লিক তাদের দেখে ফেলেন এবং হাত নাড়েন। মেজর হোসেন তাদের ১৮ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর বাড়িতে রেখে বাহিরে ২০ জন সৈনিকের প্রহরার ব্যবস্থা করেন।