৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২৬ এপ্রিল ১৯৭১ এই দিনে

 

 

* টাইম ম্যাগাজিন এক নিবন্ধে বলে, ‘গৃহযুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী গেরিলা তৎপরতার অধ্যায় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, অধিকাংশ শহর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আর বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে গ্রাম এলাকার বেশিরভাগ। পূর্ব পাকিস্তানকে কব্জা করে রাখার সংকল্পে পাকিস্তান যতই অটল থাক, পরিস্থিতি-দৃষ্টে সিদ্ধান্তে আসতে হয় যে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই।’

* মহালছড়িস্থ মুক্তিযোদ্ধা হেডকোয়ার্টার আক্রমণ প্রতিহত করতে মেজর মীর শওকত আলী ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান ও তার দলকে নানিয়ারচর বাজারে বড় পাহাড়ের ওপর অবস্থানের নির্দেশ দেন। ক্যাপ্টেন কাদেরের নেতৃত্বে আরেকটি দলকে সড়কপথে পাকবাহিনীর গতিরোধ করতে পাঠান। লে. মাহফুজের নেতৃত্বে অপর একটি দলকে রিজার্ভ এ রাখেন যাতে পাল্টা আক্রমণ করা যায়। 

* এদিন সকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিত বিমান হামলা চালায় পটুয়াখালীতে। বোমা হানা দেয় দুটি জঙ্গি বিমান, দুটি হেলিকপ্টার থেকে নামানো হয় ছত্রীসেনা। নিহত হয় হাজারো নিরীহ মানুষ। নির্বিচারে চলে থাকে লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ। পাক হানাদার বাহিনী গুলি করতে করতে শেরপুর শহরে প্রবেশ করে। অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যার মাধ্যমে শেরপুর দখলে নিয়ে ঘাঁটি স্থাপন করে নয়ানী জমিদার বাড়িতে।

* প্রাথমিক অবস্থায় পাকহানাদার বাহিনী শহরে ঢুকতে ব্যর্থ হলে ভোর রাতে বিমানবাহিনীর সহায়তায় প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ করে এবং সিরাজগঞ্জ শহরে ঢোকে। এরপর পাক বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার মেজর মোহাম্মদ আরিফ সিরাজগঞ্জ শহর ও গ্রামের ১০ মাইল পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। ঐদিন ভোররাত থেকে সিরাজগঞ্জ শহর ও আশপাশের গ্রাম সমূহ দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।

* সকাল ১১টার দিকে পাকবাহিনী জয়পুরহাট শহর থেকে আট কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কড়ই কাদিরপুর গ্রামের পশ্চিম পাশের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পরে পুরো গ্রামটিতে। রাইফেলের মুখে পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রামের সব বয়সের পুরুষদের একত্রিত করে এই গ্রামের রাস্তা সংলগ্ন পুকুরের পাড়ে। নির্বিচারে নিরিহ গ্রামবাসীর উপর গুলি চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী দালাল রাজাকার চক্রের প্ররোচনায় ৩৭১ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

* কুড়িগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি টহলদার দলের সঙ্গে পাকবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বেশকিছু ক্ষতিসাধন করে নিরাপদ ঘাঁটিতে ফিরে যায়। পাকহানাদার বাহিনী বরিশাল দখলের পর শুরু করে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুট ও অগ্নিসংযোগ। ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনী অবিরাম বোমা ও গুলিবর্ষণের মুখে এসব এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা শহর ছেড়ে গ্রাম অঞ্চলে সরে যায়। পাকবাহিনী সিলেটের কালাগুল চা-বাগানে হামলা চালিয়ে ৫০ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।

* সাবেক প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী ও মুসলিম লীগের (কাইয়ুম) সহ-সভাপতি মফিজুদ্দিন আহমদ, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (কনভেনশন) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মওলানা আবদুল মান্নান ঢাকায় এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘পাকিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও ওলেমারা গৌরবময় ভূমিকা পালন করবে।’ তারা আরও বলেন, ‘পাকিস্তানকে রক্ষা এবং দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারীসহ সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক নাগরিকেরা দেশের পশ্চিমাংশের সঙ্গে একত্রিত হতে যে প্রস্তুত আছেন সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’ তারা এব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানায়।

* ইতিপুর্বে জারিকৃত মিশন বন্ধের নির্দেশ কার্যকর করতে সামরিক কর্তৃপক্ষ বেলা ১২টায় ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাই কামিশন বলপূর্বক বন্ধ করে দেয়। রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল হামিদ খান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নির্ধারণের জন্যে ঢাকা আসেন। টিক্কা খানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা হামিদ খানকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানান।

* সামরিক কর্তৃপক্ষ আদেশ জারি করে, কেউ যোগাযোগ ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে তাকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। যেখানে ক্ষতিসাধন করা হবে তার আশপাশের অধিবাসীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। শান্তি কমিটির জেলা আহ্বায়কদের নাম ঘোষণা করা হয়: বরিশাল জেলা – মওলানা বশির উল্লাহ আতাহরী, প্রাক্তন এমএলএ অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সিকদার, দিনাজপুর জেলা – মৌলভী মতিউর রহমান চৌধুরী ও আহমদ জান মোক্তার, ঈশ্বরদি (পাবনা জেলা) – মমতাজুর রহমান, পটুয়াখালী জেলা – প্রাক্তন এমএলএ কসিমউদ্দিন সিকদার এবং বগুড়া, খুলনা, মাদারীপুর ও পটুয়াখালী জামে মসজিদের ইমামবৃন্দ।