৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২৪ এপ্রিল ১৯৭১ এই দিনে

* বৃটিশ পার্লামেন্ট শ্রমিকদলের সদস্য উড্রো ওয়াট বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপক হত্যার প্রতিবাদে আমরা সবাই এতো নিশ্চুপ কেন? পূর্ব পাকিস্তানে যেসব ঘটনা ঘটছে তা অত্যন্ত জঘন্য। হিটলার ও স্ট্যালিনের পর এ ধরনের হত্যাকান্ডের কথা আর কখনো শোনা যায়নি। আমরা এ বিষয়ে কি করছি? জেনারেল ইয়াহিয়াকে এখনও আমরা সাহায্য দিচ্ছি। সারাদেশ উজাড় করার বিষয়টি মোটেই ঘরোয়া ব্যাপার নয়।

* ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট, বাঙালীপুর, টিয়রপাড়া ও মধুপুরে ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি শুরু হয়। এ সমস্ত ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ১ মাস ১৫ দিন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে পুলিশ সুপার নূরুল মোমিন খান (মিহির) ফরিদপুর পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার খুলে দেন। ফরিদপুরে মুক্তিবাহিনীর জন্য এটাই প্রথম অস্ত্র লাভ।

* ভারতের হিলিতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাকবাহিনী আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান ছেড়ে পিছিয়ে গিয়ে ভারতের ভূখন্ডে পুনরায় সংগঠিত হয়। হিলি সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাকিস্তানিরা বারবার ইপিআর বাহিনীকে তাদের হাতে সমর্পণ করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ-এর মেজর বেদী, ক্যাপ্টেন ঘোষ ইপিআর সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান।

 

* পাকহানাদার বাহিনী সড়কপথে মাদারীপুর শহরে প্রবেশ করে। শহরে ঢুকেই কালবিলম্ব না করে স্থানীয় দোসরদের সহযোগিতায় এম.পি আসমত আলী খান ও ফনীভূষণ মজুমদারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং বহু বাড়িসহ দোকানপাট লুট করে। রাঙামাটি থেকে মহালছড়ির থেকে আগত পাকবাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্যের সঙ্গে ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের ও লে. মাহফুজের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের কুতুবছড়ি নামক স্থানে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পাকবাহিনীর প্রচুর ক্ষতি হয়।

* পাকবাহিনীর একদল সৈন্য চিংড়ি নদী দিয়ে নানিয়ারচর বাজার হয়ে মহালছড়ির দিকে অগ্রসর হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে করেরহাটে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকসেনাদের প্রতিহত করে। ঢাকার মিরপুরে দেওয়ান ওয়ারেসাত হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় মো. সামীউদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট ‘শান্তি কমিটি’ গঠিত হয়। 

 

* এ সভায় উপস্থিত ছিলেন ‘কেন্দ্রীয় শান্তি’ কমিটির আবুল কাসেম, মাহমুদ আলী, আবদুল জব্বার খদ্দর, মেজর আফসারউদ্দিন প্রমুখ। শান্তি কমিটির ১৮টি ইউনিট আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়করা হচ্ছে:  মো. ফজলুর রহমান – তেজগাঁও (পূর্ব), এস এম হাবিবুল হক – ধানমণ্ডি, এএসআই সরদার – নারায়ণগঞ্জ (শহর), মো. মনসুর আলী – দিলখুশা, আলী আহসান – জোয়ার সাহারা, গিয়াসউদ্দিন আহমদ – শরাফতগঞ্জ,  ড. আইয়ূব আলী – খিলগাঁও, মৌলবী সেকেন্দার আলী – নবীনগর (কুমিল্লা), আবদুল মজিদ সরকার – জয়দেবপুর, মো. মস্তান খান – জয়দেবপুর (থানা), ইদ্রিস বেপারী – রেকাবীবাজার, দেওয়ান ওয়ারেসাত আলী – মহম্মদপুর, মো, জিআন – দিলু রোড, মজিবুর রহমান – নিউ ইস্কাটন, এমএ খালেক – ধানমণ্ডি (পূর্ব), এ কে এম আবদুল্লাহ – মহাখালী, মো. শফিউদ্দিন খান – মিরপুর ও এম এ খালেক – শাজাহানপুর।

* সরকারি এক হ্যান্ড আউটে ঢাকা শহরের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলা হয়, নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররমসহ সমস্ত জায়গায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কোথাও কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। প্রদেশের সর্বত্র সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যথারীতি কাজ চলছে। সব ব্যাপারেই জনগণ সহায়তা করছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা থেকে দুষ্কৃতকারীদের উচ্ছেদ করে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করায় জনগণের মধ্যে পুরোমাত্রায় আস্থা ফিরে এসেছে।