৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১৬ এপ্রিল ১৯৭১ এই দিনে

* বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এদিন অত্যন্ত কর্মব্যস্ত দিন কাটান। এদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহচর ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকাল (১৭ এপ্রিল) গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান হবে বাংলাদেশ সরকারের। আপনারা যারা সে অনুষ্ঠানে যেতে চান তারা অবশ্যই ভোরবেলা প্রেসক্লাবে উপস্থিত থাকবেন। আমাদের গাড়ী আপনাদের সে অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবে।

* আগের দিন পাকবাহিনীর প্রচন্ড বিমান হামলায় পর্যুদস্ত  মুক্তিবাহিনী মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা তাদের সদর দফতর চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রথমে মেহেরপুর পরে সেরাতেই ভৈরব নদীর অপর পারে ইছাখালী বিওপিতে সদর দফতর স্থানান্তর করে। ঢাকায় কারফিউর মেয়াদ সকাল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়।

* পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক-কর্মচারিদের অবিলম্বে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। ভারত সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু প্রবেশের খবর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকা বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান, যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক, নিউইয়র্ক টাইমস ফলাও করে প্রচার করে। এদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে’, ‘বিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের মুক্তি আন্দোলন যার প্রতি সর্বশ্রেণীর জনগণের আকুন্ঠ সমর্থন রয়েছে তেমন খুবই কম দেখা গেছে’, ‘এই ধরনের মুক্তিযুদ্ধ খুব কম দেখা যায় যেখানে অস্ত্রশস্ত্রেও রয়েছে অভাব’, ‘কয়েকটি শহরে মুক্তি সংগ্রামীরা এখনও প্রশাসন চালিয়ে যাচ্ছে’, ইত্যাদি।

* রাঙামাটির খাগড়া রেস্ট হাউজে অবস্থানরত পাকবাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্যের ওপর ক্যাপ্টেন কাদেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায়। এ সংঘর্ষে অফিসারসহ ২০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। বাকি সৈন্যরা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা সংঘর্ষের পর নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
কুমিল্লার গঙ্গাসাগর ব্রিজে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনী প্রবল গুলিবিনিময় হয়। কাপ্তাই জলবিদুৎ কেন্দ্র দখলে নিতে দিনব্যাপী মুক্তিবাহিনী ও হানাদারবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে আশুগঞ্জ বিদুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ করায়ত্ব করার জন্যে সংঘর্ষ হয়। 

*bসকালে পাকসেনারা পার্বতীপুর থেকে ১ টি ট্যাঙ্কসহ ভারী অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ভবানীপুরের হাওয়া গ্রামের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়।এ যুদ্ধে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন। ভেড়ামারায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ হয়। পাকবাহিনীর প্রবল আক্রমণে সুবেদার মোজাফফর তার বাহিনী নিয়ে পিছু হটেন। সামরিক অবস্থানের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভেড়ামারা পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়।

* দিনাজপুর শহর সম্পূর্ণরূপে পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পাকবাহিনী ময়মনসিংহ জেলা দখল করে হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের রাজত্ব সৃষ্টি করে। কুমিরা থেকে মুক্তিবাহিনী সীতাকুন্ডে এসে অবস্থান নেয় এবং প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরি করে। পাকবাহিনী কুষ্টিয়া দখল করে এবং মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দী অবাঙালিদের জেলখানা থেকে ছেড়ে দিয়ে রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করে। এরপর বাঙালি-অবাঙালি রাজাকারেরা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়ে সারা শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

*bকেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়ক- খাজা খয়েরুদ্দিন, সদস্য- নুরুল আমিন, এ. কিউ. এম শফিকুল ইসলাম, গোলাম আজম, মাহমুদ আলী, আবদুল জব্বার খদ্দর, মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, আবুল কাশেম, ইউসুফ আলী চৌধুরী, মওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম, আবদুল মতিন, অধ্যাপক গোলাম সরোয়ার, ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ, পীর মোহসেন উদ্দিন, এ এস এম সোলায়মান, এ কে রফিকুল হোসেন, মওলানা নুরুজ্জামান, আতাউল হক খান, তোয়াহা বিন হাবিব, মেজর (অব.)আফসার উদ্দিন, দেওয়ান ওয়ারেসাত আলী ও হাকিম ইরতাজুর রহমান খান।

*সন্ধ্যায় নুরুল আমিনের নেতৃতে শান্তি কমিটির নেতৃবৃন্দ গভর্নর টিক্কা খানের সাথে দেখা করে বলেন, ‘শত্রু নিধনে তারা সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করবেন এবং নিজেরাও দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হবেন’।