৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

১৩ এপ্রিল ১৯৭১ এই দিনে

* মার্কিন সিনেটে, সিনেটর ফ্রেড হ্যারিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, "আমি পূর্ব-পাকিস্তানে নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের রক্তপাত দেখে আতঙ্কিত হয়েছি, সেই এলাকা থেকে প্রচারিত প্রচারণা বাইরের বিশ্বের পক্ষে বাস্তবে পৌঁছানো খুব কঠিন করে তোলে। পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে তার চিত্র।

* নিরপরাধ বেসামরিক হত্যার খবর ভুল প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত, আমি পাকিস্তানকে সমস্ত আর্থিক সাহায্য স্থগিত করার আহ্বান জানাচ্ছি"


* গোয়ালন্দ ঘাটে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সুবেদার শামসুল হকের নেতৃত্বে পাকিস্তানিদের একটি জাহাজ ডুবে যায়। এই সংঘর্ষে পাকিস্তানিরা আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে যায়।


* সিলেটের লাক্কাতুরায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে অসংখ্য চা-বাগানের শ্রমিক নিহত হয়েছেন।


* নড়াইল শহর পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, বগুড়াও বদরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ট্যাংক দিয়ে হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু হটতে বাধ্য করে।

বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর দিন ১৩ এপ্রিল, চারঘাট গণহত্যা দিবস। একাত্তরের ওই দিন সকালে অস্ত্রে সজ্জিত বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে চারঘাট উপজেলার থানাপাড়া গ্রামসহ কুঠিপাড়া, গৌরশহরপুর, বাবুপাড়ার প্রায় ২০০ নিরস্ত্র বেসামরিক লোককে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন আরও প্রায় ২শ' মানুষ আহত হন।

* ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল ঈশ্বরদীর সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল। সে কথা ভুলতে বসেছে সবাই। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না ওইদিন কী ঘটেছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ঈশ্বরদী শহরের নূর মহল্লায়। একটি সংখ্যালঘু পরিবারের ১২ জনকে একে একে নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞের সেই ঘটনার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে, আজো ঈশ্বরদীর ওই পরিবার পায়নি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। প্রতিবছর দু একবার করে কথা ওঠে, আলোচনা হয়, কথা দেওয়া হয় কিন্তু বছর ঘুরে আবার বছর আসে, কেউ কথা রাখে না। এভাবেই ৫০ বছর পেরিয়ে গেল কিন্তু, শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি আর মিলল না, কথা রাখেনি কেউ। ঈশ্বরদীর নূরমহল্লা কর্মকারপাড়া এলাকার সে সময়ের ব্যবসায়ী চন্দ্রকান্ত পালের বাড়িতে একাত্তর সালের ১১ ও ১২ এপ্রিল ব্যাপক লুটপাট করা হয়। ১৩ এপ্রিল সকালে ঈশ্বরদীর সবচেয়ে বড় গণহত্যাযজ্ঞ চালানো হয় ওই পরিবারে। সেদিনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা মনে হলে এখনো শিউরে ওঠেন সে সময়ের শিশু মাধবচন্দ্র পাল। স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানান, বিহারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞে সেদিন রেহায় পায়নি বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া ছোট বোন লক্ষী রানী পাল, মাত্র ৬ মাসের বিবাহিত নববধূ চায়না রানী পাল, ছোট ভাই ৮-১০ বছরের শিশু দিলীপ চন্দ্র পাল ও ছোট শিশু নরেশ চন্দ্র পাল। বর্তমানে ঈশ্বরদী বাজারের পাল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পাল সুইটস এর স্বত্বাধিকারী গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল সে সময়ের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে বেঁচে যাওয়া শিশু। তিনি জানান, ওই দিনটি ছিল তাদের পরিবারের জন্য বিভীষিকাময়। তার দাদু, বাবা-মা, কাকা কাকি, ভাই বোনসহ পরিবারের ১২ জনকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয় ওই দিন। গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল জানান, তার দাদু চন্দ্রকান্ত পাল, বাবা যোগেন্দ্র নাথ পাল, মা রেনুকা রানী পাল, কাকা গণেশ চন্দ্র পাল, কাকী দিপালী রানী পাল, বোন চায়না রানী পাল, চাচাতো ভাই-বোনদের মধ্যে দিলীপ চন্দ্র পাল, নরেশ চন্দ্র পাল, লক্ষী রানী পাল, বাসন্তী রানী পাল, সন্ধ্যা রানী পাল, দোকানের কর্মচারী গোপাল চন্দ্র পালসহ ১২ জনকে হত্যা করে তারা।