৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

০৯ এপ্রিল ১৯৭১ এই দিনে

* লে. জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে শপথ নেন। জল্লাদ টিক্কা খানের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে বাধ্য হন ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি.এ.সিদ্দিকী যিনি ঠিক একমাস আগে মার্চের ৮ তারিখে টিক্কা খানকে গভর্নর হিসেবে শপথ পাঠ করাতে অস্বীকার করেছিলেন।

* ঢাকায় এক সভায় ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট “শান্তি কমিটি” গঠন করা হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন খাজা খয়েরউদ্দীন। স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রথম ও অন্যতম প্রধান সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল এটি। সভার ঘোষণায় বলা হয়, ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট এই কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে বিভিন্ন শহরের শান্তি কমিটিগুলো কাজ করবে। এই কমিটিকে আরো কো-অপ্ট করার ক্ষমতা দেয়া হয়।

 

* জামাতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে এক ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভারত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাহায্যের নামে তাদের অশুভ উদ্দেশ্য হাসিল করছে। আসলে ভারত পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দিতে চায়। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে প্রতিটি পাকিস্তানি মুসলমান জীবন দেবে, কোনোক্রমেই পাকিস্তানের অখন্ডতা বিনষ্ট হতে দেবে না।

* ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনের ব্যবহার্য বেতার ট্রান্সমিটার অপসারণের নির্দেশ দেয়। ময়মনসিংহের মধুপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সকাল ৯টায় পাকসেনারা বিমান ও কামানের গোলার সমর্থনপুষ্ট হয়ে পাঁচদোনাতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা চালায়। এক ঘন্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা পিছু হটে গোপালদী বাজারে চলে যায়।

* সিলেট বিমানবন্দর ও লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকা ব্যতীত পুরো সিলেট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। পাকবাহিনী অবস্থানরত এ দুটি এলাকা দখলের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি কোম্পানি বিমানবন্দর আক্রমণ করে। পাকবাহিনী নড়াইল মহকুমা শহরে বিমান হামলা চালায় এবং যুগপৎ দাইতলা থেকে অভিযান চালিয়ে পাকসেনারা নড়াইল দখল করে নেয়।

 

* ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ খান মালেকের নেতৃত্বে পাকবাহিনী বদরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর আক্রমণ করে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ব্যাপক আক্রমণের মুখে পিছু হটে খোলাহাটিতে চলে যায়। চট্টগ্রামে মেজর মীর শওকত আলি হাবিলদার তাহেরসহ ১০ জন সৈনিক নিয়ে সকাল ৮টা৩০ মিনিটে কালুরঘাট থেকে এক মাইল উত্তরে পাকবাহিনীর ঘাঁটি কৃষি ভবন আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের তুমুল সংঘর্ষে পাকিস্তানিদের একজন ক্যাপ্টেন ও একজন সুবেদারসহ ২০ জন নিহত হয়। অবশিষ্ট পাকিস্তানিরা কৃষিভবন ছেড়ে শহরে চলে যেতে বাধ্য হয়। পরে পাকসেনারা কালুরঘাট ও মদুনাঘাট দখলের চেষ্টা চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়।[প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৭৮নং সামরিক আদেশ জারি করেন]

 

* সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, পাকিস্তানের বৃহত্তর বন্দর চট্টগ্রাম থেকে সমাজবিরোধীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রদ্রোহীদের নির্মূলে সর্বতোভাবে সহায়তা করেছে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতারা ও পাকিস্তান প্রিয় জনগণ। বেনাপোল সীমান্তে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে সারাদিন ধরে সংঘর্ষ চলে।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৭৮নং সামরিক আদেশ জারি করেন। এই আদেশ বলে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ রোধের অজুহাতে যে কোনো ব্যক্তিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা লাভ করে সামরিক কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ইসলামিক রিপাবলিক পার্টির সভাপতি মাওলানা নুরুজ্জামানও ঢাকার ঘরে ঘরে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য প্রদেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।