৭১ এর এই দিনে | mssangsad.com

৭১ এর এই দিনে

২৯ মার্চ ১৯৭১ এই দিনে

* অতি গোপনে ঢাকা থেকে করাচিতে নেয়া হলো বঙ্গবন্ধুকে। প্রথমে তাঁকে হেলিকপ্টারে করে সেনানিবাস থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দরে আনা হলো। রাতে সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে পাঠানো হলো করাচিতে।


* ফ্রান্সের সুরক্ষিত তুলঁ নৌঘাটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানের সাবমেরিন ম্যানগ্রোর ৮ জন বাঙালি নাবিক বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলেন। তুলঁ থেকে তাঁরা পালিয়ে চলে এলেন জেনেভায়। 


* ঢাকা থেকে মার্কিন কনসাল জেনারেল অরচার ব্লাড এদিনের টেলিগ্রামে লিখলেন- সেনাবাহিনী সাধারণভাবে জনসাধারণকে আতঙ্কগ্রস্ত করতে চাইছে এবং প্রতিরোধ এলেই তারা তা স্তব্ধ করে দিচ্ছে।


* সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত সমাজের সম্ভাবনাময় সবাইকে নিশ্চিহ্ন করা তাদের লক্ষ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। 


* পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ইসলামাবাদ থেকে টেলিগ্রাম পাঠানো হলো ব্রিটেনের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসে। এতে বলা হলো- যদিও ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। পরিস্থিতি একটু শান্ত হবার পর প্রতিরোধ শুরু হবে। 


* ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রামে প্রকাশিত হলো ব্যাংকক থেকে সায়মন ড্রিং-এর পাঠানো প্রতিবেদন ‘ক্যাজুয়ালটিজ লাইকলি টু বি হেভি’। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ঢাকায় পাকবাহিনীর নির্মমতার কথা।

* যুদ্ধের বাকি দিনগুলোর মতো এদিনও পাক বাহিনীর তাণ্ডবলীলা চলছিল। অন্যদিকে বাঙালীরাও তাদের যৎসামান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাক বাহিনীকে প্রতিহত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এদিন সকালে ময়মনসিংহের রাবেয়া মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ে ইপিআর বাহিনী ও হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর বিকেল নাগাদ ময়মনসিংহে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল ব্যাটালিয়নের সমাবেশের কাজ সম্পন্ন হয়। ব্যাটালিয়নের অফিসার এবং সৈনিকদের টাউন হলে একত্রিত করে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মেজর কে এম সফিউল্লাহ।

* একাত্তরের আজকের দিনে পাক বাহিনী চট্টগ্রাম সেনানিবাসের বাইরে এসে মেডিকেল কলেজ ও নিকটবর্তী পাহাড়ের ওপর সমবেত হয়। সন্ধ্যার দিকে তারা প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। তবে মুক্তিবাহিনী এই আক্রমণ ব্যর্থ করে দেয়।

*  রাত ১১টায় জগদীশপুরের মহড়া থেকে প্রথম ইস্টবেঙ্গল ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যশোর ইউনিটে ফিরে আসে এবং গোলাবারুদ অস্ত্রাগারে ফেরত দেয়।

* একাত্তরের আজকের দিনে ক্যাপ্টেন রশীদের সফল অভিযানে ২৫তম পাঞ্জাবের মেজর আসলাম ও ক্যাপ্টেন ইশফাকসহ ৪০ জন পাকিস্তানি সৈন্য পাবনা থেকে গোপালপুরের পথে নিহত হয়। জীবিতদের অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে রাজশাহীর দিকে যাওয়ার পথে প্রাণ হারায়। এদিন রাতে ১০০ জনের মতো বাঙালি ইপিআর সদস্যকে পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে রমনা কালীবাড়ির কাছে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

* এদিন নির্ভীক সৈনিক সিপাহি লুৎফর রহমান লালমনিরহাট শহরের কাছে অবাঙালি ও বাঙালি ইপিআরদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় শহীদ হন। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে ইপিআর সিপাহি আবদুল হালিম পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে শহীদ হন।